রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রমজানে ব্যবসায়ীদের কষ্ট ও কান্না সহ্য করা যায় না। আমরা সাধ্যমতো তাদের সাহায্য ও ক্ষতির মূল্যায়ন করব। বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদ্মা সেতু নির্মাণে নেওয়া ঋণ পরিশোধের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৩১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ চেক হস্তান্তর করেন।
বুধবার এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, এরকম ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সেখানে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় সাহায্য করা বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মালামাল রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু বিএনপি এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এদিকে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবাজারে নতুন করে পাইকারি মার্কেট নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র ফজলে নূর তাপস।
গণভবনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে বলেন, অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের ক্ষতি করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই শনাক্ত করা হবে। যারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার ব্রিগেড সদর দপ্তরে প্রবেশ করে অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের ক্ষতি করেছে, তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিকাণ্ড শুরুর পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও দুপুরে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার ব্রিগেড অফিসে হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাদের অগ্নিনির্বাপক যানবাহন, ফায়ারম্যান বা কোনো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা করতে দেখা যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো হামলা সহ্য করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এই ভালোর সঙ্গে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের একটি দুঃসংবাদও জাতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে (বিপুল সংখ্যায়) দোকান পুড়ে যাওয়া দেখাটা খুবই দুঃখজনক। বঙ্গবাজারে এর আগে ১৯৯৫ ও ২০১৮ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে অগ্নিকাণ্ডের পর তার সরকার পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবাজার নির্মাণের ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, বাজারটি নির্মিত হলে হয়তো এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মানুষের জন্য রাজনীতি করে না : বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মজীবী মানুষের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, তদারকি ও নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো এবং অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক আওয়ামী লীগ সর্বদা তাদের পাশে আছে এবং থাকবে।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব না করে শুধু ঘরে বসে বিবৃতি দেয়। এ রকম ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিয়েও মির্জা ফখরুলের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য তাদের চিরাচরিত অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।
আমরা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসব : বুধবার গোড়ান খেলার মাঠ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসসিসি) মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবাজারে নতুন করে পাইকারি মার্কেট নির্মাণ করা হবে। আমরা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসব। তারা কীভাবে চায়, তা জানব। প্রধানমন্ত্রীকেও আমরা ভবনের নকশাটি দেখাব। এটা পাইকারি বাজার। এটিকে পাইকারি মার্কেট হিসাবেই তৈরি করব। যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, নতুন ভবনে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসন করা হবে।
এই অগ্নিকাণ্ড কোনো ধরনের পরিকল্পিত নাশকতা কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাপস বলেন, এখন পর্যন্ত এটি একটি দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও এটি কোথা থেকে শুরু হয়েছে এবং কীভাবে শুরু হয়েছে, তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।
বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে : এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধের কিস্তির ৩১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চেক হস্তান্তর করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের পাশে থাকলে যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এর সেরা উদাহরণ।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ স্থগিত করে। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি সংস্থা একই কাজ করে। বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।’
অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা নদীর ওপর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম সেতু উদ্বোধন করেন।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারকে সমর্থন দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের পাশে থাকলে যে কোনো বাধা অতিক্রম করে আমরা দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারব। কারণ, আমাদের প্রধান শক্তি জনগণ।’
‘যারা মনে করেন অন্যের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের উন্নতি সম্ভব নয়’ প্রধানমন্ত্রী তাদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছি এবং বৈশ্বিক মর্যাদা এবং সম্মান অর্জন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়, বাঙালি জাতির গর্ব ও সামর্থ্যরে প্রতীক।’
তিনি বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশকে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। সেতু নির্মাণের জন্য যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা আমরা এখন টোল থেকে পরিশোধ করতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রিন্ট