দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ আরও ২১টি মেগা প্রকল্প নিতে চায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ সাতটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
সম্প্রতি সেতু বিভাগের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর ত্রিপক্ষীয় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মিজ ফাতিমা ইয়াসমিন, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন এবং অর্থ বিভাগ, সেতু বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উল্লেখ করা হয়, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের জন্য ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সেতু বিভাগ ১টি ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প ও ৬টি মেগা প্রকল্প, অর্থাৎ ৭টি চলমান অনুমোদিত প্রকল্পসহ মোট ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। যার ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানের ২১টি প্রকল্প প্রক্ষেপণের বিষয়ে সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) রাহিমা আক্তার গতকাল বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যানের একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল; সেখানে সারা দেশে আমাদের সেতু কর্তৃপক্ষের কতগুলো প্রকল্প হতে পারে পরবর্তী ২৫ বছরে এটারই একটা সমীক্ষা চলছে। এটির আইডেন্টিফিকেশন এখনো চলছে। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
তিনি বলেন, ফ্রান্সের একটি কোম্পানি এর সমীক্ষা করছে। সমীক্ষা করলে বোঝা যাবে মূল ব্যয় কত হতে পারে।
২১টি নতুন মেগা প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানে এগুলো আছে। আমাদের প্ল্যানিং এটা দেখে।’ তিনি বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও এর মধ্যে আছে। এটাতে আমাদের সেতুর স্টাডিও করা আছে।’
সভায় প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন ও ২০২৪-২৫ অর্থবছর হতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রক্ষেপণের ওপর অর্থ বিভাগের উপসচিব (বাজেট অধিশাখা-১৬) টি কে এম মোশফেকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২য় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো বিনির্মাণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
সভায় এটিও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাব। সেই আলোকে নিয়মিতভাবে ডিপিপি সংশোধন, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি, প্রকল্প সাহায্য ব্যয়ে ধীরগতি ইত্যাদি বিষয় পরিহার করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ২য় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) সেতু বিভাগের জন্য যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা জোরদারকরণ। প্রকল্প প্রণয়নকালে প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এড়ানো, ক্রয় নীতিমালা উন্নয়ন, প্রকল্প ডিজাইনে অধিকতর মনোযোগ প্রদান, প্রকল্পগুলোর প্রাসঙ্গিকতা, গুণগত মান, অর্থের প্রাপ্যতা ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল হলো সব চলমান প্রকল্পের সময়মতো বাস্তবায়ন। ব্যয় বহুল প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এড়াতে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে টার্নকি মডেল (এ পদ্ধতিতে প্রকল্প প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো দায়িত্ব একক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়) অনুসরণ এবং চুক্তিতে বিশেষ প্রবিধান রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অন্যান্য কৌশলের মধ্যে রয়েছে পিপিপি কার্যক্রমের সক্ষমতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধিকরণ এবং নতুন করে ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করা। গৃহীতব্য প্রকল্পসমূহে যে ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় অর্থায়ন করা হবে বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে নির্মাণ ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা এবং টেকসই ও গুণগত মান বিবেচনায় যোগাযোগ অবকাঠামোর মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা প্রয়োজন।
সভায় উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলনে ২৩ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অপেক্ষা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালন বাজেট প্রাক্কলনে ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেতু বিভাগ কর্তৃক উন্নয়ন বাজেটে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের জন্য জিওবি চাহিদার ১০০% অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ এবং অন্যান্য অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সেতু বিভাগের উন্নয়ন বাজেট মোট ৮ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য সরকারের তহবিল থেকে ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা এবং অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য জিওবি থোক বরাদ্দ ২৮১ কোটি টাকা।