মানুষের সেবাকেই আওয়ামী লীগ সরকার বেশি গুরুত্ব দেয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর তেতুইবাড়িতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এই কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনগণের সেবা করে এবং আমরা আমাদের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ২০০৯ থেকে ২০২৩, অন্তত দাবি করতে পারি যে, বাংলাদেশটাকে আমরা বদলে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে পেরেছি। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়েছি, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ আমরা বিনা পয়সায় মানুষকে দিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা এটাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি কমিউনিটি ক্লিনিকে আমরা যে বিনা পয়সায় ওষুধ দেই সেখানে ইনসুলিনটাও বিনা পয়সায় দিয়ে দেবো। যাতে এই রোগটা থেকে মানুষ মুক্তি পায় সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি।’
কোভিড মহামারীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখনই আমরা ইউক্রেন যুদ্ধের পর সারা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, যার ফলে মানুষের কষ্ট, যে কারণে আমরা অধিক দামে খাদ্য ক্রয় করে অল্প দামে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। যারা একেবারেই কর্মক্ষম তাদের জন্য আমরা বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। প্রায় ১ কোটি বিশেষ পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি, যেখানে মাত্র ৩০ টাকা দামে চাল কিনতে পারবে। সেই সঙ্গে তেল, ডাল বা রোজার সময় প্রয়োজনীয় জিনিস ছোলাসহ অন্যান্য জিনিস আমরা দিচ্ছি।’
‘আমরা ভর্তুকি মূল্যে দিয়ে থাকি আমাদের দেশের মানুষের জন্য। কৃষি কাজে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি আমরা দেই। এমনকি বিদ্যুতের দামেও তাদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। সেভাবে আমরা কিন্তু সেবা করে যাচ্ছি। নিজের দেশে, নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে, নিজের আমিষের ব্যবস্থা করে খাদ্য নিরাপত্তা বা পুষ্টির নিশ্চয়তা—এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি,’ বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৩২টি স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ২২টি আমাদের সরকারের প্রতিষ্ঠা করা। ২০০৯ সালে ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মাত্র দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পেত। গত ১৪ বছরে, অর্থাৎ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর, সেই সুযোগ আমরা বৃদ্ধি করেছি। আমরা ২৩টি নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ফলে বর্তমানে ৪ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারছে।
তাছাড়া, ৪৭টি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। মানসম্পন্ন চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে আমরাই দেশে প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলাম, সেটাকে আরও উন্নত আমরা করে দিচ্ছি। শুধু চিকিৎসা সেবা না, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলছি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেই সঙ্গে সারা বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
স্নাতক ডিগ্রি লাভকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জনগণের সেবায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবেন। আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প উপাধিতে ভূষিত বিশ্বের খ্যাতনামা নার্স ফ্লারেন্স নাইটিঙ্গেল এর কথা। তিনি কিন্তু নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের সেবা করতে। তখনকার দিনে তো অত বিদ্যুৎ ছিল না, একটা ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে যেয়ে রোগীদের সেবা দিতেন। সেটা মনে রাখতে হবে। তবে আজকে আর কুপি বাতি নিয়ে চলতে হবে না বিদ্যুৎ আমরা দিয়ে দিয়েছি সব ঘরে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের আরেকটা পরিকল্পনা আছে, এই হাসপাতালের সঙ্গে যেহেতু নার্সিং কলেজ আগেই করে দিয়েছি, আমরা একটি মেডিকেল কলেজও এখানে স্থাপন করব। জায়গা আমাদের নেওয়া আছে, আর্থিক বিষয়টা; যেহেতু ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা এটা করি। আর্থিক সংগতি এলে আমরা এখানে মেডিকেল কলেজ করে দেবো। এই অঞ্চলের মানুষগুলো যাতে নিয়মিত সেবা পায়।’
প্রিন্ট