নড়াইল সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক দামে সার বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের । আর এই সারের কৃত্রিম সংকটের নেপথ্যে রয়েছে অলোক কুন্ডু।
যিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসাধু কতিপয় ২ রাজনৈতিক নেতাকে ম্যানেজ করে বীরদর্পে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে জেলায় নাম মাত্র ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্সকৃত ডিলার রয়েছে । যার অধিকাংশ তিনি একাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আর তার এই নিয়ন্ত্রিত ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে করে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার অনেক বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যদিও কৃষি অধিদপ্তর সারের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলাররা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। কেউ কেউ রসিদ দিলেও তাতে সরকার নির্ধারিত দাম দেখাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে সার বিক্রি করবেন না জানিয়ে দিচ্ছেন বা ক্রেতার কাছে বিক্রি করা সার কেড়ে নিয়ে রেখে দিচ্ছেন। ডিলারদের কাছে এভাবে জিম্মি হয়ে তাঁরা অসহায় বোধ করছেন। তবে এ বিষয়ে ডিলারদের দাবি, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে বাজারে সারের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সরকার
নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করছেন তাঁরা।
কৃষকেরা বলছেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার বের করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া কিছু কিছু ডিলার দোকানে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না। এমনকি সরকারি দরের রসিদ দিলেও বাড়তি দরের রসিদ দিচ্ছেন না। অন্য দিকে ডিলার সাব ডিলার ছাড়া ও অনুমতি বিহীন লোকাল দোকানদারকে এ সার বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এসব দোকাদার অধিক দামে সার বিক্রি করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইল জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা (২২ টাকা প্রতি কেজি), এমওপি প্রতি বস্তা ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা (১৬ টাকা কেজি) নির্ধারণ করে দিয়েছে।
সারের কৃত্রিম সংকটের কারন অনুসন্ধানে দীর্ঘ দিন চেষ্টা করছে নড়াইলের সচেতন মহল। তারই ধারাবাহিকতায় গত (২৭ ফ্রেব্রুয়ারী) সোমবার সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ এলাকায় সার বোঝায় একটি ট্রাক জব্দ করেন স্থানীয়রা। ট্রাক মালিকে ট্রাকের সার সম্পর্কে জানতে চাইলে এলোপাতাড়ি বলতে থাকেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে পুলিশকে জানলে ঘটনাস্থলে আসেন সদর থানার ওসি মাহামুদুর রহমান। ওসি ট্রাক ড্রাইভার মিজানকে জিজ্ঞেসাবাদের পর অলোক কুন্ডুকে ডেকে আনেন।
এরই মধ্যে ঘটনা স্থলে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসার রোকনুজ্জামান। বিষয়টি বড় আকার ধারন করলে সেখানে উপস্থিত হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকলে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক নির্বাহী মেজিস্ট্রেটকে ঘটনা স্থালে পাঠালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ট্রাকটি জব্দ করে পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে দেন।
সার ব্যাবসায়ী অলোল কুন্ডু সারের বৈধতা আছে দাবি করে কাগজ পত্র প্রদর্শন করেন। কাগজপত্র সঠিক ভাবে চাচাইয়েট জন্য জেলা প্রশাসক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
এ বিষয়ে নড়াইল সদর উপজেলার কৃষি অফিসার রোকনুজ্জামান জানান, ট্রাকটি জব্দ হলে আমি এখানে এসেছি। এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।এ বিষয়ে সার ব্যাবসায়ী অলোক কুন্ডু বলেন, অহেতুক আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।আমি ট্রাকের মালিক মাত্র। ডিলারদের সার তাদের গন্তব্যে পৌছে দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে। সার কালো বাজারির কোন সুযোগ নেই।
এহেন ঘটনায় জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল তার ডিলারসিপ বাতিল করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
প্রিন্ট