ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নগরকান্দায় শিশুর জন্ম হলেই উপহার ও মিষ্টি নিয়ে হাজির ইউএনও

ফরিদপুরের নগরকান্দায় কোনো দম্পতির পরিবারে নবজাতকের জন্মের খবর পেলেই ঐ বাড়ীতে উপহার ও মিষ্টি নিয়ে হাজির হন তিনি। নবজাতককে কোলে নিয়ে উপজেলার নাগরিক (সিটিজেন) হিসেবে বরণ করে নেন। আর নবজাতকের মা-বাবাকে মিষ্টি খাইয়ে উপহারের প্যাকেট হাতে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে পৌঁছে দেন নবজাতকের জন্মসনদ। তিনি হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক।

এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুরু করেছেন ইউএনও মঈনুল হক। ৬ ফেব্রæয়ারি সোমবার উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ১ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নেওয়া ২০ জন নবজাতকের বাড়ীতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি ঐ বাড়ীতে বসেই অনলাইনে শিশুর জন্মসনদ তৈরী করে দম্পতির হাতে তুলে দেন। সাথে মিস্টির প্যাকেট, শিশুর শীতের কাপড় ও খেলনা উপহার দেন। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল কবির ও কাইচাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার সকালে কাইচাইল ইউনিয়নের কফাই বালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদ মিয়া ও সাথী আক্তার দম্পতির কোলে তিনদিন পূর্বে জন্ম হয় কন্যা সন্তান। নাম রেখেছেন মুসলিমা ইসলাম। নবজাতকের জন্য উপহার সামগ্রী, খেলনা, মিষ্টি নিয়ে টিমসহ উপস্থিত ইউএনও। এ সময় শিশুর মা সাথী আক্তার বলেন, স্যার আমার বাড়ীতে উপস্থিত হয়েছেন। বাড়ীতে বসে আমার মেয়ের জন্ম সনদ করে দিলেন, এতে আমার একটি টাকা লাগলো না। এতে আমি খুব খুশি।

সুতারকান্দা গ্রামের মামুন মিয়া ও মুক্তা বেগম দম্পতির কোলে একসঙ্গে জন্ম নিয়েছেন দুটি পুত্র সন্তান। দুই জনের নাম রেখেছেন হাসান ও হোসেন। ঐ দম্পতি বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের বাড়ীতে এসেছেন। আমাদের ছেলেদের সঠিক জন্ম সনদ দিয়ে গেলেন আমরা অনেক খুশি। জীবনে এই প্রথম দেখলাম বাড়ীতে বসে হয়রানি না হয়ে বিনা খরচে জন্ম সনদ পেলাম। স্যারকে আমরা অনেক ধন্যবাদ জানাই।

কাইচাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা হোসেন খান বলেন, কোনো শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে বিনা ফিতে স্থানীয় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনে সরকারি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এ উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধনে আগ্রহ তুলনামূলক কম। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রয়োজনে মা-বাবারা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করিয়ে সনদ নেওয়ার জন্য ছুটাছুটি করেন ইউপি কার্যালয়ে। ততদিনে শিশুর বয়স পাঁচ-ছয় বছর হয়ে যায়। তখন নানা কারণে উক্ত এলাকার চেয়ারম্যানদের অনুমান নির্ভর তারিখে হলেও নিবন্ধন করে সনদ দিতে হয়। আর যেসব শিশুরা স্কুল-মাদ্রাসায় ভর্তি হতো না, তারা থেকে যেত জন্ম নিবন্ধনের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে ইউএনও মোঃ মঈনুল হক উপজেলা ব্যাপী এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুরু করেন। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

ইউএনওর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করে বড়নাউডুবি গ্রামের বাসিন্দা শাহালম মিয়া ও মনিকা আক্তার দম্পতি বলেন, “আমার প্রথম কন্যা সন্তানের আগমনের খবর পেয়ে ইউএনও স্যার উপহার ও মিষ্টি হাতে আমার বাড়িতে হাজির হন। সাথে সাথে আমার সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের সনদ ও করে দিয়ে গেছেন। আমরা ইউএনও স্যারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক বলেন, কোনো শিশু যাতে ভুল জন্ম তারিখ নিয়ে বেড়ে না ওঠে, নিবন্ধনের বাইরে না থাকে এবং একই ব্যক্তির একাধিক সনদ রোধে আমাদের এ কর্মসূচি। এ ছাড়া এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক বয়সে সব নবজাতকের জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ

error: Content is protected !!

নগরকান্দায় শিশুর জন্ম হলেই উপহার ও মিষ্টি নিয়ে হাজির ইউএনও

আপডেট টাইম : ০৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ফরিদপুরের নগরকান্দায় কোনো দম্পতির পরিবারে নবজাতকের জন্মের খবর পেলেই ঐ বাড়ীতে উপহার ও মিষ্টি নিয়ে হাজির হন তিনি। নবজাতককে কোলে নিয়ে উপজেলার নাগরিক (সিটিজেন) হিসেবে বরণ করে নেন। আর নবজাতকের মা-বাবাকে মিষ্টি খাইয়ে উপহারের প্যাকেট হাতে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে পৌঁছে দেন নবজাতকের জন্মসনদ। তিনি হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক।

এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুরু করেছেন ইউএনও মঈনুল হক। ৬ ফেব্রæয়ারি সোমবার উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ১ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নেওয়া ২০ জন নবজাতকের বাড়ীতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি ঐ বাড়ীতে বসেই অনলাইনে শিশুর জন্মসনদ তৈরী করে দম্পতির হাতে তুলে দেন। সাথে মিস্টির প্যাকেট, শিশুর শীতের কাপড় ও খেলনা উপহার দেন। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল কবির ও কাইচাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার সকালে কাইচাইল ইউনিয়নের কফাই বালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদ মিয়া ও সাথী আক্তার দম্পতির কোলে তিনদিন পূর্বে জন্ম হয় কন্যা সন্তান। নাম রেখেছেন মুসলিমা ইসলাম। নবজাতকের জন্য উপহার সামগ্রী, খেলনা, মিষ্টি নিয়ে টিমসহ উপস্থিত ইউএনও। এ সময় শিশুর মা সাথী আক্তার বলেন, স্যার আমার বাড়ীতে উপস্থিত হয়েছেন। বাড়ীতে বসে আমার মেয়ের জন্ম সনদ করে দিলেন, এতে আমার একটি টাকা লাগলো না। এতে আমি খুব খুশি।

সুতারকান্দা গ্রামের মামুন মিয়া ও মুক্তা বেগম দম্পতির কোলে একসঙ্গে জন্ম নিয়েছেন দুটি পুত্র সন্তান। দুই জনের নাম রেখেছেন হাসান ও হোসেন। ঐ দম্পতি বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের বাড়ীতে এসেছেন। আমাদের ছেলেদের সঠিক জন্ম সনদ দিয়ে গেলেন আমরা অনেক খুশি। জীবনে এই প্রথম দেখলাম বাড়ীতে বসে হয়রানি না হয়ে বিনা খরচে জন্ম সনদ পেলাম। স্যারকে আমরা অনেক ধন্যবাদ জানাই।

কাইচাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা হোসেন খান বলেন, কোনো শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে বিনা ফিতে স্থানীয় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনে সরকারি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এ উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধনে আগ্রহ তুলনামূলক কম। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রয়োজনে মা-বাবারা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করিয়ে সনদ নেওয়ার জন্য ছুটাছুটি করেন ইউপি কার্যালয়ে। ততদিনে শিশুর বয়স পাঁচ-ছয় বছর হয়ে যায়। তখন নানা কারণে উক্ত এলাকার চেয়ারম্যানদের অনুমান নির্ভর তারিখে হলেও নিবন্ধন করে সনদ দিতে হয়। আর যেসব শিশুরা স্কুল-মাদ্রাসায় ভর্তি হতো না, তারা থেকে যেত জন্ম নিবন্ধনের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে ইউএনও মোঃ মঈনুল হক উপজেলা ব্যাপী এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুরু করেন। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

ইউএনওর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করে বড়নাউডুবি গ্রামের বাসিন্দা শাহালম মিয়া ও মনিকা আক্তার দম্পতি বলেন, “আমার প্রথম কন্যা সন্তানের আগমনের খবর পেয়ে ইউএনও স্যার উপহার ও মিষ্টি হাতে আমার বাড়িতে হাজির হন। সাথে সাথে আমার সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের সনদ ও করে দিয়ে গেছেন। আমরা ইউএনও স্যারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক বলেন, কোনো শিশু যাতে ভুল জন্ম তারিখ নিয়ে বেড়ে না ওঠে, নিবন্ধনের বাইরে না থাকে এবং একই ব্যক্তির একাধিক সনদ রোধে আমাদের এ কর্মসূচি। এ ছাড়া এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক বয়সে সব নবজাতকের জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা।