ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সিলগালা চরভদ্রাসন খাদ্যগুদাম,পালিয়েছেন কর্মকর্তা

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার খাদ্য গুদাম হতে চাল আত্ম্যসাতের অভিযোগে গুদামটি সিলগালা করেছেন জেলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি। গত ২৩ নভেম্বর বুধবার সন্ধায় ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারিকুজ্জামান, তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ইসমাইল হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত সহকারি এক রসায়নবিদ ও চরভদ্রাসন খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃরেজাউল করিম গুদামটি সিলগালা করেন।

অভিযোগ রয়েছে নানা তাল বাহানা করে প্রায় তিন মাস চরভদ্রাসন ইউপি চেয়ারম্যানদের ভি ডব্লিউ বি (পূর্বের ভিজিডি কর্মসূচি) এর চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেন খাদ্য গুদাম দায়ীত্বে থাকা (ভারপ্রাপ্ত)কর্মকর্তা ওসিএলএসডি ছানোয়ার হোসেন। এতে খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয় উপজেলার দুস্থ ও হতদরিদ্র পরিবার।

এ বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা জানান‘ ইউপি চেয়ারম্যানগন গত দুইমাস ভিজিডির চাল না পাওয়ার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেনি। চরভদ্রাসন খাদ্য গুদাম হতে প্রায় তিনমাস ভিজিডির চাল সরবরাহ করা হচ্ছেনা  মর্মে গত সপ্তাহে ইউপি চেয়ারম্যানগন আমার নিকট লিখিত আবেদন করেন।

আমি সরজমিনে গুদাম পরিদর্শন করে ডিসি অফিসে রিপোর্ট প্রেরন ও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। চরভদ্রাসন উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ঠিকমতন অফিস করলে তার অধিনস্থ খাদ্যগুদামের দায়ীত্বে থাকা ওসিএলএসডি গরিবের চাল নিয়ে এমন করসাজি করতে পারতোনা। চেয়ারম্যানদের উচিত ছিল আরো আগে লিখিত অভিযোগ করা। খাদ্যগুদামের তদন্ত ও সিলগালা করার বিষয়টি সম্পূর্ন ঐ দপ্তরের বলেও জানান ইউএনও তানজিলা কবির ত্রপা।

ভিজিডির চাল না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন ‘ইউপি চেয়ারম্যানরা তার নিকট ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ভিডব্লিউবি (পূর্বের ভিজিডি কর্মসূচি) এর চাল না পাওয়ার মৌখিক অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানিয়েছেন। এবং বেশ কয়েকবার চরভদ্রাসন খাদ্য গুদামের দায়িত্বে থাকা ওসিএলএসডিকে চেয়ারম্যানদের পাওনা হতদরিদ্রদের ভিজিডির চাল দিয়ে দিতে বলেন। চাল নিন্মমানের, বস্তা সংকট, লেবার নাই, এমন নানা অজুহাত দেখিয়ে চেয়ারম্যানদের চাল না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে খাদ্য গুদামের দায়ীত্বে থাকা ছানোয়ার হোসেনকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়।

ভিজিডির চাল না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলার গাজিরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলি বলেন আমার ইউনিয়নে সেপ্টেম্বর ২০২২ হতে নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৬৫৭ জন অতিশয় দরিদ্র সুবিধাভোগী চাল না পেয়ে ফেরৎ গেছে। বিষটি আমি গত ১৫/১১/২০২২ ইং লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। এছাড়া দায়িত্বে থাকা ওসিএলএসডির বিরুদ্ধে চরভদ্রাসন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছ হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি উপকারভোগী ৬ শত ৭০ জনের চলমান নভেম্বর সহ চার মাসে ৮০ মে.টন, হরিরামপুর ইউনিয়নের ৫ শত ৭৯ জনের তিন মাসে ৫২ মে.টন, গাজীরটেক ইউনিয়নের ৬ শত ৫৭ জনের ৬০ মে.টন এবং চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের ২ শত ৫৩ জনের ২২ মে. টন মোট ২১৪ মে.টন চাল বিতরন করা হয়নি। উপরোক্ত চাউল ছাড়াও গুদামের ৭০ মে. টন চাউল ও ১২০ মে.টন ধান ঘাটতি রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) তারিকুজ্জামান বলেন খাদ্যগুদামে চাল ঘাটতির সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন শেষে কতটন চাল ঘাটতি রয়েছে তা জানানো হবে। ওসিএলএসডি ছানোয়ারের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চরভদ্রাসন এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

খাদ্য গুদাম সিলগালা করার বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ইসমাইল হোসেন মুঠোফোনে বলেন চেয়ারম্যানদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বুধবার (২৩ নভেম্বর ২০২২) চরভদ্রাসন উপজেলায় কর্মরত ওসিএলএসডি মোঃ ছানোয়ার হোসেন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তদের নিয়ে খাদ্য গুদামে যান। সেখানে নথিপত্র যাচাই করে অভিযোগের সত্যত্যা পান তিনি।

প্রাথমিক তদন্তে গুদামে চাল ঘাটতির প্রমান পেয়েছেন। তিনি বলেন তদন্তকালে ওসিএলএসডি ছানোয়ার সারাদিন তাদের সাথে ছিল। বিকেলে এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্য়ালয়ে বসার কথা ছিল। কিছু সময় পরে ওসিএলএসডি ছানোয়ারকে আর খুজে পাওয়া যায়নি এবং তার ফোনটি বন্ধ রয়েছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে কত মে:টন চাল খাদ্য গুদামে ঘাটতি রয়েছে।খাদ্যগুদামের নিরাপত্তার স্বার্থে গুদামটি সিলগালা করা হয়েছে বলে জানান তিনি’।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তীব্র তাপদাহে গোপালগঞ্জ পুলিশের মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন

error: Content is protected !!

সিলগালা চরভদ্রাসন খাদ্যগুদাম,পালিয়েছেন কর্মকর্তা

আপডেট টাইম : ০৭:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার খাদ্য গুদাম হতে চাল আত্ম্যসাতের অভিযোগে গুদামটি সিলগালা করেছেন জেলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি। গত ২৩ নভেম্বর বুধবার সন্ধায় ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারিকুজ্জামান, তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ইসমাইল হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত সহকারি এক রসায়নবিদ ও চরভদ্রাসন খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃরেজাউল করিম গুদামটি সিলগালা করেন।

অভিযোগ রয়েছে নানা তাল বাহানা করে প্রায় তিন মাস চরভদ্রাসন ইউপি চেয়ারম্যানদের ভি ডব্লিউ বি (পূর্বের ভিজিডি কর্মসূচি) এর চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেন খাদ্য গুদাম দায়ীত্বে থাকা (ভারপ্রাপ্ত)কর্মকর্তা ওসিএলএসডি ছানোয়ার হোসেন। এতে খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয় উপজেলার দুস্থ ও হতদরিদ্র পরিবার।

এ বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা জানান‘ ইউপি চেয়ারম্যানগন গত দুইমাস ভিজিডির চাল না পাওয়ার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেনি। চরভদ্রাসন খাদ্য গুদাম হতে প্রায় তিনমাস ভিজিডির চাল সরবরাহ করা হচ্ছেনা  মর্মে গত সপ্তাহে ইউপি চেয়ারম্যানগন আমার নিকট লিখিত আবেদন করেন।

আমি সরজমিনে গুদাম পরিদর্শন করে ডিসি অফিসে রিপোর্ট প্রেরন ও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। চরভদ্রাসন উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ঠিকমতন অফিস করলে তার অধিনস্থ খাদ্যগুদামের দায়ীত্বে থাকা ওসিএলএসডি গরিবের চাল নিয়ে এমন করসাজি করতে পারতোনা। চেয়ারম্যানদের উচিত ছিল আরো আগে লিখিত অভিযোগ করা। খাদ্যগুদামের তদন্ত ও সিলগালা করার বিষয়টি সম্পূর্ন ঐ দপ্তরের বলেও জানান ইউএনও তানজিলা কবির ত্রপা।

ভিজিডির চাল না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন ‘ইউপি চেয়ারম্যানরা তার নিকট ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ভিডব্লিউবি (পূর্বের ভিজিডি কর্মসূচি) এর চাল না পাওয়ার মৌখিক অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানিয়েছেন। এবং বেশ কয়েকবার চরভদ্রাসন খাদ্য গুদামের দায়িত্বে থাকা ওসিএলএসডিকে চেয়ারম্যানদের পাওনা হতদরিদ্রদের ভিজিডির চাল দিয়ে দিতে বলেন। চাল নিন্মমানের, বস্তা সংকট, লেবার নাই, এমন নানা অজুহাত দেখিয়ে চেয়ারম্যানদের চাল না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে খাদ্য গুদামের দায়ীত্বে থাকা ছানোয়ার হোসেনকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়।

ভিজিডির চাল না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলার গাজিরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলি বলেন আমার ইউনিয়নে সেপ্টেম্বর ২০২২ হতে নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৬৫৭ জন অতিশয় দরিদ্র সুবিধাভোগী চাল না পেয়ে ফেরৎ গেছে। বিষটি আমি গত ১৫/১১/২০২২ ইং লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। এছাড়া দায়িত্বে থাকা ওসিএলএসডির বিরুদ্ধে চরভদ্রাসন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছ হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি উপকারভোগী ৬ শত ৭০ জনের চলমান নভেম্বর সহ চার মাসে ৮০ মে.টন, হরিরামপুর ইউনিয়নের ৫ শত ৭৯ জনের তিন মাসে ৫২ মে.টন, গাজীরটেক ইউনিয়নের ৬ শত ৫৭ জনের ৬০ মে.টন এবং চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের ২ শত ৫৩ জনের ২২ মে. টন মোট ২১৪ মে.টন চাল বিতরন করা হয়নি। উপরোক্ত চাউল ছাড়াও গুদামের ৭০ মে. টন চাউল ও ১২০ মে.টন ধান ঘাটতি রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) তারিকুজ্জামান বলেন খাদ্যগুদামে চাল ঘাটতির সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন শেষে কতটন চাল ঘাটতি রয়েছে তা জানানো হবে। ওসিএলএসডি ছানোয়ারের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চরভদ্রাসন এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

খাদ্য গুদাম সিলগালা করার বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ইসমাইল হোসেন মুঠোফোনে বলেন চেয়ারম্যানদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বুধবার (২৩ নভেম্বর ২০২২) চরভদ্রাসন উপজেলায় কর্মরত ওসিএলএসডি মোঃ ছানোয়ার হোসেন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তদের নিয়ে খাদ্য গুদামে যান। সেখানে নথিপত্র যাচাই করে অভিযোগের সত্যত্যা পান তিনি।

প্রাথমিক তদন্তে গুদামে চাল ঘাটতির প্রমান পেয়েছেন। তিনি বলেন তদন্তকালে ওসিএলএসডি ছানোয়ার সারাদিন তাদের সাথে ছিল। বিকেলে এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্য়ালয়ে বসার কথা ছিল। কিছু সময় পরে ওসিএলএসডি ছানোয়ারকে আর খুজে পাওয়া যায়নি এবং তার ফোনটি বন্ধ রয়েছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে কত মে:টন চাল খাদ্য গুদামে ঘাটতি রয়েছে।খাদ্যগুদামের নিরাপত্তার স্বার্থে গুদামটি সিলগালা করা হয়েছে বলে জানান তিনি’।