মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬ নং কাদিরপাড়া ইউনিয়নের রাধানগর বাজারের গোশত পট্টির পাশে হানু নদীর তীরবর্তী স্থানে অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি দখল করে টিনের দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। রাধানগর বাজার শ্রীপুর উপজেলার একটি অন্যতম প্রধান বাজার।
বাজারে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, মক্তব, এনজিও, বিভিন্ন হাট ও কয়েক শত দোকান রয়েছে। বাজারের পাশে রয়েছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস। গত রবিবার (৬-নভেম্বর) দুপুরে বাজার পরিদর্শনের পর কাদিরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খান আজমারুল হককে ঘর নির্মাণ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, গত ২৫/১০/২২ তারিখে সরকারি খাস জায়গায় নির্মিত টিনের ঘর ভাঙ্গার জন্য সরকারি নোটিশ দেওয়া হয়।
তিনি নোটিশ পড়ে বলেন, মোঃ ইজারুল মোল্যা, পিং- মৃত একেব্বর মোল্যা, সাং- সব্দালপুর, থানা- শ্রীপুর, জেলা- মাগুরা, রাধানগর বাজারের নদী সংলগ্ন জায়গায় (হানু নদী) সীত্রাং ঘূর্ণিঝড়ের রাত্রে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে রাতের আধারে একখানা টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। যাহা সম্পূর্ণ বেআইনি কর্মকান্ড। ঘর নির্মাণের এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সরেজমিনে জানা যায় এই স্থানে কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শাহিদুল দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ হানু নদীর পরিতাক্ত্য জায়গায় মাটি ভরাট করে তার রাজমিস্ত্রীর কাজে সেন্টারিং এর বাঁশ, কাঠ রাখতেন।
এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার সদস্য শাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি বাড়িতে ১ শতক জায়গায় বসবাস করি, আমার বাড়িতে জায়গা না থাকায় রাধানগর বাজারে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় নদীর পাশে দীর্ঘ দিন ধরে বাঁশ ও কাঠের তক্তা রাখতাম। এই নিয়ে অনুমান বছর দুয়েক পূর্বে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াছিন কবীর ও সহকারী ভূমি কমিশনার হাসিনা মমতাজ রাধানগর বাজারে এসে বাজার কমিটির সম্বন্বয়ের সাথে মৌখিক ভাবে আলোচনা করে সাবেক মেম্বার ও রাজমিস্ত্রী শাহিদুল কে বাঁশ ও কাঠের সেন্টারিং তক্তা রাখার অনুমতি দেন। রাজমিস্ত্রী শাহিদুল কান্না জড়িত হৃদয় ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, এক বছর পূর্বে আমার একমাত্র ছেলেটা ট্রেন দূর্ঘটনায় মারা যায়, আমি খুবই গরীব মানুষ।
সারাজীবন সৎ জীবন যাপন করে মেম্বার হয়েও ১ শতক জায়গায় বসবাস করি এবং সেই সাথে কোন রকম রাজমিস্ত্রীর সেন্টারিং কাজের বাঁশ ও তক্তা ভাড়া দিয়ে থাকি এবং নিজেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। হঠাৎ করে আলম মোল্লার নেতৃত্বে নায়েব ও ইজারুল মোল্যা রাতের আধারে দূর্যোগপূর্ণ নিশী রাতে আমার (কাঠ ও বাঁশ) মালামাল উধাও করে দিয়ে টিনের ঘর তোলে। যাহার মালামালের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় অনুমান ২ লাখ টাকা। এ বিষয়ে নায়েব কাদিরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করি। গত রবিবার (০৬-নভেম্বর) সন্ধ্যার পর শ্রীপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামানন্দ কুন্ডু সঙ্গীয় নিরাপত্তা ফোর্স বাহিনী ও সাথে কাদিরপাড়া ইউনিয়নের নায়েব কে সাথে নিয়ে ঐ অবৈধ ঘরটি স্থানীয় আলম মোল্লার বেকারীর কর্মচারীদের সহায়তায় টিনের বৈদ্যুতিক তার সরিয়ে দরজা ও পূর্ব টিনের বেড়ার অংশ ভেঙ্গে মাটিতে (ভূমি) তে ফেলে দেয়।
এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার বলেন, আগামীকাল সোমবার অবৈধ টিনের ঘর না সরালে এটা সরকারি নিয়মে নিলামে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হবে। এ সময়ে বেকারির মালিক আলম মোল্লা ও টিনের ঘরের মালিক ইজারুলের বিষয়ে প্রশাসন খোঁজ খবরের চেষ্টা করলে তাদের তথ্য বাজারের কেউ বলতে পারে নাই। কিন্তু ইউএনওর কথা অমান্য করে তারা ৭ নভেম্বর ভোর সকালে বেআইনিভাবে আলম মোল্লা এবং ইজারুল তার দলবল নিয়ে ঘরটি আবার ফের নির্মাণ করে। পরে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাতে টিনের ঘরটির পূর্ব ও উত্তর পাশের টিনের বেড়া ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায় এবং ঘরটি যদি অপসারণ না করে সে অবৈধ টিনের ঘরটির নিলাম করা হবে বলে জানান।
এ বিষয়ে বাজার কমিটির লোকেরা বলতে থাকে আলাম মোল্লা ও ইজারুলের এত শক্তি পাই কোথা থেকে যে অবৈধ টিনের ঘরটি পুনরায় নির্মাণ করে। মঙ্গলবার (০৮-নভেম্বর) বিকেলে কাদিরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে বেকারির মালিক আলম মোল্লা ও টিনের ঘরের মালিক ইজারুলের উদ্দেশ্য করে বাজার কমিটির সদস্যদের জানান, ভেঙ্গে ফেলা টিনের ঘর সরানো না হলে ঘরটি সরকারি আইনানুযায়ী নিলামে বিক্রি করা হবে এবং প্রয়োজনে আলম মোল্যা ও ইজারুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট