ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ভেড়ামারার ইতিহাস ঐতিহ্য

ভেড়ামারার ইতিহাসঃ কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলার মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলা অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ বহন করে। উপজেলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি ও খ্যাতি সম্পন্ন এই উপজেলা। কুষ্টিয়া জেলা সদর হতে ২৩ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ভেড়ামারা। ১৫৩.৭২ বর্গকিলোমিটার ভূখন্ডের ভেড়ামারা উপজেলায় বসবাস করে ১লক্ষ ৭৫ হাজার ৪৮০ জন মানুষ। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৯০ হাজার ৭শ’ এবং মহিলা রয়েছে ৮৪ হাজার ৭শ’৮০ জন। ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ। এখানে রয়েছে ৫৯টি মৌজা। ৯৮টি গ্রাম। ভেড়ামারা-মিরপুর নিয়ে সংসদীয় এলাকা কুষ্টিয়া-২। এ উপজেলার উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ও শহরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী হিসনা। ভেড়ামারা অবিভক্ত বাংলার মধ্যবর্তী স্থনে অবস্থিত ছিলো। স্বাধীন বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণেবঙ্গেও মধ্যস্থানে ভেড়ামারা উপজেলা।

ভেড়ামারার নাম করণঃ
অনেক খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে ট্রেন চলাকালীন অবস্থায় ভেড়ামারা ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একযোগে শতাধিক ভেড়া ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে মারা যায়। সেই সময় ‘ভেড়া’ হতেই ভেড়ামারার নামকরণ করা হয়েছিল।অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এ,এইচ,এম নূরুদ্দীনসহ অনেকেই জানান,দুইভাইরা ভাই মারা মারিতে একজন মারা যান। ভাইরামারা থেকে ভেড়ামারা নাম প্রচলন। প্রমান হিসেবে তারা ব্রিটিশ আমলে ভেড়ামারা রেলষ্টেশনের নাম ছিলো বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে ভাইরামারা থেকে ভেড়ামারা নাম।প্রবীণ প্রধান শিক্ষক রুহুল ইসলাম,কামাল হাজী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীন বিজ্ঞ ও জ্ঞনী ব্যক্তির কথা মতে ভেড়ামারা নামকরণের মুল তথ্য হচ্ছে ভাইরামারা থেকে ভেড়ামারা। বয়রামারা থেকে ভেড়ামারা।ভাইরাম থেকে ভেড়ামারা। অথবা ভেড়া মারা যাওয়া থেকে ভেড়ামারা নামের উৎপত্তি হয়েছে।এমন কথা ভেড়ামারা কবি সাহিত্যিক হাসানুজ্জামান খসরু তিনি ভেড়ামারা উপজেলার ইতিহাস বইতে ও এমন করেই উল্লেখ করেছেন।

দর্শনীয় স্থানঃ
ভেড়ামারার দর্শনীয় এবং মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে। পদ্মা নদীর উপর যুগল সৌন্দর্যের ‘হার্ডিঞ্জ ব্রীজ’ এবং ‘লালনশাহ সেতু’ নির্মিত। দুই সেতুর মাঝখানের পশ্চিম পাড় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকা।এছাড়াও রয়েছে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। ভেড়ামারায় ৬০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র,পরে নির্মান হয়েছে ৪১০ মে,ও,কম্বাইন্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৫০০ মে,ও ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চলন কেন্দ্র ইত্যাদি। ভেড়ামারা উপজেলার ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ৩টি মাজার এবং গায়েবী মসজিদ খ্যাত তিন গম্বুজ মসজিদ রয়েছে। এখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত নানা দেশের বিভিন্ন আশেকানদের আগমন ঘটে।

ভেড়ামারায় প্রথম শহিদ মিনার নির্মানঃ
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ভেড়ামারা থানায় প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয় ১৯৫৬ সালে। তা স্থাপন করা হয় ভেড়ামারা সরকারী পাইলট উচ্চ মডেল বিদ্যালয়ের প্রধান গেটে প্রবেশ করে ডানপাশে। অত্র বিদ্যালয়ের তৎকারীন শিক্ষার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম দুদু ও মোঃ আমিরুল ইসলাম।

প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারীঃ
২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ভেড়ামারা হাই স্কুলের তৎকালীন তরুণ, সাহসী ও দুরদর্শী সম্পন্ন প্রধান শিক্ষক মোঃ রুহুল ইসলাম প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারী হিসেবে ইতিহাসে তার নাম লিপিবদ্ধ আছে।

বধ্যভূমিঃ
উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর ২টি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে।

নীলকুঠিঃ
বৃহত্তর কুষ্টিয়া সদর, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় এখন ও শতাধীক নীলকুঠীর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। নীল চাষ তদারকির জন্য ভেড়ামারা বাজারে বিদেশী নীলকরদেও বাসোপযোগী ভবন নির্মান করা হয়। তখন থেকেই ভেড়ামারা কুঠিবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভেড়ামারা শহরের কুঠিবাজাওে নীলকর সাহেবদেও থাকারবাস ভবন আজো অক্ষত রয়েছে।

ঘোড়েশাহ্ মাজারঃ
মাজারটি উপজেলা সদর হতে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে ধরমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রতিবছর ওয়াজ মাহাফিলে প্রচুর ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগম ঘটে থাকে এখানে।

সোলেমান শাহ মাজারঃ
পদ্মা নদীর তীরে উপজেলা সদর হতে ৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে মোকারিমপুর ইউনিয়নে গোলাম নগর সোলেমান শাহ্ মাজার অবস্থিত। প্রতিবছর ওয়াজ মাহাফিলে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান হতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আশেকান হাজির হয়।

ধরমপুর মাজারঃ
ছোট ছোট ইটদিয়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরী ধরমপুর মাজার। মাজারে কিছু কিছু প্রাচীন নিদর্শনও পাওয়া যায়।

তিন গম্বুজ মসজিদঃ
এটা অবস্থিত ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া নামক স্থানে। শোনা যায়, কোন এক সময় একই রাতে পৃথিবীতে সাতটি গায়েবী মসজিদ তৈরী হয়, যা ফেরেস্তারা তৈরী করে বলে কথিত আছে। সে সময় তিন গম্বুজওয়ালা ঐ মসজিদটি সাতবাড়িয়া এলাকায় অসমাপ্তভাবে শেষ হয়। এটা অনেকের কাছে গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত।

হার্ডিঞ্জ ব্রীজঃ
১৯১২ সালে নির্মতি হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ৫হাজার ৮৯৪ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ব্রীজটি ১৫টি স্প্যানে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ এবং দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু। দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান- পরিশ্রমের পর ‘হার্ডিঞ্জ ব্রীজ’র নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯১৫ সালে। ১৯১৫ সালের ৪ই মার্চ তারিখে শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। তারই নামানুসারে নামকরণ হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ।

লালন শাহ সেতুঃ
১৯৯৪ সালে নির্মিত লালন শাহ সেতু । যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু। প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর ১৭৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৭.৫ মিটার দুই লেন বিশিষ্ট সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পঃ
দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পটি ভেড়ামারায় অবস্থিত। ১৯৫৪ সালে এই প্রকল্পটি নির্মিত হয়।এ প্রকল্পের আওতাধীন দক্ষিণাঞ্চলের চারটি জেলার ১লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পায়।

৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
ভেড়ামারায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ৩টি ইউনিটে জাতীয় পর্যায়ের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে থাকে। গ্যাস টারবাইন এ ৩টি ইউনিট থেকে ৫৫ থেকে ৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রতিদিন। যা বিদ্যুতের বর্তমান সংকটময় পরিসি’তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহণ করে থাকে।

ঐতিহ্যবাহী পানঃ
অতি প্রাচীনকালে থেকেই ভেড়ামারায় পানের চাষ হয়। দিন যত গড়িয়েছে পানের চাষ ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ভেড়ামারায় পান দক্ষিণ পশ্চিমের ১০টি জেলার চাহিদা মিটিয়েও উত্তরবঙ্গসহ দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় পানের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। শুধু তাই নয় ভেড়ামারার পান সুদূর পাকিস্তানে রপ্তানী হয়ে থাকে। পান থেকে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করে থাকে।

৭১এর মুক্তিযুদ্ধঃ
কুষ্টিয়া জেলা তথা ৮ নং সেক্টরের সর্বশেষ যুদ্ধ হয় ভেড়ামারায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ, শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে পদ্মা নদীর পাড়ে লাশগুলো ফেলে দেয়। সে সময়ের অনেক স্মৃতি বিজড়িত ভেড়ামারা। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে প্রতিরোধ করতে মিত্রবাহিনীর ছোঁড়া বোমায় হার্ডিঞ্জব্রীজের একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে। যুদ্ধের সময়ে পাক সেনাদের সাথে লড়াই করে ৮জন মুক্তিকামী বাঙালী শহীদ হয়েছিলেন। এরা হলেন, শহীদ জসিম উদ্দীন, শহীদ রফিক, চাঁদ আলী, নজরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দীন, লুৎফর রহমান, শাহাজান আলী, ফজলুল হক।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

ভেড়ামারার ইতিহাস ঐতিহ্য

আপডেট টাইম : ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ :

ভেড়ামারার ইতিহাসঃ কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলার মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলা অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ বহন করে। উপজেলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি ও খ্যাতি সম্পন্ন এই উপজেলা। কুষ্টিয়া জেলা সদর হতে ২৩ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ভেড়ামারা। ১৫৩.৭২ বর্গকিলোমিটার ভূখন্ডের ভেড়ামারা উপজেলায় বসবাস করে ১লক্ষ ৭৫ হাজার ৪৮০ জন মানুষ। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৯০ হাজার ৭শ’ এবং মহিলা রয়েছে ৮৪ হাজার ৭শ’৮০ জন। ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ। এখানে রয়েছে ৫৯টি মৌজা। ৯৮টি গ্রাম। ভেড়ামারা-মিরপুর নিয়ে সংসদীয় এলাকা কুষ্টিয়া-২। এ উপজেলার উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ও শহরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী হিসনা। ভেড়ামারা অবিভক্ত বাংলার মধ্যবর্তী স্থনে অবস্থিত ছিলো। স্বাধীন বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণেবঙ্গেও মধ্যস্থানে ভেড়ামারা উপজেলা।

ভেড়ামারার নাম করণঃ
অনেক খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে ট্রেন চলাকালীন অবস্থায় ভেড়ামারা ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একযোগে শতাধিক ভেড়া ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে মারা যায়। সেই সময় ‘ভেড়া’ হতেই ভেড়ামারার নামকরণ করা হয়েছিল।অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এ,এইচ,এম নূরুদ্দীনসহ অনেকেই জানান,দুইভাইরা ভাই মারা মারিতে একজন মারা যান। ভাইরামারা থেকে ভেড়ামারা নাম প্রচলন। প্রমান হিসেবে তারা ব্রিটিশ আমলে ভেড়ামারা রেলষ্টেশনের নাম ছিলো বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে ভাইরামারা থেকে ভেড়ামারা নাম।প্রবীণ প্রধান শিক্ষক রুহুল ইসলাম,কামাল হাজী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীন বিজ্ঞ ও জ্ঞনী ব্যক্তির কথা মতে ভেড়ামারা নামকরণের মুল তথ্য হচ্ছে ভাইরামারা থেকে ভেড়ামারা। বয়রামারা থেকে ভেড়ামারা।ভাইরাম থেকে ভেড়ামারা। অথবা ভেড়া মারা যাওয়া থেকে ভেড়ামারা নামের উৎপত্তি হয়েছে।এমন কথা ভেড়ামারা কবি সাহিত্যিক হাসানুজ্জামান খসরু তিনি ভেড়ামারা উপজেলার ইতিহাস বইতে ও এমন করেই উল্লেখ করেছেন।

দর্শনীয় স্থানঃ
ভেড়ামারার দর্শনীয় এবং মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে। পদ্মা নদীর উপর যুগল সৌন্দর্যের ‘হার্ডিঞ্জ ব্রীজ’ এবং ‘লালনশাহ সেতু’ নির্মিত। দুই সেতুর মাঝখানের পশ্চিম পাড় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকা।এছাড়াও রয়েছে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। ভেড়ামারায় ৬০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র,পরে নির্মান হয়েছে ৪১০ মে,ও,কম্বাইন্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৫০০ মে,ও ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চলন কেন্দ্র ইত্যাদি। ভেড়ামারা উপজেলার ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ৩টি মাজার এবং গায়েবী মসজিদ খ্যাত তিন গম্বুজ মসজিদ রয়েছে। এখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত নানা দেশের বিভিন্ন আশেকানদের আগমন ঘটে।

ভেড়ামারায় প্রথম শহিদ মিনার নির্মানঃ
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ভেড়ামারা থানায় প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয় ১৯৫৬ সালে। তা স্থাপন করা হয় ভেড়ামারা সরকারী পাইলট উচ্চ মডেল বিদ্যালয়ের প্রধান গেটে প্রবেশ করে ডানপাশে। অত্র বিদ্যালয়ের তৎকারীন শিক্ষার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম দুদু ও মোঃ আমিরুল ইসলাম।

প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারীঃ
২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ভেড়ামারা হাই স্কুলের তৎকালীন তরুণ, সাহসী ও দুরদর্শী সম্পন্ন প্রধান শিক্ষক মোঃ রুহুল ইসলাম প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনকারী হিসেবে ইতিহাসে তার নাম লিপিবদ্ধ আছে।

বধ্যভূমিঃ
উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর ২টি বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে।

নীলকুঠিঃ
বৃহত্তর কুষ্টিয়া সদর, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় এখন ও শতাধীক নীলকুঠীর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। নীল চাষ তদারকির জন্য ভেড়ামারা বাজারে বিদেশী নীলকরদেও বাসোপযোগী ভবন নির্মান করা হয়। তখন থেকেই ভেড়ামারা কুঠিবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভেড়ামারা শহরের কুঠিবাজাওে নীলকর সাহেবদেও থাকারবাস ভবন আজো অক্ষত রয়েছে।

ঘোড়েশাহ্ মাজারঃ
মাজারটি উপজেলা সদর হতে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে ধরমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রতিবছর ওয়াজ মাহাফিলে প্রচুর ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগম ঘটে থাকে এখানে।

সোলেমান শাহ মাজারঃ
পদ্মা নদীর তীরে উপজেলা সদর হতে ৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে মোকারিমপুর ইউনিয়নে গোলাম নগর সোলেমান শাহ্ মাজার অবস্থিত। প্রতিবছর ওয়াজ মাহাফিলে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান হতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আশেকান হাজির হয়।

ধরমপুর মাজারঃ
ছোট ছোট ইটদিয়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরী ধরমপুর মাজার। মাজারে কিছু কিছু প্রাচীন নিদর্শনও পাওয়া যায়।

তিন গম্বুজ মসজিদঃ
এটা অবস্থিত ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া নামক স্থানে। শোনা যায়, কোন এক সময় একই রাতে পৃথিবীতে সাতটি গায়েবী মসজিদ তৈরী হয়, যা ফেরেস্তারা তৈরী করে বলে কথিত আছে। সে সময় তিন গম্বুজওয়ালা ঐ মসজিদটি সাতবাড়িয়া এলাকায় অসমাপ্তভাবে শেষ হয়। এটা অনেকের কাছে গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত।

হার্ডিঞ্জ ব্রীজঃ
১৯১২ সালে নির্মতি হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ৫হাজার ৮৯৪ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ব্রীজটি ১৫টি স্প্যানে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ এবং দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু। দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান- পরিশ্রমের পর ‘হার্ডিঞ্জ ব্রীজ’র নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯১৫ সালে। ১৯১৫ সালের ৪ই মার্চ তারিখে শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। তারই নামানুসারে নামকরণ হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ।

লালন শাহ সেতুঃ
১৯৯৪ সালে নির্মিত লালন শাহ সেতু । যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু। প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর ১৭৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৭.৫ মিটার দুই লেন বিশিষ্ট সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পঃ
দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পটি ভেড়ামারায় অবস্থিত। ১৯৫৪ সালে এই প্রকল্পটি নির্মিত হয়।এ প্রকল্পের আওতাধীন দক্ষিণাঞ্চলের চারটি জেলার ১লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পায়।

৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
ভেড়ামারায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ৩টি ইউনিটে জাতীয় পর্যায়ের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে থাকে। গ্যাস টারবাইন এ ৩টি ইউনিট থেকে ৫৫ থেকে ৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রতিদিন। যা বিদ্যুতের বর্তমান সংকটময় পরিসি’তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহণ করে থাকে।

ঐতিহ্যবাহী পানঃ
অতি প্রাচীনকালে থেকেই ভেড়ামারায় পানের চাষ হয়। দিন যত গড়িয়েছে পানের চাষ ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ভেড়ামারায় পান দক্ষিণ পশ্চিমের ১০টি জেলার চাহিদা মিটিয়েও উত্তরবঙ্গসহ দেশের প্রায় ৪০টি জেলায় পানের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। শুধু তাই নয় ভেড়ামারার পান সুদূর পাকিস্তানে রপ্তানী হয়ে থাকে। পান থেকে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করে থাকে।

৭১এর মুক্তিযুদ্ধঃ
কুষ্টিয়া জেলা তথা ৮ নং সেক্টরের সর্বশেষ যুদ্ধ হয় ভেড়ামারায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ, শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে পদ্মা নদীর পাড়ে লাশগুলো ফেলে দেয়। সে সময়ের অনেক স্মৃতি বিজড়িত ভেড়ামারা। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে প্রতিরোধ করতে মিত্রবাহিনীর ছোঁড়া বোমায় হার্ডিঞ্জব্রীজের একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে। যুদ্ধের সময়ে পাক সেনাদের সাথে লড়াই করে ৮জন মুক্তিকামী বাঙালী শহীদ হয়েছিলেন। এরা হলেন, শহীদ জসিম উদ্দীন, শহীদ রফিক, চাঁদ আলী, নজরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দীন, লুৎফর রহমান, শাহাজান আলী, ফজলুল হক।


প্রিন্ট