হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
পূজার আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। শেষ সময়ের ব্যস্ততায় বিশ্রামের সময়টুকুও নেই কারিগরদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। এবার উপজেলার ১২৫টি মন্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে জোড়েসোড়ে। দেবীর আগমনকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা।
মাটি আর হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমার প্রতিরূপ ফুটিয়ে তোলার কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগররা। বেড়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে ব্যস্ততা। চলছে কেনাকাটা, চলছে নাড়ুমোয়া তৈরির প্রস্তুতি।
প্রতিমার কারিগররা প্রতিমা নিয়ে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। আর মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজ সজ্জার আয়োজন। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে রঙের আঁচড়ে সেজে উঠেছে প্রতিমাগুলো। বাকিগুলোও রঙে রঙিন হওয়ার অপেক্ষায়।
শারদীয় দুর্গাপূজার আর মাত্র ক’দিন বাকি। তাই উৎসবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে দেখা যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। সাজসজ্জা করতে মন্দিরে মন্দিরে ডেকোরশনের কাজও চলছে। ভক্তদের প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কারম্নকাজে বিরাট গেট তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ, কাঠ, কাপড় দিয়ে মন্ডপের শোভা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ডপ কর্তৃপক্ষ।
পৌরশহরসহ বিভিন্ন স্থানের বিপণিবিতান গুলোতে পূজার কেনাকাটা করতে ভিড় বেড়েছে। পূজার জন্য নতুন জামাকাপড়, স্যান্ডেল, জুতা থেকে প্রসাধনী সবই মনের মতো করে খুঁজে ক্রয় করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর ১২৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরম্ন হবে। সে হিসাবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা প্রতিমার কারিগর বিপুল পাল এবার বোয়ালমারী পৌরসভার বড় কামারগ্রামে অবস্থিত শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জিউর নিত্যসেবা অঙ্গন (আখড়া মন্দির) এবং পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার একটি মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন। তিনি জানান, প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা মজুরি নেন। তবে ভালো মানের হলে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। আখড়া মন্দিরের প্রতিমা তৈরিতে এবার ৪০ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এক একটি প্রতিমা তৈরিতে ৪ জনের ৮-১০ দিন সময় লাগে।
উপজেলার ময়না নিবাসী পুরোহিত সুমন চক্রবর্তী এবার উপজেলাধীন ঘোষপুর ইউনিয়নের ভীমপুরে অবস্থিত সর্বজনীন মন্দিরে দুর্গাপূজা করছেন।
তিনি জানান, গত বছর দুর্গাপূজা করতে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এবার ভীমপুর মন্দিরে পূজার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ওই মন্দির কমিটিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলেছেন। তারা গতবারের চেয়ে এবার বেশি টাকা দেবে বলে জানান।
বোয়ালমারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রবীন কুমার লস্কর বলেন, ‘এবার উপজেলায় মোট ১২৫টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরের থেকে তিনটি বেশি। তার আগের বছর ১১৮টি পূজা মন্ডপ দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল অথবা গম সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু তাহের জানান, বোয়ালমারী উপজেলায় এ বছর ১২৫টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে বিভিন্ন বিচারে ১২টি পূজামণ্ডপ অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৮৪টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ২৯টি সাধারণ।
ফরিদপুরের মধুখালী সার্কেলের (বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালি) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন কর বলেন, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সার্বক্ষণিক পুলিশ দেয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। তবে পুলিশের টহল থাকবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের পূজা মণ্ডপগুলোর খোঁজ খবর নেয়ার কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া যেসব পূজা মণ্ডপের সামর্থ্য আছে সেসব পূজা মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রিন্ট