তৃতীয়ধাপে অনুষ্ঠিতব্য রাজবাড়ী জেলার পাংশা পৌরসভার নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা বৃহস্পতিবার ২৮ জানুয়ারী মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। ৩০ জানুয়ারী পাংশা পৌরসভার ভোটগ্রহণ। প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত ৩জন মেয়র প্রার্থী- আওয়ামী লীগ মনোনীত মোঃ ওয়াজেদ আলী (নৌকা), বিএনপি মনোনীত রইচ উদ্দিন খান (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল হক ফরহাদ (জগ) পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সমর্থিত লোকজনকে সাথে নিয়ে গণসংযোগ করেন।
এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ১নং ওয়ার্ডে লাইলী বেগম, মমতাজ বেগম ও আলেয়া পারভীন, ২নং ওয়ার্ডে জেসমিন আক্তার, জোসনা বেগম, রাশিদা ইয়াসমিন ও সাবানা আক্তার, ৩নং ওয়ার্ডে সেফালী বেগম, মনোয়ারা বেগম, দুর্গা রানী পাল ও মমতাজ বেগম, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ১নং ওয়ার্ডে নাদের হোসেন, ছোরাফ মন্ডল, জিয়াউর রহমান, রিয়াজ উদ্দিন শেখ, মাসুম খান ও সহিদ মন্ডল, ২নং ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম (বাবু), কায়ছার হামিদ, আব্দুল মোতালেব মোল্লা, সাহেব আলী মন্ডল, সোহেল মাহমুদ ও এ.এম মমিনুল ইসলাম, ৩নং ওয়ার্ডে লাবলু বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন খান ও তাজুল ইসলাম, ৪নং ওয়ার্ডে জালাল উদ্দিন, সামসুদ্দিন প্রামানিক, রাম দাস দত্ত, হাবিবুর রহমান, রাজিবুল হাসান রবি, গোবিন্দ কুন্ডু ও জাকির হোসেন, ৫নং ওয়ার্ডে আব্দুল আলীম, তাজুল ইসলাম, আলম শেখ ও মিজানুর রহমান, ৬নং ওয়ার্ডে কে.এম শহিদুজ্জামান, কোরবান আলী চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, বাকি বিল্লাহ খান, রিপন খান ও বাদশা মন্ডল, ৭নং ওয়ার্ডে আবুল হোসেন শেখ, হাবিবুর রহমান ও খোন্দকার মাহবুব হোসেন রিপন, ৮নং ওয়ার্ডে ওদুদ সরদার ও আল মাসুদ, ৯নং ওয়ার্ডে আব্দুল ওয়াহাব সরদার, চাঁদ আলী, মোহাম্মদ সাবু, উজ্জল কুমার প্রামানিক ও ফিরোজ হোসেন অনুসারী লোকজনের নিয়ে গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক নারী-পুরুষ লোকজন গ্রæপ করে এলাকায় গণসংযোগ করেন।
জানা যায়, এবারে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ ওয়াজেদ আলীর নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে হেভিওয়েট নেতারা গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। এতে নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা বেগবান হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ডঃ খালেদ শওকত আলী, যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মুক্তা আক্তার ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ হেলাল উদ্দিনসহ ৩৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল পাংশা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ ওয়াজেদ আলীর নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা চালান।
এর আগে পর্যায়ক্রমে রাজবাড়ী-২ আসনের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য ও পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মিয়া, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি প্রফেসর ডাঃ এম. ইকবাল আর্সলান, সাবেক ডেপুর্টি এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু, কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক, কালুখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য কামরুজ্জামান সুইট, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম এহতেসাম, ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক জীবন বিশ্বাস, ছাত্রলীগের সদস্য প্রশান্ত দাস ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা নিলয়সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নৌকার পক্ষে জনমত গঠনে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা, পথসভা ও কর্মীসভা করেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ হোসেন।
রাজনৈতিক সচেতন মহল ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের পাংশা পৌরসভা নির্বাচনের দৃষ্টি মেয়র প্রার্থীদের দিকে। ভোটযুদ্ধ হবে প্রবীণের সাথে নবীনের। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ওয়াজেদ আলী মাস্টার এরআগে পৌরসভার দুইটার্মে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি পাংশা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল হক ফরহাদ রাজনীতিতে ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ, যুবলীগ থেকে মেয়র প্রার্থী। তরুণ সমাজসেবী হিসেবে এলাকায় তার সুনাম আছে। মেয়র প্রার্থী হওয়ার পরপরই তাকে নিয়ে তরুণ ভোটারসহ রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী রইচ উদ্দিন খান পাংশা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর।
মেয়র প্রার্থী হয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তিনি গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী রইচ উদ্দিন খানের আপন মামা ওয়াজেদ আলী মাস্টার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার মেয়র প্রার্থী। তাদের বাড়ী একই এলাকায় এবং তারা দুজনই একই কেন্দ্রের ভোটার। এসব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা। একইসাথে চলছে ভোটের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এদিকে- অবাধ সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে ভোটের হিসেব-নিকেশ পাল্টে যেতে পারে বলেও রাজনৈতিক সচেতন মহলের অনেকেই ধারণা পোষণ করছেন।
পাংশা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আঃ আলীম জানান- অবাধ সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে নির্বাচনী মালামাল ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হবে। নির্বাচনের জন্য ৯টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তা হলো- পাংশা শাহ জুঁই কামিল মাদরাসা, মৌকুড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পাংশা সরকারী জর্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ডাঃ আব্দুল কাদের বালিকা দাখিল মাদরাসা, পাংশা পৌরসভা কার্যালয়, কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমী, পাংশা জামিয়া আরাবিয়া কওমী মাদরাসা ও মৈশালা দারুল উলুম মোহাম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসা।
পাংশা পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৩১৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ১১৩ জন ও মহিলা ভোটার ১২ হাজার ২০০ জন। পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার ৮৭ জন বেশি।
প্রসঙ্গতঃ ১৯৯০ সালে পাংশা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মাহবুব রহমান ১০/০৫/১৯৯০ থেকে ১৫/০৭/১৯৯১ ও ইউএনও মোহাম্মদ বারেক ১৬/০৭/১৯৯১ থেকে ২৯/০৩/১৯৯৩ পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পাংশা পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মরহুম আব্দুল আজিজ সরদার। তিনি ২৯/০৩/১৯৯৩ থেকে ০৭/০৪/১৯৯৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পর্যায়ক্রমে মেয়র মোঃ ওয়াজেদ আলী ০৭/০৪//১৯৯৯ থেকে ১৫/০৬/২০০৪, সেরিনা আজিজ ১৫/০৬/২০০৪ থেকে ১৫/০২/২০১১, পুনরায় ওয়াজেদ আলী ১৫/০২/২০১১ থেকে ১৫/০২/২০১৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান মেয়র আব্দুল আল মাসুদ নির্বাচিত হয়ে ১৫/০২/২০১৬ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।