ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বালিয়াকান্দির ‘উকুন খোটা’ স্কুল এখন দেশসেরা হওয়ার অপেক্ষায় Logo তানোরের নারায়নপুর স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান Logo বাঘায় গলা কেটে হত্যা, নিহতের ভাইরা ভাই রায়হান গ্রেপ্তার Logo দামের উত্তাপে ইলিশ এখন ছুঁয়ে দেখতেও ভয় Logo গোপালগঞ্জে দূর্নীতি ও প্রতারণা করা সেই ত্রাণ কর্মকর্তার তদন্ত শুরু Logo কুষ্টিয়ায় জেল পলাতক আসামি রুবেল গ্রেফতার Logo আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবসহ সেবাদান প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ালেন আদিত্য ফাউন্ডেশন Logo ফরিদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শামীম তালুকদার গ্রেপ্তার Logo এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র Logo মাগুরা শ্রীপুরে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী গ্রেফতার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চিকিৎসার সামর্থ্য নেই, অসহায় বাবা-মা

১২ বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দী সালথা’র মিলন

দরিদ্র দিমজুরের ১৫ বছর বয়সি ছেলে মিলন শরিফ। জন্মের বছর তিনেক পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায় তার কথা বলা। স্বভাবিক চলাচলেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। শিশু সন্তানদের এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় অসহায় বাবা-মাকে। পরে বাধ্য হয়ে নিজ সন্তানের পায়ে লোহার শিকল আর তালা দিয়ে বেঁধে রাখতে শুরু করেন তারা।

এরপর থেকে গত ১২ বছর ধরে এভাবেই লোহার শিকলে বন্দী হয়ে রাতে ভাঙ্গা ঘরে আর দিনে খোলা রান্নাঘরে কাটছে মিলনের জীবন। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিকবার স্থানীয় হাসপাতালে আর ফকিরের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানা গেছে। তবে অর্থের অভাবে বড় ডা. দেখিয়ে উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা তার কপালে জোটেনি।

শিকল বন্দী মিলনের দরিদ্র দিনমজুর বাবার নাম হাফেজ শরিফ। অসহায় মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। তারা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা যদুনন্দী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। মিলনকে নিয়ে ওই গ্রামেই থাকেন তার বাবা-মা। তাদের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। আর ছেলেরা কেউ তেমন কোনো কাজকর্ম করে না বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। যেকারণে পরিবারটি আরও অসহায়। কোনো মতে নুন-ভাতে কাটে তাদের জীবন।

শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে উজিরপুর গ্রামে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় উপরে টিন আর নিচে পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরী ছোট একটি ঘর। তাও কয়েক দিন আগে সংঘর্ষের সময় ঘরটির বেড়া ভেঙ্গে দেয় সংঘর্ষকারীরা। সেই ভাঙ্গার ঘরের সামনে রয়েছে একটি খোলা রান্নাঘর। সেই রান্নাঘরের খুটির সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন মিলনকে। তিনি রান্নাঘরের দুটি চুলার মাঝে শুয়ে বাচ্চাদের মত একা একা কি যেন বলাবলির চেষ্টা করছেন। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শুয়া থেকে উঠে দৌড়া-দৌড়ি ও লাফালাফি শুরু করে।

মিলনের বাবা হাফেজ শরিফ বলেন, ৩ বছর বয়সের কালে আমার ছাউয়াল মিলন নিমনা (নিউমোনিয়া) নোগে অসুক হলে, হে সুময় তারে বোলমারী হাসপাতালে নিয়া চিকিশসা করাই। কিছুদিন পর আমার ছাউয়াল প্রতিবন্দী, বোবা ও পাগল হয়ে যায়। তারপর ওরে চিকিশসা করাইতে আমার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাহা লাগে। হাওলাদ করে এই টাহা খরচা করি। আমি দিন কামাই করি, দিন খাই, ভাই। আমার তো ওরে চিকিৎসা করানোর কোন সমর্তন নাই। ওর একটা প্রতিবন্দীর ভাতার কার্ড ছাড়া কিছু নাই। কোনো মিম্বার-চিয়ারমেন ও নেতারা আমার ছাউয়ালের খোঁজখবর কোনো দিন নেয় নাই। তাই ছিলেক দিয়ে ওরে বাইন্দ্যা নাখা ছারা উপায় নাই আমাগো। বাইন্দ্যা না রাখলি সে এদিকওদিক চলে যায়। তারপরেও কয়বার ছিকেল ছিরে ফেলাইছে।

আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে স্কুল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের পরস্পরের বিরুদ্ধে জিডি

মিলনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ছোটকালে ওর নিমনা (নিউমোনিয়া) হয়। ফহির-ফক্কর ও ডাকতার দিয়া বহুত চিসটা করছি। ভাল হয় না। তাই এহন আর চিসটা-মিসটা করি না। টাহা-পয়সা নাই তাই চিকিশসাও করাই না। চিকিশসা না করবার পাইরা ১২ বছর ধইরা ছিকেল দিয়ে বাইন্দ্যা রাখছি।

যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোটকাল থেকে মিলন প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন। যেকারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ওকে একটা প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখন ওর চিকিৎসার জন্য যদি কোনো সহযোগিতা করা লাগে, তাহলে আমি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বালিয়াকান্দির ‘উকুন খোটা’ স্কুল এখন দেশসেরা হওয়ার অপেক্ষায়

error: Content is protected !!

চিকিৎসার সামর্থ্য নেই, অসহায় বাবা-মা

১২ বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দী সালথা’র মিলন

আপডেট টাইম : ০৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
এফ.এম.আজিজুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ :

দরিদ্র দিমজুরের ১৫ বছর বয়সি ছেলে মিলন শরিফ। জন্মের বছর তিনেক পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায় তার কথা বলা। স্বভাবিক চলাচলেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। শিশু সন্তানদের এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় অসহায় বাবা-মাকে। পরে বাধ্য হয়ে নিজ সন্তানের পায়ে লোহার শিকল আর তালা দিয়ে বেঁধে রাখতে শুরু করেন তারা।

এরপর থেকে গত ১২ বছর ধরে এভাবেই লোহার শিকলে বন্দী হয়ে রাতে ভাঙ্গা ঘরে আর দিনে খোলা রান্নাঘরে কাটছে মিলনের জীবন। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিকবার স্থানীয় হাসপাতালে আর ফকিরের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানা গেছে। তবে অর্থের অভাবে বড় ডা. দেখিয়ে উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা তার কপালে জোটেনি।

শিকল বন্দী মিলনের দরিদ্র দিনমজুর বাবার নাম হাফেজ শরিফ। অসহায় মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। তারা ফরিদপুরের সালথা উপজেলা যদুনন্দী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। মিলনকে নিয়ে ওই গ্রামেই থাকেন তার বাবা-মা। তাদের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। আর ছেলেরা কেউ তেমন কোনো কাজকর্ম করে না বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। যেকারণে পরিবারটি আরও অসহায়। কোনো মতে নুন-ভাতে কাটে তাদের জীবন।

শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে উজিরপুর গ্রামে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় উপরে টিন আর নিচে পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরী ছোট একটি ঘর। তাও কয়েক দিন আগে সংঘর্ষের সময় ঘরটির বেড়া ভেঙ্গে দেয় সংঘর্ষকারীরা। সেই ভাঙ্গার ঘরের সামনে রয়েছে একটি খোলা রান্নাঘর। সেই রান্নাঘরের খুটির সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন মিলনকে। তিনি রান্নাঘরের দুটি চুলার মাঝে শুয়ে বাচ্চাদের মত একা একা কি যেন বলাবলির চেষ্টা করছেন। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শুয়া থেকে উঠে দৌড়া-দৌড়ি ও লাফালাফি শুরু করে।

মিলনের বাবা হাফেজ শরিফ বলেন, ৩ বছর বয়সের কালে আমার ছাউয়াল মিলন নিমনা (নিউমোনিয়া) নোগে অসুক হলে, হে সুময় তারে বোলমারী হাসপাতালে নিয়া চিকিশসা করাই। কিছুদিন পর আমার ছাউয়াল প্রতিবন্দী, বোবা ও পাগল হয়ে যায়। তারপর ওরে চিকিশসা করাইতে আমার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাহা লাগে। হাওলাদ করে এই টাহা খরচা করি। আমি দিন কামাই করি, দিন খাই, ভাই। আমার তো ওরে চিকিৎসা করানোর কোন সমর্তন নাই। ওর একটা প্রতিবন্দীর ভাতার কার্ড ছাড়া কিছু নাই। কোনো মিম্বার-চিয়ারমেন ও নেতারা আমার ছাউয়ালের খোঁজখবর কোনো দিন নেয় নাই। তাই ছিলেক দিয়ে ওরে বাইন্দ্যা নাখা ছারা উপায় নাই আমাগো। বাইন্দ্যা না রাখলি সে এদিকওদিক চলে যায়। তারপরেও কয়বার ছিকেল ছিরে ফেলাইছে।

আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে স্কুল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের পরস্পরের বিরুদ্ধে জিডি

মিলনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ছোটকালে ওর নিমনা (নিউমোনিয়া) হয়। ফহির-ফক্কর ও ডাকতার দিয়া বহুত চিসটা করছি। ভাল হয় না। তাই এহন আর চিসটা-মিসটা করি না। টাহা-পয়সা নাই তাই চিকিশসাও করাই না। চিকিশসা না করবার পাইরা ১২ বছর ধইরা ছিকেল দিয়ে বাইন্দ্যা রাখছি।

যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোটকাল থেকে মিলন প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন। যেকারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ওকে একটা প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখন ওর চিকিৎসার জন্য যদি কোনো সহযোগিতা করা লাগে, তাহলে আমি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো।


প্রিন্ট