নওগাঁর আত্রাইয়ে কুমার সম্প্রদায়ের শতবছরের পুরানো ঐতিহ্য মৃৎশিল্প।একেকটি শিল্পবিস্তারের পেছনে রয়েছে একেক টি দেশ বা জাতির অবদান। তেমনই একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প।প্রাচীন কাল থেকে বংশানুক্রমে গড়েওঠা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
যারা মাটি দিয়ে কাজ করে পেশায় তারা কুমার বা পাল।দিন দিন যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে তারা পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত।তারপরও নওগাঁয় প্রায় ৫ শতাধিকপরিবারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।এখন আর কারও বাড়িতেই মাটির তৈজসপত্র তেমন একটা দেখা যায় না।ফলে গ্রামে কুমারদের যাতায়াতও তেমন একটা চোখেপড়েনা।
ইদানিং দু-একটা দোকানে যত সামান্য পরিমানে এসব কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের অন্তর্গত ভবানিপুর পাল পাড়ার মালিক নিরেন পাল বলেন, এখানে মোটামুটি অনেক ধরনের মাটির পণ্যই কিনতে পাবেন কাদা মাটির তৈরী হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, কলস, হাতি, ঘোড়া, পুতুলসহ ছোট-বড় নানা রকমের পাত্র।দিন দিন বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্লাস্টিকসামগ্রী।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে স্কুল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের পরস্পরের বিরুদ্ধে জিডি
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে বিলুপ্তির পথে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতনও গাঁয় মৃৎশিল্পীদের ঘরে ঘরে হাহাকার নেমে এসেছে।ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট।কুমারপাড়ার বাসিন্দাদের পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন।কুমারপাড়ার চাকা আজ আর তেমন ঘোরেনা।মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, সরা, বাসন, কলসি, বদনার কদর প্রায় শূন্যের কোটায়।
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মৃৎশিল্প।কুমার সম্প্রদায় যুগযুগ ধরে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে।কুমার সম্প্রদায়ের হাঁড়ি-পাতিল ও কলস সহ যে কোনও মৃৎশিল্প তৈরির প্রধান উপকরন হচ্ছে এটেল মাটি, জ্বালানিকাঠ, শুকনো ঘাস ও খড়। এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল।তখন এ শিল্পের সব মহলেইকদরছিল। স্থানীয়ভাবেউৎপাদিত এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো।সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি পাতিলে বোঝাই
করা ভারনিয়ে দলে দলে ছুটেচলতপ্রতিটিগ্রাম ও মহল্লায়।পাতিল, গামলা, কূপিবাতি, থালা, দুধেরপাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির খাঁজ, গরুর খাবার পাত্র,কুলকি, ধান চাল রাখার বড়পাত্র,কড়াই, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি নিয়ে বাড়ি থেকে বাড়ি ঘুরে বেড়াতেন।পণ্যের বিনিময়ে ধান সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় ধান বোঝাই ভার নিয়ে ফিরে আসত বাড়িতে। ওই ধান বিক্রি করেই সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত।
কিন্তু সরকারের পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতার অভাবে আজ এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।নওগাঁয় মৃৎশিল্প এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে।কুমাররা মাটির তৈরি জিনিস হাট-বাজারে বিক্রি করেন।কিন্তু তেমন বেচা কেনা নেই।এখন দিন বদলে গেছে।সবখানেই এখন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়।তাই মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি তেমন আগ্রহও নেই সাধারন জনগনের।ফলেমৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার পরিবারগুলো আর্থিক সংকট সহ নানা অভাব অনটনে জড়িত।
আরও পড়ুনঃ টিকটক করার উদ্দেশ্যে ডিম ভেঙে স্কুল ফাঁকি দিয়ে অদ্ভুত জন্মদিন পালন, আটক ৬
নিরেন পাল দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা কে জানান, অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছে।মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ঢাকনা হাট-বাজারে ভ্যান ভাড়া দিয়ে আনলেও জিনিস বিক্রি হয়না।এখন তাদের অনেকেরই অবস্থা শোচনীয়।
প্রিন্ট