মাদকাসক্তি হচ্ছে অভ্যাসগত চেতনা উদ্রেককারী দ্রব্যের ব্যবহার। যা মানসিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করে এবং সমাজে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়াসৃষ্টি করে।এই সমাজে মাদক যাহারা বিক্রি করে, অথবা গ্রহণ করে তাহারা দুজনেই সমাজের চোঁখে সমান অপরাধি।
বর্তমানে দেশের সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে, এটা একটি দেশের জন্য স্বস্তি দায়ক।এ ঘোষণায় কি মাদক সমাজ থেকে বিতাড়িত হচ্ছে? আসল কথা হল, কোন দেশের সরকারের একার পক্ষে মাদক নিমূল করা কোনভাবেই সম্ভাব হয়ে উঠে না।
যদি সে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা না জন্ম নেয়। বিষেশ করে যুব সমাজে সবাইকে সম্মিলিত ভাবে এর বিরুদ্ধে কঠর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কোন পরিবার চাইবেনা তার সন্তান মাদকের ভয়াল থাবায় গ্রাস করে খাক।
নেশা কবলে পড়তে না চাইলেও এক সময় হয়ে যায়, পারিবারিক সমস্যা, মাদকাসক্ত বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, সুনেছি কেউবা শখের বসে মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
শিরণামের মূল বিষয়ে যাওয়া যাক, আলফাডাঙ্গায় বেড়ে ওঠা ওয়াকিব শিকদার (২৪) বছরের এক স্বপ্ন নিয়ে গড়ে উঠা এক যুবক, গত ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ রাতে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।হত্যার ঠিক তিন বছর পূর্বে তার মা চলে যায় অকিবের মতো না ফেরার দেশে। বাবা থাকতেও নেই, দুই ভাইয়ের মধ্যে ওয়াকিব বড়, ছোট ভাইটির নাম ওয়ামিন শিকদার, দুই ভাইয়ের নামের সাথে যেমন মিল ছিল, তেমন ছিল ভাই ভাইয়ের আত্মার মিল। ওয়ামিন কে ভালো মানুষ করার ইচ্ছায়, লেখাপড়া করার পাশাপাশি চাকুরি নেয় আলফাডাঙ্গার নাজমা মেডিকেয়ার হাসপাতালে, সততা আর কর্মনিষ্ঠার জন্য স্বল্প সময়ে মালিকের নয়নের মনি হয়ে যায় ওয়াকিব শিকদার।
ছোট ভাই ওয়ামিন লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাল ক্রিকেট খেলে, ভাল খেলার জন্য শত চেষ্টা করে রাজধানীর একটি ক্লাবে জুনিয়র দলে যায়গা হয়ে যায়। বড় ভাই স্বপ্নে দেখে তার ভাইটি এক সময় ভাল ক্রিকেটার হবে, জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে লাল সবুজের জার্সিতে দেশের জন্য কিছু করবে, তখর তার গর্ভে বুকটা ভরে যাবে, তাই দিনরাত পরিশ্রম করে ছোট ভাইটিকে বুঝতেদেয়না বাবার অভাব। কিন্তু ওয়াকিবের সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়, গত ১৯/০৩/১৯ ইং রাতে মাদকাসক্ত বন্ধুদের হাতে নির্মম ভাবে শেষ হয়ে যায় তার জীবন প্রদীপ। সে সময় জেনে ছিলাম ওয়াকিবের বন্ধুুর নেশা করার জন্য প্রায় সময় টাকা চেয়ে নিতো। ওই দিন হয়তো তার কাছে টাকা ছিলনা অথবা তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে পারেনি।
হত্যার পরকয়েকটা দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রিন্ট মিডিয়া,ইলেকট্রনিক মিডিয়া ছিল সোচ্চার, বাজারে চায়ের দোকানে ছিল ওয়াকিব কে নিয়ো আলোচনা, অনেকেই বলেছিল কি করে সম্ভাব হলো এই হাসি খুশি একটি ছেলেকে সামান্ন্য টাকার জন্য হত্যা করা? আসলে যাহারা নেশা করে তাদের পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নেই, নেশার ঘোর যখন মাথায় চাপে তাদের কোন কিছুই মনে থাকেনা, কেবা আপন কেবা পর।
এ সব হত্যার ঘটনা মানুষের মনে বেশি থাকেনা, কিছু দিনের মধ্যে মানুষ ভূলে গেছে এই অঞ্চলে কেউ একজন ওয়াকিব শিকদার নামের এক তরুণ ছিল। সাধারন মানুষের মনের মাঝে আসঙ্কা সঠিক বিচার হবে কি ওয়াকিব শিকদারের?
আমরা ভূলে যাবো, আমাদের কলম থেমে যাবে, কিন্তু তার ছোট ভাই ওয়ামিন কি ভূলতে পারবে ভাই হারানো, এক জন অভিবাবক হারানো যন্ত্রণা। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে চারিদিকে বড় ভাইটির স্মৃতি তাকে সর্বক্ষণ তাড়া করে, যদি তার ভাইয়ের সঠিক হত্যাকারীদের বিচার হয় তাহলে এটাই তার শেষ শান্তনা।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে টাকা না দেয়ায় সনদ পেল না ছাত্রী!
বড় ভাইয়ের হত্যার সাথে কি ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন কি তাহলে মাদকাসক্তরা হত্যা করে দিল? আজ নিজেকে একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে আমি কি সমাজে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারবো, বড় জানতে ইচ্ছে করে আর কত মায়ের কোল শূন্য হবে নেশাখোরদের হাতে। এই অঞ্চলের মাদকাসক্ত বন্ধুদের হাতে শুধু ওয়াকিব শিকদার না এ দেশের আনাচে কানাচে নেশাগ্রস্ত বাবার হাতে ছেলে, ছেলের হাতে বাবা, ভাইয়ের হাতে ভাইকে হত্যা করা হচ্ছে।
আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করে মাদকাসক্তর হাতে জিম্মি হতে চাইনা,চাইনা সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে, আমরা সুন্দর করে বাঁচতে চাই। এ জন্য আমাদের দরকার সম্মেলিত প্রচেষ্টা।
আর কোন ওয়াকিব কে যেন বিনাদোষে চলে যেতে না হয়। ওয়াকিব হত্যার বিচার হয়েছে কি না সেটা আজও আমার কাছে অজানা।
- মোঃ ইকবাল হোসেন
প্রিন্ট