এক সময়ের জরাজীর্ণ মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন শুধু একটি চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, পরিণত হয়েছে দর্শনীয় স্থানে। ফুল বাগান ও সবুজে ঘেরা হাসপাতালটির সামনের বিশাল মাঠ এক সময় গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। সন্ধ্যা হলেই মূল ভবনের বারান্দা ও মাঠের শেষ প্রান্তে নির্জন স্থানে ভিড় করত মাদকসেবীর দল। সেই হাসপাতালটির প্রবেশদ্বার এখন ফুল বাগান ও অভ্যন্তরের ফাঁকা স্থানগুলো বিভিন্ন বৃক্ষরাজি দিয়ে সুসজ্জিতভাবে সাজানো হয়েছে। দ্বিতল ভবনের হাসপাতালটি দেখতে শপিংমলের মতো মনে হওয়ায় শুধু চিকিৎসা নিতে নয়, অনেক দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন। এখানে রয়েছে সেবা নিতে আসা রোগীর সুন্দর অবসর কাটানোর জন্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি।
হাসপাতালের মূল ভবনের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল ফুলের বাগান। বাহারি পদের ফুলগাছ শোভাবর্ধন করেছে সীমানাজুড়ে। ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে হাসপাতাল চত্বরে। আগে কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনে চিকিৎসকরা থাকতেন না। সংস্কার করে তা করা হয়েছে বাসযোগ্য। এখন সেই আবাসিক এলাকাটি সমৃদ্ধ করতে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে মিনি পার্কসহ ছোট ছোট স্থাপনা। সেখানে শাক-সবজি চাষের সুযোগ পাচ্ছেন আবাসিক কর্মকর্তারা। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ বাইসাইকেলে আসেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে। এসব সাইকেল চুরি ঠেকাতে গড়ে তোলা হয়েছে সাইকেল স্ট্যান্ড। আবাসিক-অনাবাসিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে মসজিদ। অনাবাসিক রোগীর জন্য করা হয়েছে ওয়েটিং জোন এবং লাইব্রেরি। লাইব্রেরিতে স্থান পেয়েছে অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই। ভর্তিকৃত রোগীরা চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বই পড়ে চিত্তবিনোদনসহ জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।
আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করায় রাতে হাসপাতালটিকে বিনোদন কেন্দ্র মনে হয়। বিভিন্ন স্থানে ফলদ, ঔষধি বৃক্ষ ও শোভাবর্ধনকারী গাছ রোপণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, জনবল স্বল্পতা সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাউন্ড সিস্টেম চালু করা হয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদানসহ কর্মকর্তা- কর্মচারীরা সপ্তাহে একদিন পরিচ্ছন্নতা দিবস পালন করে থাকেন। স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র। এ ছাড়া হাসপাতালের ভেতরে অবস্থিত মসজিদটি সম্প্রসারণ ও টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে প্রধান ফটকের সামনের অবৈধ্য স্থাপনা। উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে আনা হয়েছে দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর। চালু করা হয়েছে এক্সরে মেশিন ও অপারেশন থিয়েটার। সঙ্গে রয়েছে প্যাথলজি বিভাগ। বহির্বিভাগ ও ভর্তিকৃত রোগীর চিকিৎসাসেবায় অধিকাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ করা হয়। সব মিলে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি একটি মডেল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
লাইব্রেরিতে অবস্থানকারী সোনিয়া নামে এক কলেজছাত্রী জানান, এখানে তার মা ভর্তি আছেন। তিনি অধিকাংশ সময় মায়ের কাছে থাকেন। আর অবসরে লাইব্রেরিতে বই পড়েন। হাসপাতালের লাইব্রেরিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে।
হাসপাতালটির পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে ভূমিকা রেখেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোকছেদুল মোমিন। দীর্ঘদিনের চিকিৎসাসেবায় এই জনপদের মানুষের আস্থা ও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
আধুনিকতা ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দর্শনীয় হলেও এখানে রয়েছে জনবল সংকট। এখানে প্রথম শ্রেণির ২৪টি পদের অনুকূলে ১২, দ্বিতীয় শ্রেণির ২৫টি পদের অনুকূলে ১৯, তৃতীয় শ্রেণির ৮৭টি পদের অনুকূলে ৫৪ এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩০টি পদের অনুকূলে মাত্র ৬ জন কর্মরত রয়েছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোকছেদুল মোমিন বলেন, স্থানীয় জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় হাসপাতালটির পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি।
সেবার মান বাড়াতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।