রাজধানীর সোবহানবাগে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। কোচিংয়ের নোট আনতে যাওয়ার কথা বলে কলাবাগানে বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসায় যায়।
সেখানেই ‘ধর্ষণের’ শিকার হয়ে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজ গাড়িতে করে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায় দিহান। হাসপাতালে ভর্তির আগেই সেখানকার চিকিৎসক আনুশকাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) নিজের সোবহানবাগের বাসা থেকে কলাবাগানে বন্ধু দিহানের বাসায় যায় আনুশকা। সেখানে যাওয়ার পর আমরা জেনেছি, আনুশকা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বন্ধুর ভাষ্যমতে, এরপর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করার আগেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ দিহান নামে ওই ছেলেটিকে আটক করি। এরপর তাকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক মেলামেশা হয়। এরপর ওভার ব্লিডিং হয়, এ কারণে আনুশকা সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তবে দৈহিক মেলামেশার বিষয়টি পরীক্ষা-নীরিক্ষা সাপেক্ষে প্রমাণের বিষয়। এর বাইরে অন্য কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা সেটি পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিসি বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আল আমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে দিহান নামে ওই একজনই আসামি, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে এ ঘটনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাদের বিনীত অনুরোধ করতে চাই, ভিকটিমের পরিবার বুঝে-শুনে মামলা করেছে। এরপরও এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কিংবা অন্য কোনো ইন্ধন থাকলে সেটা আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। তাই সবাইকে এটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত না করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
মামলায় বাদীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাদী বলেছেন, আমার মেয়েকে তার বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা তাদের দাবি। ধর্ষণ হয়েছে কিনা তদন্তের ব্যাপার, পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ময়নাতদন্তের চিকিৎসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধর্ষণ হয়েছে কিনা বা অন্য কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বাসায় ডেকে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ডেকে নেওয়া হয়েছে কিনা মামলাতেও উল্লেখ নেই বা তার বন্ধুও স্বীকার করেনি। দিহানের বাবা রাজশাহীতে চাকরি করেন ও ভাই নারায়ণগঞ্জে চাকরি করেন। কলাবাগানের ওই বাসায় মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন দিহান। গত বৃহস্পতিবার সকালে তার মা বগুড়া যান। আমরা অনুমান করছি, বাসা ফাঁকা থাকায় আনুশকাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।
প্রিন্ট