কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার চাঁদগ্রামে একটি হত্যাকান্ডের জেরে বাড়িঘর লুটপাট, মাঠের সেচযন্ত্র লুট ও পাইপ নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে সেচসংকটে পড়েছে দু শ বিঘা ধানখেত। খেতে সেচ না দেওয়ায় জমি শুকিয়ে ধানের চারাগাছ মাঠেই মারা যাচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন চাষিরা। ফলে বোরো চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাঁদগ্রাম চরপাড়ার মাঠের কয়েকশত কৃষক।
ভুক্তভোগী কৃষকের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চাঁদগ্রামে ৫০ বছর ধরে মন্ডল ও মালিথা বংশের গোষ্ঠীগত বিরোধ চলে আসছে। এর জেরে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি মন্ডল বংশের সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়। এ হত্যাকান্ডের পর মামলা হলে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে যায়।
এ সুযোগে মালিথা ও প্রামাণিক বংশের বাড়ি ঘরে হামলা ও লুটপাট চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এরপর মাঠের ২০ থেকে ২৫টি সেচযন্ত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে চরপাড়া মাঠের প্রায় দু’শ বিঘা জমির বোরো ধান সেচের অভাবে শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মধুখালীতে পিয়াজের বাম্পার ফলন
এখনই সেচ দিতে না পারলে প্রায় দেড় শ’ বিঘা জমির ধান খেত নষ্ট হয়ে যাবে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে চাষিরা। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এ বিষয়ে ওই মাঠের কৃষক শামিম মালিথা, খলিল, খালেক, জলিল ওবায়দুল ও আজলসহ অনেকের পরিবার জানায়, ২০-২৫ টি সেচযন্ত্র লুট করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষরা। নষ্ট করে দিয়ে যায় গভীর বোরিং পাইপ। এখন ওই মাঠে সেচযন্ত্র না থাকায় প্রায় দু’শ বিঘা ধানের জমিতে পানি দিতে পারছে না চাষিরা।
প্রতিপক্ষরা অন্যদের এসব জমিতে পানি সরবরাহ করতে নিষেধ করায় তাঁরাও পানি দিচ্ছে না। রোপণকৃত ধান খেতের চারা মারা গেলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। খাদ্য সংকট দেখা দিবে। পরিবারের লোকজন না খেয়ে থাকবে বলে জানান তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, খুনের ঘটনার পর মালিথা বংশের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও সম্পদ লুটপাট হয়েছে। এখন ফসলের ক্ষতি করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও পুলিশের কঠোর ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
কৃষক শামিম মালিথার স্ত্রী রোজিনা খাতুন বলেন, সেচযন্ত্র লুটের পর প্রায় দু শ’ বিঘা ধানের জমিতে সেচ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সময়মতো সেচ না দিতে পারলে ধান, গম, সবজি পেয়ারা বাগানসহ অন্যান্য ফসলের চরম ক্ষতি হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ চাটমোহর উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা, আনন্দ মিছিল
রোজিনা খাতুন আরও বলেন, পাকা গম কাটতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। জোর করে গম কেটে নেওয়াসহ পেয়ারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে বা মাঠে গেলে ধর্ষণ ও হত্যার অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘সেচযন্ত্র চুরির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওখানে পুলিশ নিয়মিত ডিউটি দিয়ে যাচ্ছে। ফসলের প্রকৃত মালিকেরা ফসল কাটলে তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চাঁদগ্রাম মধ্যপাড়া গ্রামে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বংশগত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ডল বংশের সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল নিহত হন।
প্রিন্ট