ঢাকা , মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সালথায় তালাকের পরে তরুনীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ

প্রধান অভিযুক্ত ধর্ষক মো. ফুয়াদ শেখ।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ২২ বছর বয়সী এক সন্তানের জননীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তালাক দিয়ে ফের তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় আদালত মামলা হয়েছে, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নির্দেশ নিয়েছেন।

এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত যুবকের নাম মো. ফুয়াদ শেখ (২৪)। তিনি উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহ প্রতাব গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শাহজান শেখের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার ২৪ মে এক সন্তানের মা ওই নারী বাদী হয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ফুয়াদ শেখ এবং তার চার সহযোগি সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)।

ধর্ষিতা ওই নারীর মা জানায়, বছর পাঁচেক আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার কাজলী গ্রামের বাসিন্দা এক এনজিও কর্মীর সাথে। বিয়ের পর তাদের সুখের সংসার চলছিল। আমার মেয়ের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো ফুয়াদ শেখ। একপর্যায়ে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে। আনুমানিক দেড় মাস আগে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমার মেয়ে স্বামীকে তালাক দেয়। পরে ফুয়াদ আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই গত ১০ মার্চ তাকে তালাক দেয় ফুয়াদ।

আরও পড়ুনঃ প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সালথা থানার ওসির সংবাদ সম্মেলন

গত ১২ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় আমার মেয়েকে বাড়ির পাশে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রবাসে তুলে নিয়ে যায় ফুয়াদ শেখ ও তার সহযোগি সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)। পরে ফরিদপুর শহরের মহা বিদ্যালয়ের পাশে থাকা জাকিরের বাসায় আটকে রেখে টানা ৮ দিন একাধিকবার ধর্ষণ করে ফুয়াদ । এতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাটি নিয়ে আমার মেয়ে মামলা করতে চাইলে ফুয়াদ তার সহযোগিদের বাসায় ডেকে নিয়ে ১৯ মার্চ রাতে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। শুধু ধর্ষণ নয়-তাকে নির্যাতন ও পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পরদিন ২০ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়। তখন বাড়ির লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই নারীর মা অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামীরা আমার স্বামী ও সন্তানদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছেন। এমন কি আমাদের জমির পেঁয়াজও উঠাতে দিচ্ছে না তারা।

এবিষয় অভিযুক্ত আসামীদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার ফুয়াদ শেখের বাবা ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখ বলেন- ঘটনাটি সাজানো নাটক। আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই নারীকে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর আবার তালাক দিয়ে দিয়েছে। তালাকের পর নতুন করে কোন ঘটনা ঘটেনি।

এ মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশিদ বলেন, ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ নিদেয়েছেন। মামলার পরবর্তি তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ মে।

ফরিদপুর পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা আমরা এখনও হাতে পাইনি। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা পাওযার পর তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

সালথায় তালাকের পরে তরুনীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ

আপডেট টাইম : ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ মার্চ ২০২২

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ২২ বছর বয়সী এক সন্তানের জননীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তালাক দিয়ে ফের তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় আদালত মামলা হয়েছে, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নির্দেশ নিয়েছেন।

এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত যুবকের নাম মো. ফুয়াদ শেখ (২৪)। তিনি উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহ প্রতাব গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শাহজান শেখের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার ২৪ মে এক সন্তানের মা ওই নারী বাদী হয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ফুয়াদ শেখ এবং তার চার সহযোগি সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)।

ধর্ষিতা ওই নারীর মা জানায়, বছর পাঁচেক আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার কাজলী গ্রামের বাসিন্দা এক এনজিও কর্মীর সাথে। বিয়ের পর তাদের সুখের সংসার চলছিল। আমার মেয়ের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো ফুয়াদ শেখ। একপর্যায়ে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে। আনুমানিক দেড় মাস আগে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমার মেয়ে স্বামীকে তালাক দেয়। পরে ফুয়াদ আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই গত ১০ মার্চ তাকে তালাক দেয় ফুয়াদ।

আরও পড়ুনঃ প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সালথা থানার ওসির সংবাদ সম্মেলন

গত ১২ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় আমার মেয়েকে বাড়ির পাশে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রবাসে তুলে নিয়ে যায় ফুয়াদ শেখ ও তার সহযোগি সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)। পরে ফরিদপুর শহরের মহা বিদ্যালয়ের পাশে থাকা জাকিরের বাসায় আটকে রেখে টানা ৮ দিন একাধিকবার ধর্ষণ করে ফুয়াদ । এতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাটি নিয়ে আমার মেয়ে মামলা করতে চাইলে ফুয়াদ তার সহযোগিদের বাসায় ডেকে নিয়ে ১৯ মার্চ রাতে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। শুধু ধর্ষণ নয়-তাকে নির্যাতন ও পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পরদিন ২০ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়। তখন বাড়ির লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই নারীর মা অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামীরা আমার স্বামী ও সন্তানদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছেন। এমন কি আমাদের জমির পেঁয়াজও উঠাতে দিচ্ছে না তারা।

এবিষয় অভিযুক্ত আসামীদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার ফুয়াদ শেখের বাবা ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখ বলেন- ঘটনাটি সাজানো নাটক। আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই নারীকে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর আবার তালাক দিয়ে দিয়েছে। তালাকের পর নতুন করে কোন ঘটনা ঘটেনি।

এ মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশিদ বলেন, ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ নিদেয়েছেন। মামলার পরবর্তি তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ মে।

ফরিদপুর পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা আমরা এখনও হাতে পাইনি। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা পাওযার পর তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।