ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় প্রধান শিক্ষককে জুতা ও ঝাড়ু পেটা করে অবাঞ্চিত ঘোষণা

সকাল থেকেই খাতা কলমের পরিবর্তে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ঝাড়ু ও লাল কার্ড এবং একটি ব্যানার নিয়ে বিদ্যালয়ের গেটে শিক্ষার্থীরা। অপেক্ষা প্রধান শিক্ষকের। একে একে আশেপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসে জড়ো হতে থাকে।
বেলা ১১টায় প্রধান শিক্ষক এলেন। তবে তিনি এলেন থানা পুলিশের পুলিশ ভ্যানে। সঙ্গে তার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরাও এলেন। হঠাৎ অভিভাবকরা স্লোগান দিতে লাগলো এই প্রধান শিক্ষক চান না। শিক্ষার্থী ও তাদের মায়েরা অবস্থান করছিল বিদ্যালয়ের গেটের সামনে। ঝাড়ু ও জুতা হাতে নিয়ে। পুলিশ পাহারায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের কাছে যেতেই অভিভাবক ও ছাত্রীরা তার ওপরে গণহারে জুতা ও ঝাড়ু দিয়ে মারতে থাকে। তখন পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে তার কক্ষে নিয়ে যান।

ঘটনাটি ঘটে বুধবার (০২ জানুয়ারি) কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তবে, কেনইবা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের ওপরে এমনভাবে চড়াও হলেন বিষয়টি পরিস্কার করে দিলেন শিক্ষার্থীরা।

পরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলীর বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করে ওই শিক্ষককে অবাঞ্চিত করার ঘোষণার দাবি করেন তারা।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীর বাবা মো. আজিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে ব্যবসা করছেন। যেসব শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান, তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। অভিভাবকদের কোন কথায় শোনা হয় না। এখানে প্রতিনিয়ত মাদকের কারবার চলে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিদ্যালয় বোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে করোনাকীলন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি, অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি নিয়েছেন। আমরা বেশিরভাগই গরীব মানুষ। কেউ টাকা দিতে না পারলে তাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। সেই সঙ্গে আবার ১০০০ টাকা দিতে হয় পাস করানোর জন্য। দেশটা মগের মগের মুল্লুক নাকি? যে উনি যা বলবেন তাই হবে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সম্প্রতি নির্বাচন না দিয়েই নিজের মনোনীতদের নাম প্রকাশ করে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ গঠন করেছেন। যাতে তার এ অনিয়ম আরো চলতে থাকে।

২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এমন এক ছাত্রের মা অভিযোগ করে বলেন, এবার ১১টা বিয়ষের ওপরে ফরম ফিলাপ করতে হয়েছে। কিন্তু শুনেছি টাকা নাকি বোর্ড থেকে ফেরত দেওয়ার কথা, কিন্তু তা পায়নি। এই বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে পড়াতে হলে বাদে বাদেই দিতে হয় টাকা।

শারিরিকভাবে অসুস্থ এক নারী অভিভাবক অভিযোগ করেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ আছি। আমি স্কুলের ১২ মাসের বেতন দিতে পারিনি। ওষুধ কেনার কারণে। আমি স্কুলে এসে অর্ধেক বেতন দিয়েছি। এবং বাকিটা কিছুদিন পরে দিবো বলেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হল থেকে আমার মেয়েকে বের করে দেওয়া হয়।

পাখি ভ্যান চালক ইউসুফ আলীর মেয়ে পড়েন এই বিদ্যালয়ে। তিনিও অভিযোগ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে খাই। দুই এক মাসের বেতন দিতে না পারলে স্কুলে আর রাখে না। স্কুল থেকে বের করে দেয়। এমন শিক্ষক আমরা চাই না। যে মানুষের কষ্ট বোঝে না।

অভিযোগ করে আরেকজন নারী অভিভাবক বলেন, স্কুলে ভর্তি হতে গেলে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা লাগে। আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা দিবো কি করে। আর স্যারদের কাছে না পড়লে ফেল করিয়ে দেয়। আমরা এর বিচার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানায়, এখানে যারা টাকা দিতে পারে তারা পাস করে। ইচ্ছা করে ফেল করিয়ে দিয়ে পাস করাতে টাকা নেওয়া হয়। আর স্যারদের কাছে না প্রাইভেট পড়লে তাকে ফেল করানো হয়। এটা কোনো বিদ্যালয়ের নিয়ম হতে পারে না।

এদিকে বিদ্যালয়ের নতুন ম্যানেজিং কমিটির করা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা।

অভিভাকদের অভিযোগ, একাধিক প্রার্থীর কাছে ফরম বিক্রি করলেও অদৃশ্য কারণে নির্বাচন না করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা যে অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা। আর আমি রাজনৈতিক চাপে পড়ে এভাবে গোপনে কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমি নিরূপায় হয়ে এ কাজ করেছি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে তার কক্ষে হেফাজতে রাখে। পরে আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। ঘটনায় কোনো অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় প্রধান শিক্ষককে জুতা ও ঝাড়ু পেটা করে অবাঞ্চিত ঘোষণা

আপডেট টাইম : ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

সকাল থেকেই খাতা কলমের পরিবর্তে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ঝাড়ু ও লাল কার্ড এবং একটি ব্যানার নিয়ে বিদ্যালয়ের গেটে শিক্ষার্থীরা। অপেক্ষা প্রধান শিক্ষকের। একে একে আশেপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসে জড়ো হতে থাকে।
বেলা ১১টায় প্রধান শিক্ষক এলেন। তবে তিনি এলেন থানা পুলিশের পুলিশ ভ্যানে। সঙ্গে তার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরাও এলেন। হঠাৎ অভিভাবকরা স্লোগান দিতে লাগলো এই প্রধান শিক্ষক চান না। শিক্ষার্থী ও তাদের মায়েরা অবস্থান করছিল বিদ্যালয়ের গেটের সামনে। ঝাড়ু ও জুতা হাতে নিয়ে। পুলিশ পাহারায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের কাছে যেতেই অভিভাবক ও ছাত্রীরা তার ওপরে গণহারে জুতা ও ঝাড়ু দিয়ে মারতে থাকে। তখন পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে তার কক্ষে নিয়ে যান।

ঘটনাটি ঘটে বুধবার (০২ জানুয়ারি) কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তবে, কেনইবা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের ওপরে এমনভাবে চড়াও হলেন বিষয়টি পরিস্কার করে দিলেন শিক্ষার্থীরা।

পরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলীর বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করে ওই শিক্ষককে অবাঞ্চিত করার ঘোষণার দাবি করেন তারা।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীর বাবা মো. আজিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে ব্যবসা করছেন। যেসব শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান, তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। অভিভাবকদের কোন কথায় শোনা হয় না। এখানে প্রতিনিয়ত মাদকের কারবার চলে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিদ্যালয় বোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে করোনাকীলন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি, অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি নিয়েছেন। আমরা বেশিরভাগই গরীব মানুষ। কেউ টাকা দিতে না পারলে তাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। সেই সঙ্গে আবার ১০০০ টাকা দিতে হয় পাস করানোর জন্য। দেশটা মগের মগের মুল্লুক নাকি? যে উনি যা বলবেন তাই হবে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সম্প্রতি নির্বাচন না দিয়েই নিজের মনোনীতদের নাম প্রকাশ করে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ গঠন করেছেন। যাতে তার এ অনিয়ম আরো চলতে থাকে।

২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এমন এক ছাত্রের মা অভিযোগ করে বলেন, এবার ১১টা বিয়ষের ওপরে ফরম ফিলাপ করতে হয়েছে। কিন্তু শুনেছি টাকা নাকি বোর্ড থেকে ফেরত দেওয়ার কথা, কিন্তু তা পায়নি। এই বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে পড়াতে হলে বাদে বাদেই দিতে হয় টাকা।

শারিরিকভাবে অসুস্থ এক নারী অভিভাবক অভিযোগ করেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ আছি। আমি স্কুলের ১২ মাসের বেতন দিতে পারিনি। ওষুধ কেনার কারণে। আমি স্কুলে এসে অর্ধেক বেতন দিয়েছি। এবং বাকিটা কিছুদিন পরে দিবো বলেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হল থেকে আমার মেয়েকে বের করে দেওয়া হয়।

পাখি ভ্যান চালক ইউসুফ আলীর মেয়ে পড়েন এই বিদ্যালয়ে। তিনিও অভিযোগ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে খাই। দুই এক মাসের বেতন দিতে না পারলে স্কুলে আর রাখে না। স্কুল থেকে বের করে দেয়। এমন শিক্ষক আমরা চাই না। যে মানুষের কষ্ট বোঝে না।

অভিযোগ করে আরেকজন নারী অভিভাবক বলেন, স্কুলে ভর্তি হতে গেলে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা লাগে। আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা দিবো কি করে। আর স্যারদের কাছে না পড়লে ফেল করিয়ে দেয়। আমরা এর বিচার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানায়, এখানে যারা টাকা দিতে পারে তারা পাস করে। ইচ্ছা করে ফেল করিয়ে দিয়ে পাস করাতে টাকা নেওয়া হয়। আর স্যারদের কাছে না প্রাইভেট পড়লে তাকে ফেল করানো হয়। এটা কোনো বিদ্যালয়ের নিয়ম হতে পারে না।

এদিকে বিদ্যালয়ের নতুন ম্যানেজিং কমিটির করা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা।

অভিভাকদের অভিযোগ, একাধিক প্রার্থীর কাছে ফরম বিক্রি করলেও অদৃশ্য কারণে নির্বাচন না করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা যে অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা। আর আমি রাজনৈতিক চাপে পড়ে এভাবে গোপনে কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমি নিরূপায় হয়ে এ কাজ করেছি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে তার কক্ষে হেফাজতে রাখে। পরে আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। ঘটনায় কোনো অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।