বিরামহীন বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদে’র প্রভাবে অঝোর ধারায় টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে ধান চাষিদের। মাঠের অধিকাংশ ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তড়িঘড়ি করে ধান কেটে বাড়িতে আনলে তার কতটুকু ঘরে যাবে, তা নিয়ে কৃষকের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
গত শনিবার বিকেল থেকে শুরু হয় একটানা বৃষ্টি। উপজেলার প্রত্যন্ত নিম্নাঞ্চল ফসলের মাঠে এখন জলাবদ্ধতা। অনেকের কাটা ধান এখনও পড়ে আছে পানির নিচে। পেকে যাওয়া কাটা ধান ঘরে তুলতে না পারায় অধিকাংশ কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।একটানা তিন দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির পাকা আমন ধান, শতাধিক সরিষার প্রদর্শনী ক্ষেত ও শাকসবজি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃষকরা দাবি করছেন, প্রায় প্রতিটি গ্রামের মাঠগুলোতে বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতের ধান পড়ে আছে। ধান ঘরে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন তারা। তলিয়ে যাওয়া ধানের কতটুকু ঘরে আসবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।তবে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলছে, মাত্র এক হাজার থেকে এক হাজার ১১০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ এরই মধ্যে ৯ হাজার ১৯০ হেক্টর জমির ধান কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। মাত্র দুই হাজার হেক্টর জমির কাটা ধান মাঠে থাকায় টানা বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হরিণাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক হালিম মোল্যা, রিয়াজুল বিশ্বাস, সালাম মোল্যা, উজির মৃধা ও মেহেদী হাসান রাব্বি জানান, এখনও অনেক ধান মাঠে পড়ে রয়েছে। তলিয়ে গেছে পানিতে। তার কতটুকু ঘরে তুলে আনতে পারবেন জানেন না। এ বছর তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তাদের সর্বনাশ হয়ে গেল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার আট ইউনিয়নে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ও বোনা আমন জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে। অধিকাংশ পাকা ধান কাটা ও ঘরে তোলা প্রায় শেষ। মাত্র এক হাজার থেকে এক হাজার ১০ হেক্টর জমির ধান কেটে বিচালি করে রাখায় সেটা পানিতে ডুবে গেছে। তবে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তা দিতে তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও সরকারি সহায়তা দিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ বছরের বৈরী আবহাওয়ায় বৃষ্টিতে আগাম আমন আবাদে চোট খেয়েছিলেন কৃষকরা। নাবিতেও সেই বৈরী আবহাওয়ার কারণেই আবার চোট খেল। শেষ মুহূর্তে এসে গত ৩ দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের মাঠের পর মাঠ আমন ধান পানিতে ডুবে বেশ ক্ষতি হয়েছে। এর আগেও আগাম ধানে বেশ ক্ষতি হলেও কৃষকরা তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠেছিলেন। তবে এবারের চলমান ক্ষতি আর কাটিয়ে ওঠার নয়।
প্রিন্ট