দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন। ভোট গ্রহনের দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ততই শঙ্কা-উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ-আতঙ্ক বাড়ছে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রাথী এবং ভোটারদের মাঝে। সম্প্রতি উপজেলার তালমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী রনজিত কুমার মন্ডলের সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেনের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙ্চুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
রামনগর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী কাইমুদ্দিন মন্ডলের নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের নৌকার সমর্থকরা নৌকার শ্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাম-উল ইসলামের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাঙ্চুর করে এবং লুটপাট করে। কাইচাইল ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী কবির হোসেন ঠান্ডু প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও আরো কয়েকটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার কর্মীদের প্রচার কাজে বাধা প্রদান, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
তালমা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়া বলেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা আমাকে এবং আমার কর্মীদের নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা করতে বাধা দিচ্ছে। যেখানে সেখানে হামলা করছে। তাছাড়া বহিরাগত মানুষের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পেযেছে। নৌকার সমর্থকেরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় কিছু গুজব রটাচ্ছে। এতে করে নতুন কোনো কৌশলে ভোট ডাকাতির আশঙ্কায় আছি।
ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মুরাদ হোসেন বলেন, একটি চক্র ভোট কেটে নেয়ার পায়তারা করছে। নৌকার সমর্থকেরা ভোটারদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
ডাঙ্গী ইউনিয়নের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সরদার সাইফুজ্জামান বুলবুল বলেন, নৌকা প্রার্থীর সমর্থেকেরা এলাকায় মাঝে মাঝেই লাঠি মিছিল করছে। ইউনিয়নের রাস্তার মোড়ে মোড়ে এরা লাঠি নিয়ে বসে থাকে। আমি ও আমার কর্মীরা প্রচার চালাতে গেলে তারা হামলা চালাচ্ছে। আমি সাধারণ ভোটারদের কাছে যেতে পারছি না।
চরযোশরদী ইউনিয়নের প্রবীন ভোটার আলতাব মাতুব্বর বলেন, অনেক ভোট দিয়েছি। এবার ভোট দিতে পারবো কিনা জানি না। বাতাস ভালো মনে হচ্ছে না। তালমা ইউনিয়নের নবীন ভোটার মহিবুল্লাহ বলেন, আমার খুব আনন্দ লাগছে আমি এবার প্রথম ভোট দিবো। কিন্তু ভোটের মাঠে যে উশৃঙ্খলাপনা দেখছি তাতে ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছি।
এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করায় কিছুটা আশার আলো দেখছেন স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ভোটাররা। নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে এরই মধ্যে তালমা, ডাঙ্গী, লস্করদিয়া, চরযশোরদী, কোদালিয়া শহীদনগর, ফুলসুতী ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীদের শোকজ করেছেন দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসার। তার পরেও নির্ভয়ে নির্বাচনি প্রচার করতে পারছেন না স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিভিন্ন ইউনিয়নে হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়, সুষ্ঠু ভোট ও নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের পরিবেশ থাকবে কিনা, এ ব্যাপারে ভোটাররা রয়েছেন শঙ্কা-উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ-আতঙ্কে।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নগরকান্দায় একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চান। তার পরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। নির্বাচনি এলাকায় বহিরাগত মানুষের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন সময়ে এলাকায় কিছু গুজব রটায়, নতুন কোনো কৌশলে ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
নগরকান্দা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাড়িঁয়েছেন শক্ত অবস্থানে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সব প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
ইতি মধ্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বিপিএম সেবা), জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানে জেলা প্রশাসক বলেছেন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নগরকান্দা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ ভোটারেরা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনী পরিবেশ আরো নিরাপদ করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিবেন বলে দাবী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের।
প্রিন্ট