ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল ১১টায় হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। গৃহবধুর স্বামীর পরিবার এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বললেও মেয়ের পরিবার তা মানছে না। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) বিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে।
থানা ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, গুনবহা ইউনিয়নের বাগুয়ান গ্রামের সৌদি প্রবাসী নিত্য অধিকারীর ছেলে রনি অধিকারীর (৩৪) সাথে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ডা. মোহন অধিকারীর মেয়ে সুমি অধিকারীর (২৭) প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে হয়। রনি ও সুমি দম্পতির রাহুল অধিকারী নামে সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বাবা প্রবাসে থাকায় রনি বেপরোয়া জীবন যাপন করতেন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে ওইদিন সকালে বসতঘরের বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে সুমি আত্মহত্যা করেছেন বলে রনির পরিবার থেকে দাবী করা হয়েছে।
রনির চাচা চিত্ত অধিকারী জানান, প্রতিবেশী গৃহবধু রিতা পাল কালিপূজার টাকা আনার জন্য সকালে ওই বাড়ীতে গেলে তাঁর ভাতিজার স্ত্রী সুমিকে ঘরের বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান । এরপর পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে সুমিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পারিবারিক কলহের জের ধরে সুমি আত্মহত্যা করেছেন বলে আমার ধারণা, তবে আমার ভাতিজার চলাফেরাও বেপরোয়া ছিলো।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জ্ঞানব্রত শুভ্র জানান, ওই গৃহবধুকে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এরপর পুলিশ এসে হাসপাতাল থেকে গৃহবধু সুমির লাশ নিয়ে গেছে।
সুমির বাবা ডা. মোহন অধিকারী বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে তাঁর স্বামীর প্রতিনিয়ত নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করতে ছিলো। আর আমরা জামাইয়ের যেকোন আবদার মেটাতে তৎপর থাকতাম। আমি মেয়ের সুখের জন্য প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে ১০ হাজার টাকা দিতাম মেয়ে ও নাতীর খরচের জন্য। এছেড়াও পোষ্ট অফিসে ১০ লক্ষ টাকার এফডিয়ার করে দিয়েছি, যার নমীনী লম্পট জামাই রনি।কিন্তু তার পরেও জামাই আমার মেয়েটিকে বাঁচতে দিলো না। জামাই বিদেশ থেকে আসার পর থেকে আমার মেয়েকে শুধু টাকার জন্য চাপ দিতো। আমার ধারনা ওরা পরিকল্পিত ভাবে এফডিয়ারের ১০ লক্ষ টাকার জন্য আমার মেয়েকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে।
সুমির চাচা প্রহল্লাদ অধিকারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাতিজির মৃত্যুর ঘটনায় থানার মধ্যে চিৎকার করছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, এর আগে ওই গ্রামের এক গৃহবধুকে জামাই রনি বাগিয়ে নিয়ে যায়। সে ঘটনায় আমরা ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে সে যাত্রায় ভাতিজির ঘর রক্ষা করি। তারপরও ভাতিজিকে রনির বাড়িতে রেখেছি যে, সে ভালো হয় কিনা। চরিত্রহীন জামাই আমার ভাতিজিকে মেরে ঝুঁলিয়ে রেখেছে। সুমি আত্মহত্যা করতে পারে না। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক মামুন অর রশিদ জানান, গৃহবধু সুমির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী রনি অধিকারী বাদি হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট