কারেন্ট জালের থেকেও ভয়ংকর এক জালের নাম “চায়না দুয়ারি”। নামটা যতনা সুন্দর ততটাই ভয়ংকর এই জাল। শুধু দেশী জাতীয় ছোট মাছ নয় বরং এই জালে আটকা পড়ে সকল প্রজাতির জলজ জীব। স্বল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প পরিশ্রমে অধিক আয়ের উৎস হওয়ার জেলেদের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ‘চায়না দুয়ারি’ জাল দিয়ে অবাধে চলছে মাছ শিকার। নদী-খাল-বিলে এসব ফাঁদ পেতে ব্যাপক হারে ছোট মাছ শিকার করছে জেলেরা। উপজেলার সর্বত্র নতুন ফাঁদ চায়না দুয়ারি বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের বিলুপ্তির শঙ্কা প্রকাশ করছেন সচেতনমহল। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে জোড়ালো কোন ভূমিকা নেই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে চায়না দুয়ারি জালের বিরুদ্ধে একদিন অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এরপর আর কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
বোয়ালমারী পৌর বাজারসহ উপজেলার সমস্ত বাজারেই চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে ধরা ছোট ছোট মাছে সয়লাব। ব্যাপক হারে এই ফাঁদ ব্যবহার করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ফাঁদ প্রতিরোধ করতে এবং জেলেদের নিরুসাহিত করতে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জেলার সকল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বোয়ালমারী উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর এ ব্যাপারে নির্বিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভুজ আকৃতির কাঠোমোর চারপাশে ‘চায়না জাল’ দিয়ে ঘিরে এই চায়না দুয়ারি নতুন ফাঁদ তৈরি করা। ক্ষেত্রভেদে ‘চায়না দুয়ারি’ ৫২ হাত আবার ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ফাঁদ দিয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কুমার নদ ও বারাসিয়া নদীসহ বিভিন্ন বিল-বাওরে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির জেলে।
সরেজমিনে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন বাজারে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা বিক্রি হচ্ছে; যেগুলো ‘চায়না দুয়ারি’ দিয়ে ধরা বলে স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয়রা জানান, এই ফাঁদ বসালে নদীর পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়; এর জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট-বড় কোনো মাছ বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের সুতালিয়া গ্রামের সৌখিন মৎস্য শিকারী বিভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যেকোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার যেকোন ছোট-বড় মাছ ঢুকলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রশাসনের চোখের সামনে এ ভাবে নীতিবিরুদ্ধ কাজটি চলে আসছে নিরন্তর। এতে প্রকৃতির ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমন বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
মধুমতি নদী থেকে বেরিয়ে আসা এ পানিতে রয়েছে মাছের ডিম ও চারা পোনা। ক্ষুদ্রাকৃতির কোন মাছের পক্ষেও সম্ভব নয় এ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলে আসলেও প্রশাসনের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। অবৈধ চায়না দুয়ারি জালে রেনু পোনাও রেহাই পাচ্ছে না।
উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. নাজমুল হক বলেন, এই ‘চায়না দুয়ারি’ এসে আমাদের দেশীয় মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন দেশীয় মাছ আমরা সহজে পাব না।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, আমরা প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ রকম কোথাও থাকলে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রিন্ট