ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদী ভাঙনে উপজেলার পশ্চিম চরনারানদিয়া, চরপাঁচুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজড়া চরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতি নদীর কুল ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে কোন সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে উপজেলার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বক্তব্যের পরে শিক্ষার্থীরা খুশি হলেও উপজেলার চারটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খুশির পরিবর্তে আতঙ্কে দিন পার করছে।এ অবস্থায় নির্ধারিত দিনে ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয় ৪৬ নং পশ্চিম চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদী থেকে মাত্র তিন হাত দুরে রয়েছে স্কুল ঘর। বর্তমানে ১০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেখানে পাকা একতলা ভবনটি রয়েছে জরাজীর্ণ হয়ে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কয়েকটি বিমের মধ্যে ফাটলও ধরেছে। অনেক স্থানে ছাদের মরিচা পড়া রডও বেরিয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব খাতুন জানান, নদী ভাঙনে বিদ্যালয়ের যে মাঠ ছিল সেটা ভেঙে গেছে। স্কুল ঘর থেকে মাত্র তিন হাত দুরে রয়েছে। ওখানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না নিলে দিব্যালয়টি নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। বিদ্যালয়েল যে ভবন রয়েছে সেটা পুরানো হয়ে গেছে। নতুন ভবন নির্মাণসহ নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এভাবে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,চর পাঁচুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি থেকে নদী রয়েছে মাত্র ১০ গজ দুরে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৮৯জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে বিদ্যালয়টি।
পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী থেকে প্রায় ৫০ হাত দুরে রয়েছে। বিদ্যালয়ে ১৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চর পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মাত্র ৩৫ হাত দুরে রয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৭২জন।
বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক বৃন্দরা জানান, ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান না হলে বিদ্যালয়গুলো যে কোন সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
চরনারানদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান জানান, নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে একাধিক বসতঘর, হাজার একরফসলি জমি। বসতবাড়ি ও জমি হারিয়েএই অঞ্চলের অনেক পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থপনা। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে আমাদের গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রীতি কণা বিশ্বাস বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি আলফাডাঙ্গায় চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।এর মধ্যে পশ্চিম চরনারানদিয়া স্কুলটি খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
ইউএনও তৌহিদ এলাহী জানান, নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নদীতে বিদ্যালয়ের ভবন বিলীন হয়ে গেলে দ্রæত অন্য কোন স্থানে সেটি পুনঃস্থাপন করা হবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বে থাকা বোয়ালমারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ( এসডিই) সন্তোষ কর্মকার জনান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
প্রিন্ট