ঢাকা , রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শ্বাশুড়িকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ জামাইয়ের বিরুদ্ধে Logo পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ফরিদপুর সদর উপজেলা আসন্ন নির্বাচনে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা সভা Logo নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যুবক অনুপ পাইন এর মৃত্যু Logo শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার জন্য যুক্তরাজ্যর প্রতি আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর Logo কালুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রথম নবজাতকের ঘরে ফেরা Logo ভাঙ্গার আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে চান মোখলেছুর রহমান সুমন Logo ইতালিতে ‘কমিউনিটি মিট উইথ অ্যাম্বাসি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত Logo নরসিংদী সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুপেয় পানির বুথ স্থাপন Logo রেলপাতের তাপমাত্রা ছড়িয়ে যাচ্ছে ৫৭ ডিগ্রি, বেঁকে যাচ্ছে লাইন Logo খরায় পুড়া পানচাষিদের সাথে সচেতনতামূলক সভা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

দিনে পাথর সংগ্রহ, রাতে চা পাতা তোলেন পঞ্চগড়ের শ্রমিকেরা

গভীর রাতে ছোট ছোট আলো নড়াচড়া করছে। দূর থেকে হঠাৎ কেউ দেখলে ভূতপ্রেত ভেবে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। কল্পনায় যারা ভূতপ্রেত ভাবছেন, এঁরা মূলত রাতের চা শ্রমিক। ঘড়ির কাটায় রাত তখন ২টা মাথায় টর্চ লাইট বেঁধে চা বাগানে নেমে পড়েন তাঁরা চা পাতা সংগ্রহ করতে। তাঁরাই আবার দিনের বেলা হয়ে যান পাথর শ্রমিক। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের পাথর তোলার বিভিন্ন এলাকা এবং চা বাগানগুলোতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। দিনের বেলায় পাথর তোলার কাজ এবং রাতে দল বেঁধে চা সংগ্রহ করছেন তাঁরা। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক দেখা যায়।
চা বাগানের একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় দিনের বেলায় সূর্যের কড়া তাপ সয়ে তাঁদের চা পাতা তোলার কষ্টসাধ্য কাজ করতে হতো। এতে যেমন তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হতো, তেমনি শুকিয়ে যেত চা পাতা। কারখানার মালিকেরাও নিতে চাইতেন না শুকনো পাতা। বছরখানিক ধরে শ্রমিকদের মধ্যরাত থেকে পাতা তোলার কাজ শুরু হয়। দিনদিন বাড়তে থাকে রাতের চা শ্রমিকদের সংখ্যা। প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তোলার বিনিময়ে বাগান মালিকেরা শ্রমিকদের মজুরি দেন তিন টাকা। একজন রাতের শ্রমিক প্রতিদিন পাতা তুলতে পারেন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি। সেই হিসাবে তাঁদের দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানা যায়।
শ্রমিকেরা আরও জানান, রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন বিছানা থেকে। তারপর হাতে চা পাতা কাটার চাকু আর মাথায় টর্চলাইট বা মোবাইলের লাইট বেঁধে নেমে পড়েন চা বাগানে। সকাল ৮ থেকে ৯টার মধ্যেই পাতা তুলে কারখানায় পাঠানোর পর বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এ ছাড়া পরদিন দিনের বেলা আবার অন্য কাজ করেন বলে জানান তাঁরা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার রাতের চা শ্রমিক বাবুল হোসেন বলেন, আমি বছরখানিক ধরে রাতে চা পাতা তোলার কাজ করছি। রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করি আমরা। এতে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি পাই। আবার দিনের বেলায় অন্য কাজ করতে পারি। এই দুইভাবে কাজ করে আমাদের সংসার ভালো চলছে।’ ফারুক ইসলাম নামে আরেকজন চা শ্রমিক বলেন, আগে দিনে চা পাতা তোলার কাজ করতাম। কিন্তু প্রচ- রোদের কারণে বেশিক্ষণ তোলা যেত না। বেশি পাতা তুলতেও পারতাম না। রাতে পরিবেশ শান্ত থাকে, রোদের ভয় নাই, তাই রাতে চা পাতা তোলা শুরু করি। মাথার মধ্যে লাইট বেঁধে নিয়ে কাজ শুরু করি। রাতে দ্রুত ও আরামে কাজ করা যায়। তেঁতুলিয়া উপজেলার সফল চা বাগানের মালিক কাজী আনিছুর রহমান জানান, মূলত যাঁরা এখন চা বাগানে কাজ করছেন। তাঁরা আগে পাথর সংগ্রহের কাজ করতেন। পাথর সংগ্রহে মজুরি বেশি। এসব শ্রমিকই এখন রাতের আঁধারে চা প্লাকিংয়ের কাজও করছেন। আবার দিনে তুলছেন মহানন্দা, করতোয়া নদীর পাথর। এভাবে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, পঞ্চগড়ের চা শিল্পে চাষিদের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁরা আগে অলস সময় কাটাতেন। তাঁদের কোনো কাজ ছিল না। এখন চা বাগানে কাজ করে তাঁরা সচ্ছল হয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা রাতে চা পাতা তোলার কাজ করছেন, তাঁরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা রাতে চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করছেন এবং দিনের বেলায় অন্য কাজ করছেন। এই দ্বৈত আয়ে সংসার ভালো চলছে তাঁদের।
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্বাশুড়িকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ জামাইয়ের বিরুদ্ধে

error: Content is protected !!

দিনে পাথর সংগ্রহ, রাতে চা পাতা তোলেন পঞ্চগড়ের শ্রমিকেরা

আপডেট টাইম : ০৪:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
গভীর রাতে ছোট ছোট আলো নড়াচড়া করছে। দূর থেকে হঠাৎ কেউ দেখলে ভূতপ্রেত ভেবে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। কল্পনায় যারা ভূতপ্রেত ভাবছেন, এঁরা মূলত রাতের চা শ্রমিক। ঘড়ির কাটায় রাত তখন ২টা মাথায় টর্চ লাইট বেঁধে চা বাগানে নেমে পড়েন তাঁরা চা পাতা সংগ্রহ করতে। তাঁরাই আবার দিনের বেলা হয়ে যান পাথর শ্রমিক। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের পাথর তোলার বিভিন্ন এলাকা এবং চা বাগানগুলোতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। দিনের বেলায় পাথর তোলার কাজ এবং রাতে দল বেঁধে চা সংগ্রহ করছেন তাঁরা। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক দেখা যায়।
চা বাগানের একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় দিনের বেলায় সূর্যের কড়া তাপ সয়ে তাঁদের চা পাতা তোলার কষ্টসাধ্য কাজ করতে হতো। এতে যেমন তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হতো, তেমনি শুকিয়ে যেত চা পাতা। কারখানার মালিকেরাও নিতে চাইতেন না শুকনো পাতা। বছরখানিক ধরে শ্রমিকদের মধ্যরাত থেকে পাতা তোলার কাজ শুরু হয়। দিনদিন বাড়তে থাকে রাতের চা শ্রমিকদের সংখ্যা। প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তোলার বিনিময়ে বাগান মালিকেরা শ্রমিকদের মজুরি দেন তিন টাকা। একজন রাতের শ্রমিক প্রতিদিন পাতা তুলতে পারেন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি। সেই হিসাবে তাঁদের দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানা যায়।
শ্রমিকেরা আরও জানান, রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন বিছানা থেকে। তারপর হাতে চা পাতা কাটার চাকু আর মাথায় টর্চলাইট বা মোবাইলের লাইট বেঁধে নেমে পড়েন চা বাগানে। সকাল ৮ থেকে ৯টার মধ্যেই পাতা তুলে কারখানায় পাঠানোর পর বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এ ছাড়া পরদিন দিনের বেলা আবার অন্য কাজ করেন বলে জানান তাঁরা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার রাতের চা শ্রমিক বাবুল হোসেন বলেন, আমি বছরখানিক ধরে রাতে চা পাতা তোলার কাজ করছি। রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করি আমরা। এতে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি পাই। আবার দিনের বেলায় অন্য কাজ করতে পারি। এই দুইভাবে কাজ করে আমাদের সংসার ভালো চলছে।’ ফারুক ইসলাম নামে আরেকজন চা শ্রমিক বলেন, আগে দিনে চা পাতা তোলার কাজ করতাম। কিন্তু প্রচ- রোদের কারণে বেশিক্ষণ তোলা যেত না। বেশি পাতা তুলতেও পারতাম না। রাতে পরিবেশ শান্ত থাকে, রোদের ভয় নাই, তাই রাতে চা পাতা তোলা শুরু করি। মাথার মধ্যে লাইট বেঁধে নিয়ে কাজ শুরু করি। রাতে দ্রুত ও আরামে কাজ করা যায়। তেঁতুলিয়া উপজেলার সফল চা বাগানের মালিক কাজী আনিছুর রহমান জানান, মূলত যাঁরা এখন চা বাগানে কাজ করছেন। তাঁরা আগে পাথর সংগ্রহের কাজ করতেন। পাথর সংগ্রহে মজুরি বেশি। এসব শ্রমিকই এখন রাতের আঁধারে চা প্লাকিংয়ের কাজও করছেন। আবার দিনে তুলছেন মহানন্দা, করতোয়া নদীর পাথর। এভাবে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, পঞ্চগড়ের চা শিল্পে চাষিদের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁরা আগে অলস সময় কাটাতেন। তাঁদের কোনো কাজ ছিল না। এখন চা বাগানে কাজ করে তাঁরা সচ্ছল হয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা রাতে চা পাতা তোলার কাজ করছেন, তাঁরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা রাতে চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করছেন এবং দিনের বেলায় অন্য কাজ করছেন। এই দ্বৈত আয়ে সংসার ভালো চলছে তাঁদের।