পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। চারিদিকে পানি আর পানি। নদীতে ছোট ছোট নৌকা ভাসছে। বাড়িতে খাবার নেই। বন্যাদুর্গতরা ছোট নৌকায় এসে ত্রাণ গ্রহণ করছেন।
গত দুদিন ধরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে অভাবে পড়া মানুষদের খাবার পাবার এখন একমাত্র ভরসা এই ছোট নৌকা।
গত দুইদিন ধরে জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়ন রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারীর ১ হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তারা চাল, আটা, ডাল, তেল, লবণসহ শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট ছোট নৌকায় এসে ত্রাণ গ্রহণ করেন বন্যাদুর্গতরা।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সিরাজুল ইসলাম, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহমান, দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহীন খসরু, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে শনিবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে সরকারি ত্রাণ নিতে ছুটে আসেন বন্যাদুর্গত এলাকার নানা বয়সী নারী ও পুরুষেরা। জেলা প্রশাসক দুর্গত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ খবর নেন এবং তাদের হাতে ত্রাণের ব্যাগ তুলে দেন। তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় দুর্গতদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
আগের দিন শুক্রবার কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ বন্যাকবলিত রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের পানিবন্দি গ্রামগুলো পরিদর্শন করে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের ৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানানো হয়।
রোববার (২২ আগস্ট) রাতে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার মুঠোফোনে জানান, সরকারিভাবে বন্যায় ২৫ হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার প্রথম দিনে ১ হাজার মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে।
উল্লেখ্য, দৌলতপুর উপজেলায় বর্তমানে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামের অন্তত অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হাজার হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বহুগুণ। বন্যাকবলিত ইউনিয়ন দুটিতে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
প্রিন্ট