ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গাতে বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছেন পাটচাষিরা। এরই মধ্যে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এ বছর পাটের ভালো দাম পেয়ে চাষিরা খুশি হলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ জমির পাটই কেটে জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পর্যাপ্ত পানির অভাবে।

কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এবার আষাঢ় মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় এ অঞ্চলের ডোবা-নালা, খাল-বিলে পানি জমেনি খুব একটা। এ কারণে পাট জাগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনমতো পানি না পেয়ে জমি থেকে পাট কাটতে পারছেন না কৃষক।

বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চাটি গ্রামের পাটচাষি তারিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর পাটের দাম বেশি দেখে এ বছর সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে পারছি না। তার পরে এবার কাজের লোকের অনেক অভাব। একজন কৃষক এক বেলা কাজ করিয়ে ছয় শত টাকা দিতে হচ্ছে। তার পরেও লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

বানা ইউনিয়নের পাটচাষি তারা মিয়া বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। বাড়ির পাশে কাদাপানিতে কোনো রকম চুবিয়ে রেখেছি পাট। জানালেন, পাট কেটে ওই জমিতে এখন ধান লাগাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে পাট কেটে এখানে চুবিয়ে রাখছি। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।

পাচুড়িয়া ইউনিয়নের মাজেদুল ইসলাম বলেন, পাট কেটে সে জমিতে ধান আবাদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু পাট কাটতে না পেরে পরবর্তী ফসল আবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছি না। এদিকে জমি থেকে সময় মতো পাট কাটতে না পেরে জমিতেই মরে যাচ্ছে পাট। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সব এলাকার অবস্থা প্রায় একই ধরনের। কৃষকরা জানান, এ বছর রোগবালাই খুব একটা না থাকায় পাটের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবার পাটের দামও গত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় পাট চাষে লাভের আশা দেখছেন তারা।

উপজেলার বিভিন্ন যায়গায়কিছু জমির পাট এরই মধ্যে কেটে জাগ দিয়ে ঘরে তুলতে পেরেছেন অল্পকিছু কৃষক। তাদেরই একজন আরিফুজ্জামান বলেন, এবার পাটের ফলন ও দাম দুটোই ভালো হয়েছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আলফাডাঙ্গাতে এ বছর ৬৫৭০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। প্রতি মণ পাট বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, নিচু এলাকা গুলোতে সাধারণত পানির সমস্যা নেই এবং অনেকেই নদীর পানিতে পাট জাগ দেয়ার অভ্যাস রয়েছে, তবে কিছু উঁচু জমিতে পানির সমস্যা আছে যা কিছুদিনের শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি হলে সমস্যা অনেকাংশে দুর হয়ে যাবে। তবে কৃষি অফিসার কৃষকদের সঠিক পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার কথা বলেন এতে পাটের আশের মান ভালো থাকায় দাম বেশি পাওয়া যায়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা

আপডেট টাইম : ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২১
মোঃ ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ :

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গাতে বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছেন পাটচাষিরা। এরই মধ্যে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এ বছর পাটের ভালো দাম পেয়ে চাষিরা খুশি হলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ জমির পাটই কেটে জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পর্যাপ্ত পানির অভাবে।

কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এবার আষাঢ় মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় এ অঞ্চলের ডোবা-নালা, খাল-বিলে পানি জমেনি খুব একটা। এ কারণে পাট জাগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনমতো পানি না পেয়ে জমি থেকে পাট কাটতে পারছেন না কৃষক।

বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চাটি গ্রামের পাটচাষি তারিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর পাটের দাম বেশি দেখে এ বছর সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে পারছি না। তার পরে এবার কাজের লোকের অনেক অভাব। একজন কৃষক এক বেলা কাজ করিয়ে ছয় শত টাকা দিতে হচ্ছে। তার পরেও লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

বানা ইউনিয়নের পাটচাষি তারা মিয়া বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। বাড়ির পাশে কাদাপানিতে কোনো রকম চুবিয়ে রেখেছি পাট। জানালেন, পাট কেটে ওই জমিতে এখন ধান লাগাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে পাট কেটে এখানে চুবিয়ে রাখছি। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।

পাচুড়িয়া ইউনিয়নের মাজেদুল ইসলাম বলেন, পাট কেটে সে জমিতে ধান আবাদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু পাট কাটতে না পেরে পরবর্তী ফসল আবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছি না। এদিকে জমি থেকে সময় মতো পাট কাটতে না পেরে জমিতেই মরে যাচ্ছে পাট। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সব এলাকার অবস্থা প্রায় একই ধরনের। কৃষকরা জানান, এ বছর রোগবালাই খুব একটা না থাকায় পাটের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবার পাটের দামও গত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় পাট চাষে লাভের আশা দেখছেন তারা।

উপজেলার বিভিন্ন যায়গায়কিছু জমির পাট এরই মধ্যে কেটে জাগ দিয়ে ঘরে তুলতে পেরেছেন অল্পকিছু কৃষক। তাদেরই একজন আরিফুজ্জামান বলেন, এবার পাটের ফলন ও দাম দুটোই ভালো হয়েছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আলফাডাঙ্গাতে এ বছর ৬৫৭০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। প্রতি মণ পাট বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, নিচু এলাকা গুলোতে সাধারণত পানির সমস্যা নেই এবং অনেকেই নদীর পানিতে পাট জাগ দেয়ার অভ্যাস রয়েছে, তবে কিছু উঁচু জমিতে পানির সমস্যা আছে যা কিছুদিনের শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি হলে সমস্যা অনেকাংশে দুর হয়ে যাবে। তবে কৃষি অফিসার কৃষকদের সঠিক পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার কথা বলেন এতে পাটের আশের মান ভালো থাকায় দাম বেশি পাওয়া যায়।


প্রিন্ট