জেলার বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের পঁচামাগুরা গ্রামের ধর্ষক তরিকুল ইসলামের (২২) ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে নির্যাতিত পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পঁচামাগুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বনমালিপুর সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধনে নারী-পুরুষসহ তিন শতাধিক লোকজন অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ওই ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফিরোজা বেগম, ধর্ষিতার মা ইতি বেগম, বাবা হান্নান মোল্যা, ব্যবসায়ি মিলন মোল্যা, ছাত্রলীগ নেতা মারুফ হোসাইন, জয়নগর দাখিল মাদ্রাসার দপ্তরি শাহিদ খান প্রমুখ। এ সময় বক্তারা ধর্ষক তরিকুলের ফাঁসি দাবি করে অন্য আসামিদের সঠিক বিচার চেয়েছেন।
মানববন্ধনে ধর্ষিতার মা ইতি বেগম বলেন, ধর্ষক তরিকুল ও তার পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তারা মামলা করে টিকতে পারছেন না। ধর্ষকের পিতা বাকা মোল্যা, ভাই জুয়েলসহ তার লোকজন এর আগে মামলার বাদি নির্যাতিতা কিশোরীর মাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় সে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসপ্তাহ চিকিৎসা নেয়। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আসামিরা ধর্ষণ মামলা বাদিদের নানা ভাবে চাপ প্রয়োগসহ হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে রয়েছে। ধর্ষক তরিকুল এর আগে এলাকায় আরো ২-৩টি মেয়ের সাথে এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এলাকাবাসি অভিযোগ করেন।
মামলা ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের পঁচামাগুরা গ্রামের বাকা মোল্যার ছেলে তরিকুল ইসলাম প্রতিবেশি ছাত্রীকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রেমের প্রস্তাবসহ নানা ভাবে উত্যক্ত করতো। ওই কিশোরী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার জয়নগর বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। চলতি বছরের ৫ এপ্রিল বিকেলে ওই কিশোরীর বাড়ির পাশের বাগানে লাকড়ি আনতে গেলে লম্পট তরিকুল তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদি হয়ে গত পহেলা মে তরিকুল, তার ভাই জুয়েল মোল্যা (৩৫), বারিক মোল্যা (৩২), তরিকুলের বাবা বাকা মোল্যা (৬০) ও বারিক মোল্যার স্ত্রী সনিয়া বেগমকে (২৬) আসামি করে বোয়ালমারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। মামলা নম্বর-১। ওই মামলায় ধর্ষক তরিকুল বর্তমানে জেল হাজতে থাকলেও বাকি ৪ আসামি জামিনে থেকে বাদি ও বাদির পরিবারকে নির্যাতন করছে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় বাদির স্বামী থানায় আরো একটি মামলা করেছেন। মামল নম্বর-৭। এছাড়া থানায় তিনটি জিডিও করেছেন। কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক মো. শাহাদত হোসেন তদন্ত শেষে গত ১১ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র নম্বর-১৮৭। অভিযোগপত্র, ফরেনসিক রিপোর্টি ২২ ধারায় কিশোরীর জবানবন্দিতে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক শাহাদত হোসেন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় চার্জসিট দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনাটি সঠিক। ধর্ষকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় বাদিদের উপর নির্যাতন করতে পারে। মারধরের ঘটনায় আরেকটি মামলাও হয়েছে। আশা করি নির্যাতিত পরিবার দ্রুতই ন্যায় বিচার পাবেন।
প্রিন্ট