ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কবিরত্ন এম এ হক সাহেবের ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আগস্ট মাস বাঙ্গালি জাতির শোকের মাস। আর এই শোকের মাসে বাংলাদেশের বিশেষ করে ফরিদপুরের সাহিত্যাঙ্গনের সাহিত্যানুরাগিরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে কবিরত্ন এম এ হক সাহেবকে। গতকাল শুক্রবার কবি’র ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে ১৩ই আগস্ট পরলোক গমন করেন।

এলাকায় ‘কবিরত্ন এম এ হক’ ও ‘কবি সাহবে’ নামে পরিচিত এই কবির জন্ম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি। কবিরতœ এম এ হক কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করে খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আইএ পাস করে একই কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিএ ডিগ্রি লাভের আগেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। নিজ এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পন্ডিত, শিক্ষানুরাগী হিসাবেও সমধিক পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা।

কবিরত্ন এম.এ.হক তার সাহিত্যিক জীবনে বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন পল্লী কবি জসীমউদ্দীন এবং বিখ্যাত সনেটকার সুফী মোতাহের হোসেনের অত্যন্ত স্নেহভাজন। জসীমউদ্দীন এবং সুফী মোতাহের হোসেন ছিলেন তার সাহিত্যের গুণমুগ্ধ পাঠক ও অনুপ্রেরণা দাতা। তার কাব্য-প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে জসীমউদ্দীন ও সুফী মোতাহের হোসেন স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে এম.এ.হকের ‘এপার-ওপার’ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দেন। কবিরত্ন এম.এ.হক বহুমুখী সাহিত্য-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার। তার রচিত নাতিদীর্ঘ গ্রন্থতালিকা থেকে তার সাহিত্য-প্রতিভার বৈচিত্র্য অনুমান করা যেতে পারে- ‘শুকতারা’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘পথদিশারু (কাব্যগ্রন্থ), ‘এপার-ওপার’ (লোকগানের সংকলন), ‘কচি মনের খোরাক’ (পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে দ্রুত পঠন হিসেবে যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাঠ্য ছিল), ‘দর্দে নবী’ (ইসলামি গান), ‘হক-বচন’, ‘ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা’ (গ্রন্থটিতে অপ্রচলিত এবং হারাতে বসা অসংখ্য বাগধারাকে তিনি সংকলিত করেন এবং স্কুল-ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে ছন্দে বাক্য রচনা করেন), ‘দেশের গান’ (দেশাত্মবোধক গানের সংকলন), ‘দাদুর ছড়া’ (শিশু-সাহিত্য), ‘স্মৃতিকথা’ (মুনীর চৌধুরী, ডক্টর এনামুল হক, কবি শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, বিজয় সরকার, কবি আশরাফ আলী খান প্রমুখের সঙ্গে কবির ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে রচিত), ‘কাঙ্গাল পথিক’ (কাব্যগ্রন্থ) এবং ‘মুক্তির গান’ (সুফি মতবাদী কবিতা)।

কবিরত্ন এম.এ.হকের সাহিত্যিক চেতনায় লোকজীবন ও লোক-সংস্কৃতির গভীর রূপ এবং আধুনিক জীবনবোধ- এ দুয়ের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। ইসলামি গান, লোকগান, আধুনিক গান এবং কবিতার সফল পাশাপাশি অবস্থান তার প্রতিভার দ্বিবেণী সমন্বয়কে করেছে প্রকাশিত।

এম.এ.হকের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ তাকে ‘কবিরতœ’ উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া ‘যশোরের লোক কবি’, ‘ফরিদপুরের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী গ্রন্থিত হয়েছে। সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড, বর্তমান বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে কবিরতেœর নাতিদীর্ঘ জীবনী গ্রন্থিত হয়েছিল।

বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধান’-এ কবিরত্নের জীবন ও তার কৃতিত্ব ভুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কবির ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘বন্ধন ফাউন্ডেশন’ ও কবির নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘শুকতারা সাহিত্য গোষ্ঠি’র আয়োজনে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙ্গা বাজারে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

কবিরত্ন এম এ হক সাহেবের ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আপডেট টাইম : ০৩:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অগাস্ট ২০২১
মোঃ ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ :

আগস্ট মাস বাঙ্গালি জাতির শোকের মাস। আর এই শোকের মাসে বাংলাদেশের বিশেষ করে ফরিদপুরের সাহিত্যাঙ্গনের সাহিত্যানুরাগিরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে কবিরত্ন এম এ হক সাহেবকে। গতকাল শুক্রবার কবি’র ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে ১৩ই আগস্ট পরলোক গমন করেন।

এলাকায় ‘কবিরত্ন এম এ হক’ ও ‘কবি সাহবে’ নামে পরিচিত এই কবির জন্ম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি। কবিরতœ এম এ হক কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করে খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আইএ পাস করে একই কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিএ ডিগ্রি লাভের আগেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। নিজ এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পন্ডিত, শিক্ষানুরাগী হিসাবেও সমধিক পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা।

কবিরত্ন এম.এ.হক তার সাহিত্যিক জীবনে বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন পল্লী কবি জসীমউদ্দীন এবং বিখ্যাত সনেটকার সুফী মোতাহের হোসেনের অত্যন্ত স্নেহভাজন। জসীমউদ্দীন এবং সুফী মোতাহের হোসেন ছিলেন তার সাহিত্যের গুণমুগ্ধ পাঠক ও অনুপ্রেরণা দাতা। তার কাব্য-প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে জসীমউদ্দীন ও সুফী মোতাহের হোসেন স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে এম.এ.হকের ‘এপার-ওপার’ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দেন। কবিরত্ন এম.এ.হক বহুমুখী সাহিত্য-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার। তার রচিত নাতিদীর্ঘ গ্রন্থতালিকা থেকে তার সাহিত্য-প্রতিভার বৈচিত্র্য অনুমান করা যেতে পারে- ‘শুকতারা’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘পথদিশারু (কাব্যগ্রন্থ), ‘এপার-ওপার’ (লোকগানের সংকলন), ‘কচি মনের খোরাক’ (পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে দ্রুত পঠন হিসেবে যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাঠ্য ছিল), ‘দর্দে নবী’ (ইসলামি গান), ‘হক-বচন’, ‘ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা’ (গ্রন্থটিতে অপ্রচলিত এবং হারাতে বসা অসংখ্য বাগধারাকে তিনি সংকলিত করেন এবং স্কুল-ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে ছন্দে বাক্য রচনা করেন), ‘দেশের গান’ (দেশাত্মবোধক গানের সংকলন), ‘দাদুর ছড়া’ (শিশু-সাহিত্য), ‘স্মৃতিকথা’ (মুনীর চৌধুরী, ডক্টর এনামুল হক, কবি শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, বিজয় সরকার, কবি আশরাফ আলী খান প্রমুখের সঙ্গে কবির ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে রচিত), ‘কাঙ্গাল পথিক’ (কাব্যগ্রন্থ) এবং ‘মুক্তির গান’ (সুফি মতবাদী কবিতা)।

কবিরত্ন এম.এ.হকের সাহিত্যিক চেতনায় লোকজীবন ও লোক-সংস্কৃতির গভীর রূপ এবং আধুনিক জীবনবোধ- এ দুয়ের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। ইসলামি গান, লোকগান, আধুনিক গান এবং কবিতার সফল পাশাপাশি অবস্থান তার প্রতিভার দ্বিবেণী সমন্বয়কে করেছে প্রকাশিত।

এম.এ.হকের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ তাকে ‘কবিরতœ’ উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া ‘যশোরের লোক কবি’, ‘ফরিদপুরের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী গ্রন্থিত হয়েছে। সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড, বর্তমান বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে কবিরতেœর নাতিদীর্ঘ জীবনী গ্রন্থিত হয়েছিল।

বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধান’-এ কবিরত্নের জীবন ও তার কৃতিত্ব ভুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কবির ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘বন্ধন ফাউন্ডেশন’ ও কবির নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘শুকতারা সাহিত্য গোষ্ঠি’র আয়োজনে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙ্গা বাজারে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।


প্রিন্ট