আব্দুল হামিদ মিঞাঃ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের মহদীপুর-হেলালপুর (এমএইচ) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার(৩০-০৭-২০২৫) সকাল ১১টায় এই ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২৫ জনের আহতের খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার পর শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে অবস্থান করলেও শিক্ষার্থীরা ছুটি না নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে বাড়ি চলে যান।
জানা যায়, প্রায় সাড়ে ৬মাস আগে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় পরিচালনাসহ নিয়োগ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহি অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগসহ মানববন্ধন করা হয়।
ঘটনার প্রেক্ষিতে ২মাসের ছুটি নেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক। তার অনুপস্থিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন,আব্দুল ওয়াদুদ।
বুধবার (৩০-০৭-২০২৫) সকালে আব্দুল খালেক তার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবেন এমন খবরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে অশ্লিল ভাষা ব্যবহার করে মানববন্ধন করে। এসময় লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে যান প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক। তাকে বাঁধা দিলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে আহত হয়েছেন-প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক (৫০) সহ তার পক্ষের আনোয়ার হোসেন (৪০), আমানউল্লাহ হক (৩৫),এনামুল হক(৪২), নেক আলম(৫৫)।
শিক্ষক-কর্মচারি ও তাদের পক্ষের আহত হয়েছেন- শিক্ষক জাকির হোসেন(৪৫), আয়া বানুয়ারা বেগম (৪০), পিয়ন আবু জার(৩৫), শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন(১৬)সহ রহিদুল ইসলাম(৪৭), রাহাবুল ইসলাম(৩৫), আকাশ আলী(২৫), বজলুর রহমান (৫৮), জীবন আলী (২৭), মারুফ আলী(২৩), সাগর আলী(২০), রাজু আহম্মেদ(৩০),রুবেল হোসেন(৩০), সম্রাট আলী(২০)। এদের মধ্যে- আমানুউল্লাহ, আব্দুল খালেক, আকাশ আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মারুফ আলী, সাগর আলী, রাজ আহম্মেদ,আবু জার, জাকির হোসেন, বানুয়ারাসহ কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং বাঁকিরা বাঘা ও চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। আহতরা সকলেই উপজেলার মহদীপুর-হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে,উভয় পক্ষের হাতে লাঠিসোটা ও চাইনিচ কুড়াল ও হাতুড়ি ছিল।
স্থানীয়রাসহ শিক্ষক ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় পরিচালনাসহ নিয়োগ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয় নিয়ে গত ২০ জানুয়ারী’২৫ প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
২১ জানুয়ারী’ ২৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী উপজেলা নির্বাহি অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। ৪মে’২৫ দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেককে দুর্নীতিবাজ,সন্ত্রাসী, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ ও স্বেচ্ছাচারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তার ছবি সংবলিত ব্যানারে স্যান্ডেল ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসির ব্যানারে মানববন্ধন করে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ এর দাবি,বিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস চলাকালিন সময়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেকের নের্তৃত্বে বহিরাগত লোকজন দেশীয় অস্ত্র-হাতে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে আক্রমন চালিয়ে মোটরসাইকেল ভাংচুরসহ মারধর করে। এতে শিক্ষক জাকির হোসেনসহ আয়া,পিয়ন ও ১জন শিক্ষার্থী আহত হয়। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করে আহত করা হয়।
চিকিৎসাধীন থাকায় প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ছেলে ফয়সাল আহমেদ বলেন, দেশের পট পরিবর্তনের পর শিক্ষক-কর্মচারি মিলে তার বাবার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগসহ মানববন্ধন করে। এর আগে স্কুল প্রাঙ্গনে গায়ে হাত তুলে এবং লাঞ্চিত করে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছে। তার দাবি, ওই ঘটনায় মুখের দাড়িও ছিঁড়ে গেছে।
আত্নসন্মান রক্ষায় ২মাসের ছুটি নেন। যেহেতু আইনগতভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তিনি শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে যান। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কতিপয় স্থানীয়রা প্রবেশে বাঁধা দেয়। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তারা ক্লাস বাদ দিয়ে বিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে সংঘর্ষে রুপ নেয়। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল বলে দাবি তার।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফম আছাদুজ্জামান বলেন,পরিদর্শনকালে বিদ্যালয়ের কোন ক্লাস চলতে দেখা যায়নি। তবে শিক্ষকরা অফিসে ছিলেন। দুই পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, শৃঙ্খলা বহির্ভূতভাবে যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও একাধিকবার বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতিপূর্বের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। নিয়মিত কমিটি না থাকায় যার তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
প্রিন্ট