ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বেনাপোল বন্দরের ৬০ জন আনসার সদস্যকে বদলী Logo লন্ডনে গবেষণা স্মারক কালের অভিজ্ঞানের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠিত Logo নিখোঁজ কন্যাকে ফিরে পেতে সাংবাদিক সম্মেলন করছে ভুক্তভোগী পরিবার Logo বাঘায় ক্লাস বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়কে মানববন্ধন Logo নড়াইলে দোকানঘর পোড়ানোর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ‌ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরের ‌ ৪৯ তম ‌ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo রাজাপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ মাদ্রসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে Logo ভেড়ামারায় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo তানোরে ভুয়া প্রতিবন্ধী দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ Logo ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৃণমুলে জনপ্রিয় মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সালথায় অবৈধ উপায়ে নিয়োগ হওয়ায় বেতন বন্ধ হলো এক শিক্ষকের

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলাধীন আটঘর ইউনিয়নের পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের নিয়োগ অবৈধ প্রমানীত হওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী।

 

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসা স্থাপিত হয়। এরপরে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে হালিমা খাতুনের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ ও শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতির অভিযোগ করেন পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি গত ২১ নভেম্বর সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগে করেন।

 

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হালিমা খাতুন ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হিসেবে যোগদান করেন। অথচ তৎকালীন তার দাখিলকৃত বিপিএড পরিক্ষার সনদ যেটিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গোপালগঞ্জের সাবেরা রউফ শারিরিক শিক্ষা কলেজ থেকে বিপিএড পরিক্ষা অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসাসমূহ) নীতিমালা বহির্ভূত। এছাড়া ওই সনদে উল্লেখিত রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যাচাই করে দেখা যায় যে সনদটির কোনো হদিস নেই।

 

খোজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের অভিযোগের আলোকে গত ৩ ডিসেম্বর সালথা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমার উক্ত বিষয়টি তদন্তকালে দেখতে পান, সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন ২০ জানুয়ারী ২০০০ খ্রিঃ চাকুরীতে প্রবেশ করেন। সেহেতু ১৯৯৫ সালের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসাসমূহ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামে সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা (ন্যূনতম) (১) স্নাতকসহ বি.পি.এড প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকতে হবে। অথবা (২) স্নাতকসহ জুনিয়র ডিপ্লোমা/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী বিভাগ থাকতে হবে। সে প্রেক্ষিতে হালিমা খাতুনের চাকুরীতে প্রবেশের সময় বি পি এড/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষনের সনদ ছিলনা। পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালে উক্ত সনদ অর্জন করেন- যা ১৯৯৫ সালের মাদ্রাসার জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক হয়নি।

 

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। একই সাথে গত ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১৮.২(ক) নীতি অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সুপার হালিমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে জুন মাসে হালিমা খাতুনের পরিপূর্ণ বেতন-ভাতা নিয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতে আসলে তিনি হালিমা নাম বেতন শীট থেকে কর্তন করে অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন ভাতার শীটে স্বাক্ষর করেন।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন জানান, ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করলেও ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া আলাউদ্দিন ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে বি পি এড পাশ করেছেন। এছাড়া ২০০৪ সালের জমাকৃত বি পি এড সনদের বিষয়ে কিছুই জানা নেই দাবি করে বলেন, আমার নামে কে বা কারা এটি জমা দিয়েছে, আমি কিছুই জানি না। এছাড়া ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করে ২০১৩ সালের বি পি এড পাশ নীতিমালা বহির্ভূত কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তখন আমি জানতাম না।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বেনাপোল বন্দরের ৬০ জন আনসার সদস্যকে বদলী

error: Content is protected !!

সালথায় অবৈধ উপায়ে নিয়োগ হওয়ায় বেতন বন্ধ হলো এক শিক্ষকের

আপডেট টাইম : ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি :

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলাধীন আটঘর ইউনিয়নের পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের নিয়োগ অবৈধ প্রমানীত হওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী।

 

জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসা স্থাপিত হয়। এরপরে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে হালিমা খাতুনের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ ও শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতির অভিযোগ করেন পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি গত ২১ নভেম্বর সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগে করেন।

 

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হালিমা খাতুন ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হিসেবে যোগদান করেন। অথচ তৎকালীন তার দাখিলকৃত বিপিএড পরিক্ষার সনদ যেটিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গোপালগঞ্জের সাবেরা রউফ শারিরিক শিক্ষা কলেজ থেকে বিপিএড পরিক্ষা অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসাসমূহ) নীতিমালা বহির্ভূত। এছাড়া ওই সনদে উল্লেখিত রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যাচাই করে দেখা যায় যে সনদটির কোনো হদিস নেই।

 

খোজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের অভিযোগের আলোকে গত ৩ ডিসেম্বর সালথা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমার উক্ত বিষয়টি তদন্তকালে দেখতে পান, সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন ২০ জানুয়ারী ২০০০ খ্রিঃ চাকুরীতে প্রবেশ করেন। সেহেতু ১৯৯৫ সালের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসাসমূহ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামে সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা (ন্যূনতম) (১) স্নাতকসহ বি.পি.এড প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকতে হবে। অথবা (২) স্নাতকসহ জুনিয়র ডিপ্লোমা/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী বিভাগ থাকতে হবে। সে প্রেক্ষিতে হালিমা খাতুনের চাকুরীতে প্রবেশের সময় বি পি এড/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষনের সনদ ছিলনা। পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালে উক্ত সনদ অর্জন করেন- যা ১৯৯৫ সালের মাদ্রাসার জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক হয়নি।

 

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। একই সাথে গত ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১৮.২(ক) নীতি অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সুপার হালিমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে জুন মাসে হালিমা খাতুনের পরিপূর্ণ বেতন-ভাতা নিয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতে আসলে তিনি হালিমা নাম বেতন শীট থেকে কর্তন করে অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন ভাতার শীটে স্বাক্ষর করেন।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন জানান, ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করলেও ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া আলাউদ্দিন ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে বি পি এড পাশ করেছেন। এছাড়া ২০০৪ সালের জমাকৃত বি পি এড সনদের বিষয়ে কিছুই জানা নেই দাবি করে বলেন, আমার নামে কে বা কারা এটি জমা দিয়েছে, আমি কিছুই জানি না। এছাড়া ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করে ২০১৩ সালের বি পি এড পাশ নীতিমালা বহির্ভূত কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তখন আমি জানতাম না।


প্রিন্ট