ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ভেড়ামারায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ Logo সালথায় অবৈধ উপায়ে নিয়োগ হওয়ায় বেতন বন্ধ হলো এক শিক্ষকের Logo পাগলাপীরের ‘ঢাকা বিরিয়ানি হাউজ’-এ বাসি খাবার রাখায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা Logo বুড়িরহাটে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রকে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই, এলাকায় শোকের ছায়া Logo জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন দলকে উপজেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা Logo চরভদ্রাসনে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার Logo খোকসা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত Logo হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ Logo সদরপুরে এসইডিপির আওতায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ Logo ফরিদপুরে শিশু ধর্ষণ ‌মামলায় এক ব্যাক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির গুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় কলেজ ছাত্রের মামলা

জসীমউদ্দীন ইতিঃ

 

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করা নিয়ে সংঘর্ষে বিজিবির গুলিতে ৩ জন নিহত ও ১৮ জন আহতের ঘটনার সাড়ে ৬ বছর পর আদালতে মামলা করেছেন এক কলেজছাত্র। সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক রাজিব কুমার রায় মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

মামলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হরিপুর উপজেলার বেতনা বিওপির নায়েক মো. হাবিবুল্লাহ (৩৭), নায়েক দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সিপাহী হাবিবুর রহমান (৩৫), সিপাহী মুরসালিন (৩৭), সিপাহী বায়রুল ইসলাম (৩৩), নায়েক সুবেদার জিয়াউর রহমানসহ (৪০) অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

 

মামলার বাদী আব্দুল কাশেম (২৫) হরিপুর উপজেলার রুহিয়া গ্রামের মো. আমিরুলের ছেলে এবং হরিপুর সরকারি মোসলেমউদ্দিন কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

 

তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দাবি, ভারতীয় গরু জব্দ করায় সশস্ত্র চোরাকারবারিরা হামলা করলে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হন। আর গ্রামবাসী বলছে, বৈধ কাগজ থাকার পরও বিজিবি সদস্যরা গরু নিয়ে যাচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করায় বিজিবি গুলি চালায়। তাদের গুলিতে হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের রুহিয়া গ্রামের নজরুলের ছেলে দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. নবাব (২৬), একই গ্রামের জহির উদ্দীনের ছেলে মো. সাদেক (৩৬) ও বহরমপুর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জয়নুলসহ (১২) তিনজন নিহত ও ১৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহরমপুর গ্রামের হুকুম হাজীর ছেলে হবিবর রহমান ২টি গরু ও রুহিয়া গ্রামের নাজিম ৩টি গরু জাদুরানী হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় বেতনা সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা গরুগুলো আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল। বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও কেন গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের পেটে রাইফেলের নল ঠেকায়। এ দৃশ্য দেখে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করে। এ সময় বিজিবির সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই নবাব, সাদেক ও জয়নুল মারা যান।

 

তবে এই ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চোরাই গরু ঢুকেছে সন্দেহে বিজিবি অভিযান চালায়। তারা বেশ কয়েকটি গরু জব্দ করে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষ বাধে এবং গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

 

তবে এ ঘটনায় তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলাব্রত কর্মকারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছিলেন।

 

মামলার বাদী মো. আবুল কাশেম জানান, সেদিন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে রাস্তায় দেখি বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে গরু আটক নিয়ে বাগবিতণ্ডা চলছিল। এমন সময় হঠাৎ করে বিজিবির ছোড়া গুলি আমার ডান চোখে এসে লাগে। ওই ঘটনায় ৩ জন নিহতসহ ১৮ জন আহত হন। আমরা বেশ কয়েকবার থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই ২টা মামলা করে বিজিবি। তাদের মামলায় আমি দুইবার জেলও খেটেছি।

 

তিনি আরও বলেন, গত বছরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে মামলা করার পরিবেশ আসায় আমি ন্যায় বিচারের আশায় ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত দিয়েছে। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

error: Content is protected !!

ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির গুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় কলেজ ছাত্রের মামলা

আপডেট টাইম : ১৯ ঘন্টা আগে
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :

জসীমউদ্দীন ইতিঃ

 

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করা নিয়ে সংঘর্ষে বিজিবির গুলিতে ৩ জন নিহত ও ১৮ জন আহতের ঘটনার সাড়ে ৬ বছর পর আদালতে মামলা করেছেন এক কলেজছাত্র। সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক রাজিব কুমার রায় মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

মামলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হরিপুর উপজেলার বেতনা বিওপির নায়েক মো. হাবিবুল্লাহ (৩৭), নায়েক দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সিপাহী হাবিবুর রহমান (৩৫), সিপাহী মুরসালিন (৩৭), সিপাহী বায়রুল ইসলাম (৩৩), নায়েক সুবেদার জিয়াউর রহমানসহ (৪০) অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

 

মামলার বাদী আব্দুল কাশেম (২৫) হরিপুর উপজেলার রুহিয়া গ্রামের মো. আমিরুলের ছেলে এবং হরিপুর সরকারি মোসলেমউদ্দিন কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

 

তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দাবি, ভারতীয় গরু জব্দ করায় সশস্ত্র চোরাকারবারিরা হামলা করলে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হন। আর গ্রামবাসী বলছে, বৈধ কাগজ থাকার পরও বিজিবি সদস্যরা গরু নিয়ে যাচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করায় বিজিবি গুলি চালায়। তাদের গুলিতে হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের রুহিয়া গ্রামের নজরুলের ছেলে দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. নবাব (২৬), একই গ্রামের জহির উদ্দীনের ছেলে মো. সাদেক (৩৬) ও বহরমপুর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জয়নুলসহ (১২) তিনজন নিহত ও ১৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহরমপুর গ্রামের হুকুম হাজীর ছেলে হবিবর রহমান ২টি গরু ও রুহিয়া গ্রামের নাজিম ৩টি গরু জাদুরানী হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় বেতনা সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা গরুগুলো আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল। বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও কেন গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের পেটে রাইফেলের নল ঠেকায়। এ দৃশ্য দেখে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করে। এ সময় বিজিবির সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই নবাব, সাদেক ও জয়নুল মারা যান।

 

তবে এই ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চোরাই গরু ঢুকেছে সন্দেহে বিজিবি অভিযান চালায়। তারা বেশ কয়েকটি গরু জব্দ করে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষ বাধে এবং গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

 

তবে এ ঘটনায় তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলাব্রত কর্মকারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছিলেন।

 

মামলার বাদী মো. আবুল কাশেম জানান, সেদিন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে রাস্তায় দেখি বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে গরু আটক নিয়ে বাগবিতণ্ডা চলছিল। এমন সময় হঠাৎ করে বিজিবির ছোড়া গুলি আমার ডান চোখে এসে লাগে। ওই ঘটনায় ৩ জন নিহতসহ ১৮ জন আহত হন। আমরা বেশ কয়েকবার থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই ২টা মামলা করে বিজিবি। তাদের মামলায় আমি দুইবার জেলও খেটেছি।

 

তিনি আরও বলেন, গত বছরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে মামলা করার পরিবেশ আসায় আমি ন্যায় বিচারের আশায় ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত দিয়েছে। আশা করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।


প্রিন্ট