ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ভেড়ামারায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ Logo সালথায় অবৈধ উপায়ে নিয়োগ হওয়ায় বেতন বন্ধ হলো এক শিক্ষকের Logo পাগলাপীরের ‘ঢাকা বিরিয়ানি হাউজ’-এ বাসি খাবার রাখায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা Logo বুড়িরহাটে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রকে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই, এলাকায় শোকের ছায়া Logo জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন দলকে উপজেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা Logo চরভদ্রাসনে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার Logo খোকসা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত Logo হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ Logo সদরপুরে এসইডিপির আওতায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ Logo ফরিদপুরে শিশু ধর্ষণ ‌মামলায় এক ব্যাক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

খাল বন্ধ করে পাকা বাড়ি নির্মাণ

পচে যাচ্ছে স্বর্ণা জাতের ধানের চারা

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মালিয়াট গ্রামের কৃষক জিয়া শেখ আক্ষেপ করে বললেন, গেল বছর সাত বিঘে চাষ করে তা-ও মণদশেক ধান পাইছিলাম। এবার একদমই শ্যাষ। চোখের সামনে পচে গেল সব ধানের চারা। কিছুই করতে পারলাম না।  মাসখানেক আগে তিনি নিজ বাড়ির পেছনে দুই বিঘা ও সামনের পাঁচ বিঘা জমিতে রোপণ করেন স্বর্ণা জাতের আমন ধানের চারা। পাশের উকিল খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁর সব ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।

গতকাল ২৮ জুলাই সোমবার জিয়া শেখকে পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মালিয়াট গ্রামে। তিনি বলছিলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা ২০ বছর ধরে খাল দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মাছ চাষ করে আসছেন। তবুও অল্প অল্প করে পানি বের হতো। এই বছর এক উকিল খাল বন্ধ করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন একজন। এতে বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। সে কারণে তাঁর মতো কৃষকের ধানক্ষেত ডুবে পচে যাচ্ছে চারা।

খােজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর মট মালিয়াট এলাকায় বালু দিয়ে খাল ভরাট করে পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী। এতে পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এবার আড়াই হাজার বিঘা আমন ধানসহ জমি তলিয়ে গেছে।

পানিপ্রবাহ সচল থাকলে সাত বিঘা জমিতে ৮০ মণ থেকে ১০০ মণ ধান পেতেন জিয়া শেখ। তাঁর এবার ধানচাষে প্রতি বিঘায় চারা, জমিচাষ, সারসহ খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২১ হাজার টাকার সরাসরি ক্ষতি হয়েছে। মানসিক ক্ষতির পরিমাণ তো অমূল্য।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, উপজেলার সদকী ইউনিয়নের তরুণমোড়-তারাপুর সড়কের গড়ের মাঠ এলাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকায় নির্মিত এলজিইডির একটি সেতু আছে। ওই সেতু থেকে বানিয়াকান্দি, মালিয়াট, মট মালিয়াট, করাতকান্দি হয়ে মোড়াগাছা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ড্রেনেজ খাল রয়েছে। খালের দুই পাশে কয়েক হাজার বিঘা কৃষিজমি। চলতি মৌসুমে সেখানে আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা। এই খালটি দিয়ে মাঠের অতিরিক্ত পানি গড়াই নদীতে যায়।

১০-১২ বছর ধরে গড়ের মাঠ সেতুর মুখে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন জগন্নাথপুর ইউনিয়নের পলাশ হোসেন সুজন। অন্তত ২০ বছর ধরে খালের বিভিন্ন জায়গায় কাঁচাপাকা অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ছোট ছোট পাইপ কালভার্ট নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। এতে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পলাশ হোসেন সুজনের ভাষ্য, গড়ের মাঠে সেতুর কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যক্তিগত জমিতেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছি। এতে পানিপ্রবাহে কোনো সমস্যা নেই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউসুফ আলীর দাবি, ব্যক্তিগত জমিতেই বাড়ি নির্মাণ করেছি। সরকার মেপে সরকারি জমিতে খাল খনন করুক।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে গড়ের মাঠ সেতুর মুখে মাটি ও জাল ফেলে দেওয়া বাঁধ দেখা গেছে। ওই খালে এখন বড় বড় কচুরিপানা। কয়েকশ মিটার পর পর ছোট-বড় কালভার্ট ও পাইপ কালভার্ট। খালের ওপরই বেশকিছু কাঁচা ও পাকাবাড়ি দেখা যায়। খাল ভরা পানি থাকলেও তা স্থির। দুই পাশে জমিতে আমন ধানের চারা ডুবুডুবু। ভেসে গেছে বেশকিছু মাছের পুকুরও।

মালিয়াট গ্রামের প্রবীণ কৃষক মনছের আলী বলেন, পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে খালের পানি নদীতে চলে যেত। এটটু-আটটু যাই যাতো। এবার টোটালি বন্ধ করে গেছে ইউসুফ উকিল। এ কারণে তাঁর তিন বিঘা জমিসহ অন্তত দুই-তিন হাজার বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে।
মট মালিয়াট মাঠের দুই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন রিন্টু শেখ। তিনি বলেন, খাল দখল করে কেউ মাছ চাষ করছে। কেউ বাড়ি বানাচ্ছে। এতে পানি বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে মাঠের ফসল ডুবে গেছে। এ কারণে তাঁর প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খোর্দ তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, গড়ের মাঠে আড়াই কোটি টাকার সেতু নির্মাণ করেছে সরকার। স্থানীয় লোকজন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যায়।

ভারী বৃষ্টিতে সদকী ইউনিয়নে প্রায় ৩৪০ হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, পানি অপসারণে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।  ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শিগগির জমি পরিমাপ করে খাল খননে ব্যবস্থা নেবেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

error: Content is protected !!

খাল বন্ধ করে পাকা বাড়ি নির্মাণ

পচে যাচ্ছে স্বর্ণা জাতের ধানের চারা

আপডেট টাইম : ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মালিয়াট গ্রামের কৃষক জিয়া শেখ আক্ষেপ করে বললেন, গেল বছর সাত বিঘে চাষ করে তা-ও মণদশেক ধান পাইছিলাম। এবার একদমই শ্যাষ। চোখের সামনে পচে গেল সব ধানের চারা। কিছুই করতে পারলাম না।  মাসখানেক আগে তিনি নিজ বাড়ির পেছনে দুই বিঘা ও সামনের পাঁচ বিঘা জমিতে রোপণ করেন স্বর্ণা জাতের আমন ধানের চারা। পাশের উকিল খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁর সব ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।

গতকাল ২৮ জুলাই সোমবার জিয়া শেখকে পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মালিয়াট গ্রামে। তিনি বলছিলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা ২০ বছর ধরে খাল দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মাছ চাষ করে আসছেন। তবুও অল্প অল্প করে পানি বের হতো। এই বছর এক উকিল খাল বন্ধ করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন একজন। এতে বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ। সে কারণে তাঁর মতো কৃষকের ধানক্ষেত ডুবে পচে যাচ্ছে চারা।

খােজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর মট মালিয়াট এলাকায় বালু দিয়ে খাল ভরাট করে পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী। এতে পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এবার আড়াই হাজার বিঘা আমন ধানসহ জমি তলিয়ে গেছে।

পানিপ্রবাহ সচল থাকলে সাত বিঘা জমিতে ৮০ মণ থেকে ১০০ মণ ধান পেতেন জিয়া শেখ। তাঁর এবার ধানচাষে প্রতি বিঘায় চারা, জমিচাষ, সারসহ খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২১ হাজার টাকার সরাসরি ক্ষতি হয়েছে। মানসিক ক্ষতির পরিমাণ তো অমূল্য।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, উপজেলার সদকী ইউনিয়নের তরুণমোড়-তারাপুর সড়কের গড়ের মাঠ এলাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকায় নির্মিত এলজিইডির একটি সেতু আছে। ওই সেতু থেকে বানিয়াকান্দি, মালিয়াট, মট মালিয়াট, করাতকান্দি হয়ে মোড়াগাছা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ড্রেনেজ খাল রয়েছে। খালের দুই পাশে কয়েক হাজার বিঘা কৃষিজমি। চলতি মৌসুমে সেখানে আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা। এই খালটি দিয়ে মাঠের অতিরিক্ত পানি গড়াই নদীতে যায়।

১০-১২ বছর ধরে গড়ের মাঠ সেতুর মুখে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন জগন্নাথপুর ইউনিয়নের পলাশ হোসেন সুজন। অন্তত ২০ বছর ধরে খালের বিভিন্ন জায়গায় কাঁচাপাকা অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ছোট ছোট পাইপ কালভার্ট নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। এতে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পলাশ হোসেন সুজনের ভাষ্য, গড়ের মাঠে সেতুর কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যক্তিগত জমিতেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছি। এতে পানিপ্রবাহে কোনো সমস্যা নেই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউসুফ আলীর দাবি, ব্যক্তিগত জমিতেই বাড়ি নির্মাণ করেছি। সরকার মেপে সরকারি জমিতে খাল খনন করুক।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে গড়ের মাঠ সেতুর মুখে মাটি ও জাল ফেলে দেওয়া বাঁধ দেখা গেছে। ওই খালে এখন বড় বড় কচুরিপানা। কয়েকশ মিটার পর পর ছোট-বড় কালভার্ট ও পাইপ কালভার্ট। খালের ওপরই বেশকিছু কাঁচা ও পাকাবাড়ি দেখা যায়। খাল ভরা পানি থাকলেও তা স্থির। দুই পাশে জমিতে আমন ধানের চারা ডুবুডুবু। ভেসে গেছে বেশকিছু মাছের পুকুরও।

মালিয়াট গ্রামের প্রবীণ কৃষক মনছের আলী বলেন, পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে খালের পানি নদীতে চলে যেত। এটটু-আটটু যাই যাতো। এবার টোটালি বন্ধ করে গেছে ইউসুফ উকিল। এ কারণে তাঁর তিন বিঘা জমিসহ অন্তত দুই-তিন হাজার বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে।
মট মালিয়াট মাঠের দুই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন রিন্টু শেখ। তিনি বলেন, খাল দখল করে কেউ মাছ চাষ করছে। কেউ বাড়ি বানাচ্ছে। এতে পানি বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে মাঠের ফসল ডুবে গেছে। এ কারণে তাঁর প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খোর্দ তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, গড়ের মাঠে আড়াই কোটি টাকার সেতু নির্মাণ করেছে সরকার। স্থানীয় লোকজন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যায়।

ভারী বৃষ্টিতে সদকী ইউনিয়নে প্রায় ৩৪০ হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, পানি অপসারণে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।  ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শিগগির জমি পরিমাপ করে খাল খননে ব্যবস্থা নেবেন।


প্রিন্ট