জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৬৫ বছর বয়সী নারী আনোয়ারা বেগমকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজসহ লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হাত- পা ও বুকের পাজড়ের হাড় ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগে উঠেছে । মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনাটি উপজেলার বিনাই-পাঁচখুপি গ্রামে ঘটেছে। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মাতব্বররা গ্রাম্যশালিশে মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তারা ন্যায় বিচার পেতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার পেতে ভুক্তভোগী মহিলার মেয়ে জামাই রানা আকন্দ বাদী হয়ে ক্ষেতলাল থানায় মামলা দায়ের করেন ।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট ( রবিবার) বিকেল ৫ টায় ক্ষেতলাল উপজেলার বিনাই-পাঁচখুপী গ্রামের বয়স্ক ও অসহায় মহিলা ৭ সন্তানের জননী আনোয়ারা বেগম এর বসতবাড়ীর জানালার পাশে নিয়মিত দূর্গন্ধযুক্ত ময়লা আর্বজনা ফেলে দেয় প্রতিবেশী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে নাসির (৩৫) ও মোস্তাফিজুর রহমান মুঞ্জু (৫৫)। ময়লা আর্বজনার দূর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে তাদের নিষেধ করতে যায় আনোয়ারা।
এমন সময় তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আনোয়ারাকে একা পেয়ে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয় এবং বাঁশের লাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় মেরে হাত, পা ও বুকের পাজর ভেঙ্গে দেয়। এছাড়া ওই নারীকে কাপড় খুলে বিবস্ত্রও করা হয়।
এসময় ভুক্তভোগী মহিলার আত্বচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে নির্যাতনকারী দুইজন নাসির ও মোস্তফিজুর ঘটনাস্থল থেকে পালে যায়। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় প্রতিবেশীরা প্রথমে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার আঘাত ও জখম গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে রেফার করেন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের শামসুন্নাহার, ফরিদা, জোবেদা এবং কল্পনা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অসহায় মহিলাকে অহেতুক ও বিনা কারণে অন্যায়ভাবে লাঠি দিয়ে পিটে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে। তার স্বামী বাড়ীতে থাকলেও অপারেশনের রোগী হওয়ায় প্রতিবাদ করতে পারেনি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম (৬৫) ও তাঁর দিন মজুর স্বামী চিলাহাটি ডোমার থেকে এসে বিনাই-পাঁচখুপী গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং ৭ মেয়েকে নিয়ে অতি কষ্টে জীবন-যাপন করেন।
উপজেলার বড়াইল ইউপি চেয়ারম্যান আবু রাশেদ আলমগীর ও স্থানীয় মাতব্বররা ঘটনাটি গ্রাম্য সালিশে মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। ফলে শনিবার ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগমের মেয়ে জামাই রানা আকন্দ বাদী হয়ে চার (০৪) জন কে আসামী করে ক্ষেতলাল থানায় মামলা দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখিত আসামীরা হচ্ছে, উপজেলার বিনাই পাঁচখুপী গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের ছেলে নাসির (৩৫), নাসিরের স্ত্রী মেরি বেগম (৩০), মজিবর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মুঞ্জু (৫৫) এবং মুন্জুর স্ত্রী নাসিমা বেগম(৪৫) অভিযুক্ত নাসির।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান মুঞ্জু বলেন, জমির আইলে আগাছা ও কচুরীপানা রাখলে আনোয়ারা বেগম অশালীন ভাষায় আমাদের গালিগালাজ করতে থাকলে রাগের মাথায় দু’একটি কিল ঘুষি মেরেছি। এমন ঘটনায় এলাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ক্ষেতলাল থানা অফিসার ইনচার্জ নীরেন্দ্র নাথ মন্ডল জানান, নির্যাতনের অভিযোগে ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগমের মেয়ে জামাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আমরা আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
প্রিন্ট