ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ১৮ ইঞ্চি ‘মব’ কাপড় পেটে রেখেই সেলাই, সংকটাপন্ন প্রসূতি Logo দৌলতপুরে থানার সামনে স্বর্ণের দোকানে দূর্ধর্ষ চুরি Logo শ্রেণিকক্ষে পানিঃ দৌলতপুরে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা Logo সারাদেশে এনসিপির সাড়া দেখে বলা হচ্ছে নিবন্ধনের কাগজে ঝামেলা আছেঃ -হান্নান মাসউদ Logo মাদারিপুরে দু’টি বাস-পিকআপের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৬ Logo প্রয়াত বিচারক মহম্মদ নুরুল হোদা মোল্লার মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়ার মজলিস Logo ইবি ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ বিক্ষোভ Logo গোমস্তাপুরে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু Logo চরভদ্রাসনে টানা বৃষ্টিতে কর্মহীন ভ্যান-রিকশাচালকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ Logo বাগাতিপাড়ায় লোকালয়ে দেখা মিললো বিরল কালো মুখ হনুমানের
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় কিশোর রিফাদের মাথায় কাস্তে ঢুকে ছিল ২৬ ঘণ্টা ! বেঁচে আছে

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাবার বিরুদ্ধে ছেলেকে আহত করার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই আহত কিশোরের মাথা থেকে ২৬ ঘণ্টা পর অপারেশন করে ঢুকে থাকা কাস্তে বের করা হয়েছে।

 

তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানা গেছে। বাবা শাহীন তার ছেলে রিফাদকে কাস্তে ছুড়ে মেরে আহত করেননি।

 

গত শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ধলনগর গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত রিফাদ আলী (১২) ধলনগর গ্রামের ক্যানেল পাড়ার শাহীন আলীর ছেলে। রিফাদ মাঠে গরুর ঘাস কাটে ও মাঝেমধ্যে ভাড়ায় ভ্যান চালায়।

 

পরিবার ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মাঠ থেকে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পড়ে গিয়ে হাতে থাকা কাস্তে তার মাথায় ঢুকে আটকে যায়। প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর অপারেশন করে তার মাথা থেকে কাস্তে বের করা হয়েছে।বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে রিফাদ। অর্থের অভাবে পরবর্তী চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।

 

তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও পোস্টে দাবি করা হয়, কুষ্টিয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় বাবা শাহীনের সঙ্গে ছেলে রিফাদের রাগারাগি! একপর্যায়ে ছেলের দিকে কাস্তে ছুঁড়ে মারেন বাবা। মুহূর্তেই কাস্তেটি ছেলের মাথায় ঢুকে আটকে যায়। তবে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পরিবার৷ দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়ে সে আহত হয়েছে।

 

আহত রিফাদের খালু আব্দুল খালেক বলেন, গরুকে খাওয়ানোর জন্য গত শুক্রবার সকালে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিল রিফাদ। ঘাস কাটা শেষে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল৷ এ সময় কাদামাখা মেঠোপথে পা ফসকে পড়ে যায়। তখনই হাতে থাকা কাস্তে মাথায় ঢুকে আটকে যায়। এগিয়ে এসে সাহায্য করার মতো মাঠে কেউ ছিল না। মাথায় কাস্তে নিয়েই সে সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে আসে।

 

এরপর দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা মাথা থেকে কাস্তে বের করতে পারেনি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা অপারেশন করে কাস্তে বের করেছে। এরপর আরও দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। আগের চেয়ে এখন ভালো আছে। তবে এখনো কথা বলতে পারছে না। ওরা খুবই গরিব মানুষ। টাকার অভাবে তারা চিকিৎসা করাতে পারছে না। খুব কষ্টের মধ্যে আছে তারা। আপনার সবাই সহযোগিতা করুন।

 

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল খালেক আরও বলেন, এটা একটা দুর্ঘটনা। ফেসবুকে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে।

 

রিফাদের চাচা শাকিল বলেন, রিফাদ মাঠ থেকে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়িতে আসছিল। এ সময় আইলের ওপর পড়ে যায়। বৃষ্টির কারণে মাঠের আইল কাদা ছিল। এজন্য পিছলে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে রিফাদের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ভাইরাল করা হয়েছে। এতে আমাদের মানসম্মানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা বড় বিপদে আছি। যাই হোক, আমরা গরিব মানুষ। টাকার অভাবে চিকিৎসা ব্যয় চালাতে পারছি না। আমরা সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।

 

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিফাদের পাশে তার দাদা ও দাদি রয়েছেন। দাদা কোরবান আলী বলেন, রিফাদকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার সকাল ১০টার দিকে অপারেশন করে মাথা থেকে কাস্তে বের করা হয়েছে। বর্তমানে কথা বলতে পারছে না। হাত-পা নাড়াচাড়া করছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে টাকা-পয়সা নেই। আমরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। এলাকার কয়েকজন দুই পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে দিয়েছে। এখন আমার কাছে ১০টা টাকাও নেই। সকাল থেকে আমি ও আমার স্ত্রী কিছুই খাইনি। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি৷ এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারছি না। খোঁজ খবর নিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।

 

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় হাসপাতাল আছে। এজন্য আমরা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে দুই ধরনের তথ্য জানা গেছে। কেউ কেউ পোস্ট করেছে যে, রাগ করে বাবা কাস্তে ছুঁড়ে মারে, সেটা মাথা লাগছে। আবার কেউ কেউ পোস্ট করেছে, পড়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ১৮ ইঞ্চি ‘মব’ কাপড় পেটে রেখেই সেলাই, সংকটাপন্ন প্রসূতি

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় কিশোর রিফাদের মাথায় কাস্তে ঢুকে ছিল ২৬ ঘণ্টা ! বেঁচে আছে

আপডেট টাইম : ৯ ঘন্টা আগে
ইসমাইল হোসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাবার বিরুদ্ধে ছেলেকে আহত করার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই আহত কিশোরের মাথা থেকে ২৬ ঘণ্টা পর অপারেশন করে ঢুকে থাকা কাস্তে বের করা হয়েছে।

 

তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানা গেছে। বাবা শাহীন তার ছেলে রিফাদকে কাস্তে ছুড়ে মেরে আহত করেননি।

 

গত শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ধলনগর গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত রিফাদ আলী (১২) ধলনগর গ্রামের ক্যানেল পাড়ার শাহীন আলীর ছেলে। রিফাদ মাঠে গরুর ঘাস কাটে ও মাঝেমধ্যে ভাড়ায় ভ্যান চালায়।

 

পরিবার ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মাঠ থেকে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পড়ে গিয়ে হাতে থাকা কাস্তে তার মাথায় ঢুকে আটকে যায়। প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর অপারেশন করে তার মাথা থেকে কাস্তে বের করা হয়েছে।বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে রিফাদ। অর্থের অভাবে পরবর্তী চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।

 

তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও পোস্টে দাবি করা হয়, কুষ্টিয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় বাবা শাহীনের সঙ্গে ছেলে রিফাদের রাগারাগি! একপর্যায়ে ছেলের দিকে কাস্তে ছুঁড়ে মারেন বাবা। মুহূর্তেই কাস্তেটি ছেলের মাথায় ঢুকে আটকে যায়। তবে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পরিবার৷ দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়ে সে আহত হয়েছে।

 

আহত রিফাদের খালু আব্দুল খালেক বলেন, গরুকে খাওয়ানোর জন্য গত শুক্রবার সকালে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিল রিফাদ। ঘাস কাটা শেষে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল৷ এ সময় কাদামাখা মেঠোপথে পা ফসকে পড়ে যায়। তখনই হাতে থাকা কাস্তে মাথায় ঢুকে আটকে যায়। এগিয়ে এসে সাহায্য করার মতো মাঠে কেউ ছিল না। মাথায় কাস্তে নিয়েই সে সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে আসে।

 

এরপর দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা মাথা থেকে কাস্তে বের করতে পারেনি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা অপারেশন করে কাস্তে বের করেছে। এরপর আরও দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। আগের চেয়ে এখন ভালো আছে। তবে এখনো কথা বলতে পারছে না। ওরা খুবই গরিব মানুষ। টাকার অভাবে তারা চিকিৎসা করাতে পারছে না। খুব কষ্টের মধ্যে আছে তারা। আপনার সবাই সহযোগিতা করুন।

 

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল খালেক আরও বলেন, এটা একটা দুর্ঘটনা। ফেসবুকে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে।

 

রিফাদের চাচা শাকিল বলেন, রিফাদ মাঠ থেকে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়িতে আসছিল। এ সময় আইলের ওপর পড়ে যায়। বৃষ্টির কারণে মাঠের আইল কাদা ছিল। এজন্য পিছলে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে রিফাদের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ভাইরাল করা হয়েছে। এতে আমাদের মানসম্মানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা বড় বিপদে আছি। যাই হোক, আমরা গরিব মানুষ। টাকার অভাবে চিকিৎসা ব্যয় চালাতে পারছি না। আমরা সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।

 

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিফাদের পাশে তার দাদা ও দাদি রয়েছেন। দাদা কোরবান আলী বলেন, রিফাদকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার সকাল ১০টার দিকে অপারেশন করে মাথা থেকে কাস্তে বের করা হয়েছে। বর্তমানে কথা বলতে পারছে না। হাত-পা নাড়াচাড়া করছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে টাকা-পয়সা নেই। আমরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। এলাকার কয়েকজন দুই পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে দিয়েছে। এখন আমার কাছে ১০টা টাকাও নেই। সকাল থেকে আমি ও আমার স্ত্রী কিছুই খাইনি। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি৷ এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারছি না। খোঁজ খবর নিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।

 

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় হাসপাতাল আছে। এজন্য আমরা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে দুই ধরনের তথ্য জানা গেছে। কেউ কেউ পোস্ট করেছে যে, রাগ করে বাবা কাস্তে ছুঁড়ে মারে, সেটা মাথা লাগছে। আবার কেউ কেউ পোস্ট করেছে, পড়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।


প্রিন্ট