ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
যশোর বোর্ডের অধীনে কুষ্টিয়ায় একটি কেন্দ্রে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভুলক্রমে শিক্ষকরা এক পত্রের পরীক্ষায় আরেক পত্রের প্রশ্নপত্র প্রদান করেছেন। দুটি কক্ষে ৫২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে যুক্তিবিদ্যার প্রথম পত্রের ‘গ’ সেট ১২১ কোডের নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) প্রশ্নের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্রের ‘গ’ সেট ১২২ কোডের প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারার পরপরই শিক্ষকরা তড়িঘড়ি করে প্রশ্নপত্র প্রত্যাহার করে নির্ধারিত প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সচিব কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া এলাকায় অবস্থিত কুষ্টিয়া আদর্শ ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রসচিব ও আদর্শ ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সালাহ্ উদ্দিন।
মহাবিদ্যালয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেদিন মানবিক বিভাগের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। সৃজনশীল পরীক্ষার পর ৩০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। মোট ১২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুটি কক্ষে ৫২ জনের জন্য ভুলক্রমে দ্বিতীয় পত্রের ‘গ’ সেট ১২২ কোডের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষককে জানান। শিক্ষকরা দ্রুত প্রশ্নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার উদ্যোগ নেন, যদিও একটি প্রশ্নপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রথম পত্রের সঠিক প্রশ্ন বিতরণ করে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
একজন শিক্ষক জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে উপস্থিত হন। বিতরণকৃত কক্ষে পড়ে থাকা দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন উদ্ধার করা হয়। তবে সেটির ছবি বা কপি বাইরে গেছে কিনা—এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরেক শিক্ষক জানান, ভুল প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলে তা প্রতিটি কক্ষে পাঠানো হয়েছিল। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে যথাযথ প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
একজন পরীক্ষার্থী বলেন, বিতরণকৃত নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের বিষয় কোড সেদিনের নির্ধারিত কোডের সঙ্গে না মেলায় বিষয়টি শিক্ষকদের জানানো হয়। পরে দ্রুত প্রশ্নগুলো তুলে নেওয়া হয় এবং কিছুটা দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়।
কেন্দ্রসচিব সালাহ্ উদ্দিন বলেন, “একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন প্যাকেট ট্রেজারিতে প্যাক করার সময় ভুলবশত এমনটি হয়েছে। প্যাকেট খোলার সময় কেউ খেয়াল করেনি। কেন্দ্রসচিব হিসেবে এ দায় এড়াতে পারি না।”
জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, “ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছিল। ট্রেজারিতে প্রশ্ন প্যাকেটবন্দির দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা। পরীক্ষার আগেই সঠিক কোডের প্রশ্নপত্র আছে কিনা তা যাচাই করা উচিত ছিল। এটা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।”
শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি বোর্ড থেকেও আরও একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে।”
প্রিন্ট