ঢাকা , শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নরসিংদীতে এখনো পলাতক ১৪৫ কয়েদি, উদ্ধার হয়নি ২৯ অস্ত্রসহ গোলা বারুদ

মোঃ আলম মৃধাঃ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে সময় সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৯ জুলাই প্রথম সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় নরসিংদী জেলা কারাগারে। সেখানে থাকা জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র। পুড়িয়ে দেয়া হয় ২৯ হাজার নথি। এ ঘটনার প্রায় এক বছর পার হলেও এখনো অধরা জেল পলাতক ১৪৫ কয়েদি। উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ২৯ অস্ত্রসহ গোলা বারুদ।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ বন্দির মধ্যে জেলা প্রশাসনের প্রচারে সাড়া দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ৬৪৬ বন্দি। পলাতক থাকা বাকি ১৮০ জনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে। এখনও পলাতক রয়েছেন ১৪৫ জন। যার মধ্যে ৯ জন চিহ্নিত জঙ্গি। তাদের মধ্যে দুইজন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং সাতজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

এ ছাড়া হামলার সময় লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র। এর মধ্যে ৫৬টি উদ্ধার হলেও ২৯টি এখনো হদিস মেলেনি। শর্ট গানের গুলি লুট হয় ১০১৫ রাউন্ড, রাইফেলের গুলি লুট হয় সাত হাজার। ৮ হাজার ১৫ রাউন্ডের মধ্যে গোলা বারুদ উদ্ধার করা হয় মাত্র ১৬৪২ রাউন্ড।

হামলার পর পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, বন্দিদের আশপাশের জেলায় রাখতে হয়েছে। কিছুদিন পর কারাগার মোটামুটি মেরামত করে তাদের আবার ফিরিয়ে আনা হয়।

নরসিংদীর জেল সুপার মোঃ শামীম ইকবাল বলেন, হামলার সময় ২৯ হাজার মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে। এতে বন্দিদের সাজা খাটার সময়সহ আসামিদের সব তথ্যে বিভ্রাট হচ্ছে। কে কী ধরনের মামলার আসামি তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। প্রযুক্তির ব্যবহারসহ আদালত থেকে এসব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, কারাগারের ভাঙা অবকাঠামো মেরামত করা হলেও তা আবার ভেঙে পড়ছে। দিন দিন বাইরের সড়ক উঁচু হওয়ায় কারাগারের দেয়াল নিচু হয়ে বাইরে থেকে অনেকটা অরক্ষিত দেখা যায়। এ ছাড়া ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি বন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ৩৪৪ জন ধারণ ক্ষমতার এ কারাগারে বর্তমানে ৯১০ জন বন্দি রয়েছে।

নরসিংদী জেলা কারাগার পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ বন্দির মধ্যে আত্মসমর্পণ করেন ৬৪৬ বন্দি ১৮০ জনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আবাসন সঙ্কট এমন পর্যায়ে যে আমাকে পর্যন্ত মসজিদে ঘুমাতে হয়। নরসিংদীতে নতুন যে কারাগারটি নির্মাণ হচ্ছে, তার কাজ অতি দ্রুত সম্পূর্ণ করা উচিত, যাতে বন্দীদের এখান থেকে সেই জায়গায় স্থানান্তর করা যায়।

এদিকে হামলা-লুট-আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির ‘কারণ ও কর্তৃপক্ষের করণীয় নির্ধারণে’ ওই অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত শেষ করে এরইমধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে ‘মোটাদাগে’ কিছু কারণ নির্ধারণ করে ভবিষ্যতের জন্য কিছু করণীয়-পদক্ষেপের সুপারিশ এসেছে বলে কারা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যখন বন্দিরা কারাগারের ভেতর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন অভ্যন্তরে থাকা কারা কর্তৃপক্ষ সীমিত জনবল নিয়ে ভেতরের বন্দি ও বাইরের লোকজনের ‘রোষে’ পড়ে যায়।

জরুরি পরিস্থিতিতে কারারক্ষীরা যে বাইরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেবেন, সেই পরিস্থিতি তখন ছিল না। অন্য জায়গা থেকে কারারক্ষী এনে জনবল বাড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অবস্থাও ছিল না সে সময়। কারা অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামও সীমিত। তারপরেও যা আছে তা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দুয়েএকটি জায়গায় কারারক্ষীদের উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা ছিল। তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল, করণীয় কী হবে- সে বিষয়ে তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছিল না।

এ বিষয়গুলো মোটাদাগে কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কয়েক জায়গায় প্রশাসনিক দুর্বলতার কথাও কমিটি বলেছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

হরিপরে বিএসএফ এর গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত

error: Content is protected !!

নরসিংদীতে এখনো পলাতক ১৪৫ কয়েদি, উদ্ধার হয়নি ২৯ অস্ত্রসহ গোলা বারুদ

আপডেট টাইম : ০৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক : :

মোঃ আলম মৃধাঃ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে সময় সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৯ জুলাই প্রথম সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় নরসিংদী জেলা কারাগারে। সেখানে থাকা জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র। পুড়িয়ে দেয়া হয় ২৯ হাজার নথি। এ ঘটনার প্রায় এক বছর পার হলেও এখনো অধরা জেল পলাতক ১৪৫ কয়েদি। উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ২৯ অস্ত্রসহ গোলা বারুদ।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ বন্দির মধ্যে জেলা প্রশাসনের প্রচারে সাড়া দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ৬৪৬ বন্দি। পলাতক থাকা বাকি ১৮০ জনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে। এখনও পলাতক রয়েছেন ১৪৫ জন। যার মধ্যে ৯ জন চিহ্নিত জঙ্গি। তাদের মধ্যে দুইজন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং সাতজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

এ ছাড়া হামলার সময় লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র। এর মধ্যে ৫৬টি উদ্ধার হলেও ২৯টি এখনো হদিস মেলেনি। শর্ট গানের গুলি লুট হয় ১০১৫ রাউন্ড, রাইফেলের গুলি লুট হয় সাত হাজার। ৮ হাজার ১৫ রাউন্ডের মধ্যে গোলা বারুদ উদ্ধার করা হয় মাত্র ১৬৪২ রাউন্ড।

হামলার পর পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, বন্দিদের আশপাশের জেলায় রাখতে হয়েছে। কিছুদিন পর কারাগার মোটামুটি মেরামত করে তাদের আবার ফিরিয়ে আনা হয়।

নরসিংদীর জেল সুপার মোঃ শামীম ইকবাল বলেন, হামলার সময় ২৯ হাজার মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে। এতে বন্দিদের সাজা খাটার সময়সহ আসামিদের সব তথ্যে বিভ্রাট হচ্ছে। কে কী ধরনের মামলার আসামি তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। প্রযুক্তির ব্যবহারসহ আদালত থেকে এসব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, কারাগারের ভাঙা অবকাঠামো মেরামত করা হলেও তা আবার ভেঙে পড়ছে। দিন দিন বাইরের সড়ক উঁচু হওয়ায় কারাগারের দেয়াল নিচু হয়ে বাইরে থেকে অনেকটা অরক্ষিত দেখা যায়। এ ছাড়া ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি বন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ৩৪৪ জন ধারণ ক্ষমতার এ কারাগারে বর্তমানে ৯১০ জন বন্দি রয়েছে।

নরসিংদী জেলা কারাগার পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ বন্দির মধ্যে আত্মসমর্পণ করেন ৬৪৬ বন্দি ১৮০ জনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৩৫ জনকে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আবাসন সঙ্কট এমন পর্যায়ে যে আমাকে পর্যন্ত মসজিদে ঘুমাতে হয়। নরসিংদীতে নতুন যে কারাগারটি নির্মাণ হচ্ছে, তার কাজ অতি দ্রুত সম্পূর্ণ করা উচিত, যাতে বন্দীদের এখান থেকে সেই জায়গায় স্থানান্তর করা যায়।

এদিকে হামলা-লুট-আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির ‘কারণ ও কর্তৃপক্ষের করণীয় নির্ধারণে’ ওই অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তদন্ত শেষ করে এরইমধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে ‘মোটাদাগে’ কিছু কারণ নির্ধারণ করে ভবিষ্যতের জন্য কিছু করণীয়-পদক্ষেপের সুপারিশ এসেছে বলে কারা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যখন বন্দিরা কারাগারের ভেতর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন অভ্যন্তরে থাকা কারা কর্তৃপক্ষ সীমিত জনবল নিয়ে ভেতরের বন্দি ও বাইরের লোকজনের ‘রোষে’ পড়ে যায়।

জরুরি পরিস্থিতিতে কারারক্ষীরা যে বাইরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেবেন, সেই পরিস্থিতি তখন ছিল না। অন্য জায়গা থেকে কারারক্ষী এনে জনবল বাড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অবস্থাও ছিল না সে সময়। কারা অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামও সীমিত। তারপরেও যা আছে তা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দুয়েএকটি জায়গায় কারারক্ষীদের উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা ছিল। তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল, করণীয় কী হবে- সে বিষয়ে তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছিল না।

এ বিষয়গুলো মোটাদাগে কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কয়েক জায়গায় প্রশাসনিক দুর্বলতার কথাও কমিটি বলেছে।


প্রিন্ট