ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
ইবি’র বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল ইসলাম পেশাগত অসদাচরণ, নৈতিকতা লঙ্ঘন ও যৌন হয়রানির অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
–
আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হকের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
–
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, অশালীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পোশাক ও শারীরিক গঠন নিয়ে অশোভন মন্তব্য এবং হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার ও ইমোতে ভিডিও কলে আপত্তিকর বার্তা প্রেরণের অভিযোগ তোলেন।
–
এসব অভিযোগ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিতে আঘাত হানে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে আজ শনিবার থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়।
–
বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী জীবন ধারণ ভাতা প্রাপ্য হবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
–
একইসঙ্গে বিষয়টি তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই কমিটিকে আগামী ২০ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
–
চার সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আল-ফিকহ অ্যান্ড ল’ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ নাজিমুদ্দিনকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফকরুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার আরিফা আক্তার এবং আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদা আক্তার।
–
জানা গেছে, গত বুধবার বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্প্রতি বিভাগের ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ২৩ জন শিক্ষার্থী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদার কাছে এই লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে তারা ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাতটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন। পেশাগত অসদাচরণ, নৈতিকতা লঙ্ঘন, যৌন হয়রানি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।
–
অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া না পেলে সেগুলো আনসেন্ট করে দেন। রাতের বেলায় ফোন দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এবং নিজেকে ‘বন্ধু’ পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ হতে চান।
–
বিভাগের সভাপতির কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম মেয়েদের গভীর রাতে কল দিয়ে বিরক্ত করেন। বিশেষ করে তিনি ম্যাসেঞ্জারে কল দেন যাতে ফোনকল রেকর্ড করা না যায়। নিজেকে মেয়েদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠ হতে চান, ম্যাসেঞ্জারে কল দেওয়া, নানারকম উত্যাক্তকারী ম্যাসেজ দেবার পর সাড়া না পেলে তিনি প্রমাণ মুছতে ম্যাসেঞ্জার থেকে সকল মেসেজ আনসেন্ট করে দেন।
–
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ক্লাসরুমে মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে বিবাহিত মেয়েদের দাঁড় করিয়ে বা উদ্দেশ্য করে বিবাহিত জীবন, দাম্পত্য জীবন, হাজবেন্ডের সাথে বোঝাপড়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন। এতে মেয়েরা বিভ্রান্ত ও অপমানিত হওয়ার পরেও শিক্ষক হিসেবে উনার মাঝে কোনধরনের বিকার লক্ষ্য করা যায় না। ক্লাসে বিভিন্ন টপিক পড়ানোর ক্ষেত্রেও মেয়েদের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ উদাহরণ টানেন এবং যেকোন বিষয় নিয়ে বাজে ইঙ্গিত করে কথা বলেন। তা ছাড়া, মেয়েদের তার চেম্বারে একা ডেকে নিয়ে নানারকম কুপ্রস্তাব দেন তিনি। এতে রাজি না হলে পরীক্ষায় নাম্বার কমিয়ে দেবার হুমকি দেওয়া হয় যাতে মেয়েরা বাইরে কথা বলার সাহস না করে।
–
এ ছাড়াও আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্লাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৫ মিনিট দেরি হলেও ঢুকতে না দেওয়া, টিউটোরিয়ালের মার্ক ও উপস্থিতির নাম্বারের বেলায় স্বজনপ্রীতি এবং সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে অতিরিক্ত খাতা বাঁধতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের খাতা ছিড়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন তারা।
প্রিন্ট