ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন অনাবাদি ও পতিত জমিতে তালগাছ,ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দিনব্যাপী এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয়।
–
কর্মসূচি চলাকালে ইউএনও মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ফাঁকা জমিতে নিজ নিজ উদ্যোগে গাছের চারা রোপণ করা উচিত। বৃক্ষ না থাকলে অচিরেই জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। ফলে অনাবৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টির কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে, খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাবে এবং তখন বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হবে।”
–
তিনি আরও বলেন, সময়ের আগেই আমাদের সচেতন হতে হবে। সবাইকে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পৃথিবীকে সবুজ করে গড়ে তুলতে হবে। তাল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তালের রসে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাল ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-এ এর আধার। তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে যা হাড় ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো রাখতেও তালের জুড়ি নেই। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম তালে ৮৭ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি বিদ্যমান।
–
পরিবেশ উন্নয়নে তাল গাছ আগামী দিনের কৃষির পরমবন্ধু। জলবায়ু পরিবর্তনে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় তাল গাছ অবদান রাখতে পারে। এছাড়া পাখিদের নিরাপদ আবাসও গড়তে পারে তাল গাছে! তাল গাছ খরা সহনশীল গাছ। এ গাছ জল ছাড়া দীর্ঘদিন বাচঁতে পারে। তাছাড়া গাছের গোড়ায় দীর্ঘদিন জল জমলে ও সহজে মারা যায় না। তাল গাছের শিকড় মাটির বেশি গভীরে পৌছে না; তবে গুচ্ছ মূলগুলো চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে।
–
এই সময়ে উপস্থিত ছিলেন ,উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার,কৃষিবিদ আশফাকুর রহমান, চাদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ সচিব এবং উক্ত ওয়ার্ড মেম্বার ভুট্টুএবং সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।
–
উল্লেখ,২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাত হতে দেশি জাতের তালের চারা ব্যবহারের মাধ্যমে তাল গাছ চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য চারা সহায়তা প্রাদান প্রণোদনা কর্মসুচীর আওতায় চাঁদগ্রাম ইউনিয়নে তালের চারা প্রদান ও রোপন কর্মসূচী পালন করা হয়।
–
তালের চারা রোপণ করেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম। মােট ২০০ টি তালের চারা রােপণ করা হয়।
–
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালগাছের গুরুত্ব ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ অন্যদিকে খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ‘কানা বগীর ছা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ। ঐখানেতে বাস করে কানা বগির ছা।
–
আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না।
–
কালের বিবর্তনে অনেকটাই বিলুপ্তির পথে তালগাছ। একসময় গ্রাম-বাংলার শোভা বৃদ্ধিতে এ প্রজাতির গাছের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তখন গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাট, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, নদ-নদীর পাড়সহ প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সারি সারি তালগাছ দেখা যেত। বিশেষ করে, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন গ্রাম ও স্থাপনা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তালগাছের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
প্রিন্ট