ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo প্রশ্ন সারজিসের; কুকুর কীভাবে সচিবালয়ে ঢুকল ! Logo গোপালগঞ্জে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মানববন্ধন Logo নাটোরে আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য নিদর্শন এর দাবিতে মানববন্ধন Logo বাঘার পদ্মায় ধরা পড়ছে বাঘাইড়, কপাল খুলছে জেলেদের Logo বালিয়াকান্দিতে স্পোর্টস একাডেমির উদ্যগে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর উদ্বোধন Logo আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের জন্য কালুখালীতে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন Logo কালুখালীর ৮৪ কৃষান কিষানী পেল পুষ্টি বাগানের উপকরণ Logo বাঘায় রোটারি ক্লাব অফ মেট্রোপলিটনের শীত বস্ত্র বিতরণ Logo ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে ৯ কৃষকের জমি দখলের চেষ্টা! Logo দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বয়স্ক নারীদের শীতবস্ত্র ও শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বৌভাতের আনন্দ পরিণত হলো শোকে

এক বজ্রপাতেই ১৭ জন নিহত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাঁকার তেলিখাড়ি গ্রামের হোসেন আলীর বাড়িতে চলছিল বিয়ে পরবর্তী  বৌভাতের আনন্দ। কিন্তু একটি বজ্রপাত বৌভাতের আনন্দকে শোকে পরিণত করেছে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে থেকে বিয়ে পরবর্তী এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নৌকায় করে শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাঁকার তেলিখাড়ি গ্রামের হোসেন আলীর বাড়িতে বৌ আনতে যাচ্ছিলেন বরের বাড়ির অতিথিরা। বেলা সাড়ে ১১টা ৫৯ মিনিটে মর্মান্তিক বজ্রপাতের ঘটনাটি ঘটে।

এ ঘটনায় পদ্মাপাড়ে বরের গ্রামের সুর্যনারায়ণপুরে চলছে শোকের মাতম। শুধু বরের বাড়ি নয়, যেন শোকাচ্ছন্ন পুরো গ্রাম। ঘটনায় বরের নানা, নানী, মামা, মামী, দুলাভাইও মৃত্যুবরণ করেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বজ্রপাতে বরের মামা সাদিকুল ইসলাম ও মামী টকি বেগম মৃত্যুবরণ করায় এতিম হয়েছে তাদের চার অবুঝ শিশু।

সাদিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা-মাকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সিহাব (১৪), জমজ বোন তানিয়া-সোনিয়া (৮) ও তাজরিন (২)।

মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে আসা প্রত্যক্ষদর্শী মর্জিনা বেগম জানান, বেলা ১১টার দিকে তারা বর ও নববধূকে আনতে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের আলিম নগর ঘাট থেকে শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাঁকার তেলিখাড়ি গ্রামের দিকে নৌকায় করে রওনা হন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নববধূরে বাড়ির কাছে দক্ষিণপাঁকা ঘাটে নামলে শুরু হয় বৃষ্টি।

এ সময় তারা নদীর ঘাটের টোলঘরে সবাই অবস্থান করেন। এমন সময় হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই প্রায় সবাই লুটিয়ে পড়েন এবং নিহত ১৭ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই বেশির ভাগ বৌভাতের অতিথি নিহত হন।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ফাতেমা বেগম বলেন, বজ্রপাতের আগে সে বিদ্যুৎ চমকায় এমন কিছুই সেখানে ঘটেনি বরং হঠাৎ কোথা থেকে যেন বড় একখণ্ড আগুণের গোলা এসে পরে আমাদের উপরে। আর সেখানেই সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহ যাতে কাউকে এ রকম কষ্ট আর না দেয়।

একই গ্রামে একসঙ্গে এতো মৃত্যু তারা কখনও দেখেননি। স্বজনরা হাসপাতাল থেকে লাশ আনার পর থেকেই প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন শোকাস্তব্ধ পরিবারের বাড়িতে। বাড়ির সামনে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে বাতাস। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই প্রতিবেশীদের। তবুও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বইছিল বিয়ে বাড়ির আনন্দ।

এতগুলো আত্মীয়কে একসঙ্গে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন বর আল মামুন ও তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী সুমি ইসলামসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

এদিকে নিহতদের পরিবারের জন্য প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাজিফ।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রশ্ন সারজিসের; কুকুর কীভাবে সচিবালয়ে ঢুকল !

error: Content is protected !!

বৌভাতের আনন্দ পরিণত হলো শোকে

এক বজ্রপাতেই ১৭ জন নিহত

আপডেট টাইম : ১১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ অগাস্ট ২০২১
ডেস্ক রিপোর্টঃ :

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাঁকার তেলিখাড়ি গ্রামের হোসেন আলীর বাড়িতে চলছিল বিয়ে পরবর্তী  বৌভাতের আনন্দ। কিন্তু একটি বজ্রপাত বৌভাতের আনন্দকে শোকে পরিণত করেছে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে থেকে বিয়ে পরবর্তী এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নৌকায় করে শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাঁকার তেলিখাড়ি গ্রামের হোসেন আলীর বাড়িতে বৌ আনতে যাচ্ছিলেন বরের বাড়ির অতিথিরা। বেলা সাড়ে ১১টা ৫৯ মিনিটে মর্মান্তিক বজ্রপাতের ঘটনাটি ঘটে।

এ ঘটনায় পদ্মাপাড়ে বরের গ্রামের সুর্যনারায়ণপুরে চলছে শোকের মাতম। শুধু বরের বাড়ি নয়, যেন শোকাচ্ছন্ন পুরো গ্রাম। ঘটনায় বরের নানা, নানী, মামা, মামী, দুলাভাইও মৃত্যুবরণ করেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বজ্রপাতে বরের মামা সাদিকুল ইসলাম ও মামী টকি বেগম মৃত্যুবরণ করায় এতিম হয়েছে তাদের চার অবুঝ শিশু।

সাদিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা-মাকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সিহাব (১৪), জমজ বোন তানিয়া-সোনিয়া (৮) ও তাজরিন (২)।

মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে আসা প্রত্যক্ষদর্শী মর্জিনা বেগম জানান, বেলা ১১টার দিকে তারা বর ও নববধূকে আনতে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের আলিম নগর ঘাট থেকে শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাঁকার তেলিখাড়ি গ্রামের দিকে নৌকায় করে রওনা হন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নববধূরে বাড়ির কাছে দক্ষিণপাঁকা ঘাটে নামলে শুরু হয় বৃষ্টি।

এ সময় তারা নদীর ঘাটের টোলঘরে সবাই অবস্থান করেন। এমন সময় হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই প্রায় সবাই লুটিয়ে পড়েন এবং নিহত ১৭ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই বেশির ভাগ বৌভাতের অতিথি নিহত হন।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ফাতেমা বেগম বলেন, বজ্রপাতের আগে সে বিদ্যুৎ চমকায় এমন কিছুই সেখানে ঘটেনি বরং হঠাৎ কোথা থেকে যেন বড় একখণ্ড আগুণের গোলা এসে পরে আমাদের উপরে। আর সেখানেই সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহ যাতে কাউকে এ রকম কষ্ট আর না দেয়।

একই গ্রামে একসঙ্গে এতো মৃত্যু তারা কখনও দেখেননি। স্বজনরা হাসপাতাল থেকে লাশ আনার পর থেকেই প্রতিবেশীরা ভিড় করছেন শোকাস্তব্ধ পরিবারের বাড়িতে। বাড়ির সামনে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে বাতাস। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই প্রতিবেশীদের। তবুও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বইছিল বিয়ে বাড়ির আনন্দ।

এতগুলো আত্মীয়কে একসঙ্গে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন বর আল মামুন ও তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী সুমি ইসলামসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

এদিকে নিহতদের পরিবারের জন্য প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাজিফ।


প্রিন্ট