ঢাকা , শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo যাত্রীর গায়ের পোশাক পুড়িয়ে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ Logo কালুখালীতে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ সম্পন্ন Logo ঈশ্বরদীতে জব্দকৃত খিচুড়ি এতিমখানায় বিতরণ, জরিমানা ১০ হাজার টাকা Logo ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo হাতিয়ার দিঘীতে মিললো এক মণ ওজনের কোরাল মাছ, ৪০ হাজারে বিক্রি ! Logo পদ্মা নদী থেকে ১৯ ঘণ্টা পর কিশোরের লাশ উদ্ধার Logo প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ‌ছাত্রলীগের কর্মসূচি পালিত Logo ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‌ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন Logo শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ Logo সদরপুরে পাটের ফলন ভাল হওয়ায় ক্ষেত পরিচর্যা করছে কৃষকেরা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাড়ির আঙিনায় কবরের সারি

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট টাইম : ১০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১
  • ১৭১ বার পঠিত

বাড়ির আঙিনায় কবরের সারি। লাশ চুরির শঙ্কায় বজ্রাঘাতে নিহত একই পরিবারের ৬ জনকে কবর দেয়া হয়েছে বাড়ির সামনের আঙিনায়। সুরক্ষিত করতে ইটের দেয়াল দিয়ে প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে কবরগুলোকে ঘিরে।

গ্রামবাসী বলছেন, লাশ পাহারার সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ। বুধবার রাতে নিহতদের পারিবারিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চর সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শোকে মুহ্যমান এলাকাবাসী।

স্থানীয় গ্রামবাসী খাইরুল ইসলাম ও শিমুল পারভেজ জানান, যারা মারা গেছেন তারা সবাই সদ্য বিবাহিত আল-মামুনের নিকটাত্মীয়। একই পরিবারে তার নানা, নানি, মামা, মামিসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। ওই পরিবারে একটি ছেলেসন্তান ছাড়া সেই পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। অপর একটি পরিবারে ৩ বছরের একটি শিশু ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা পুরো গ্রামবাসী কাঁদছি।

আমিনুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, বর মামুনের বোন ও দুলাইভাই এ ঘটনায় মারা যান। কিন্তু তার বোনের কোলে থাকা তিন বছরের সন্তানটি বেঁচে গেছে। আহত হলেও চিকিৎসার পর এখন সে সুস্থ আছে।

বরযাত্রী দলে থাকা মোফজ্জল হোসেন জানান, আমরা রওনা দেয়ার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। একদিকে উত্তাল পদ্মা নদী অন্যদিকে আকাশে ঘনকালো মেঘ। নদীর ঘাটে আসার সাথে সাথে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। তখন নৌকায় থাকা সবাই তাড়াহুড়ো করে নদীর পাড়ে থাকা ছাউনি ঘরের দিকে যেতে থাকে। এমন সময় বজ্রপাত হয়। আর সাথে সাথে সবাই মাটিতে পড়ে যান। পরে দেখি অনেকেই মারা গেছেন। আর যারা বেঁচে আছেন তারা ছটফট করছেন। পরে তো সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুনঃ এক বজ্রপাতেই ১৭ জন নিহত

অপর এক নারী জানান, বৃষ্টির জন্য নদীর পাড়ে ছাউনি ঘরে আশ্রয় নেই। হঠাৎই বজ্রপাতের কারণে ওই ছাউনি ঘরে আগুন লেগে যায়। একটা আলোরছটা আমার ডান হাতে লাগে। পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি আমার পাশে লাশের সারি।

এদিকে বাড়ির আঙিনায় কবর দেয়ার বিষয়ে আলী হোসেন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেমে শুনেছি বজ্রপাতে নিহতদের লাশ চুরি করে নেয়। সেজন্য বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার ধারে একসঙ্গে লাশগুলো দাফন করা হয়েছে। এতে সার্বক্ষণিক আমরা লাশগুলো পাহারা দিতে পারব। গত রাতেও আমরা গ্রামবাসী পালাক্রমে লাশগুলো পাহারা দিয়েছি; যাতে সেগুলো চুরি করতে না পারে।

এদিকে সদ্যবিবাহিত আল মামুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ি ঘিরে মানুষের জটলা। একপর্যায়ে মামুন বলেন, এ ঘটনায় আমার পিতাসহ ১৫ জন আত্মীয় মারা গেছেন। বিয়ের আনন্দ এখন আমাদের বাড়িতে নেই। এই কষ্ট আপনাদের বোঝাতে পারব না। মুহুর্তেই এতগুলো মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেল।

প্রসঙ্গত, বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর নারায়ণপুর থেকে পদ্মা নদীর খেয়াঘাটে নামতেই বজ্রপাতের শিকার হয়ে নিহত হন বরযাত্রীদের ১৭ জন। আহত হন অন্তত ২১ জন।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

যাত্রীর গায়ের পোশাক পুড়িয়ে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ

error: Content is protected !!

বাড়ির আঙিনায় কবরের সারি

আপডেট টাইম : ১০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১

বাড়ির আঙিনায় কবরের সারি। লাশ চুরির শঙ্কায় বজ্রাঘাতে নিহত একই পরিবারের ৬ জনকে কবর দেয়া হয়েছে বাড়ির সামনের আঙিনায়। সুরক্ষিত করতে ইটের দেয়াল দিয়ে প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে কবরগুলোকে ঘিরে।

গ্রামবাসী বলছেন, লাশ পাহারার সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ। বুধবার রাতে নিহতদের পারিবারিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চর সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শোকে মুহ্যমান এলাকাবাসী।

স্থানীয় গ্রামবাসী খাইরুল ইসলাম ও শিমুল পারভেজ জানান, যারা মারা গেছেন তারা সবাই সদ্য বিবাহিত আল-মামুনের নিকটাত্মীয়। একই পরিবারে তার নানা, নানি, মামা, মামিসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। ওই পরিবারে একটি ছেলেসন্তান ছাড়া সেই পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। অপর একটি পরিবারে ৩ বছরের একটি শিশু ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা পুরো গ্রামবাসী কাঁদছি।

আমিনুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, বর মামুনের বোন ও দুলাইভাই এ ঘটনায় মারা যান। কিন্তু তার বোনের কোলে থাকা তিন বছরের সন্তানটি বেঁচে গেছে। আহত হলেও চিকিৎসার পর এখন সে সুস্থ আছে।

বরযাত্রী দলে থাকা মোফজ্জল হোসেন জানান, আমরা রওনা দেয়ার পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। একদিকে উত্তাল পদ্মা নদী অন্যদিকে আকাশে ঘনকালো মেঘ। নদীর ঘাটে আসার সাথে সাথে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। তখন নৌকায় থাকা সবাই তাড়াহুড়ো করে নদীর পাড়ে থাকা ছাউনি ঘরের দিকে যেতে থাকে। এমন সময় বজ্রপাত হয়। আর সাথে সাথে সবাই মাটিতে পড়ে যান। পরে দেখি অনেকেই মারা গেছেন। আর যারা বেঁচে আছেন তারা ছটফট করছেন। পরে তো সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুনঃ এক বজ্রপাতেই ১৭ জন নিহত

অপর এক নারী জানান, বৃষ্টির জন্য নদীর পাড়ে ছাউনি ঘরে আশ্রয় নেই। হঠাৎই বজ্রপাতের কারণে ওই ছাউনি ঘরে আগুন লেগে যায়। একটা আলোরছটা আমার ডান হাতে লাগে। পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি আমার পাশে লাশের সারি।

এদিকে বাড়ির আঙিনায় কবর দেয়ার বিষয়ে আলী হোসেন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেমে শুনেছি বজ্রপাতে নিহতদের লাশ চুরি করে নেয়। সেজন্য বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার ধারে একসঙ্গে লাশগুলো দাফন করা হয়েছে। এতে সার্বক্ষণিক আমরা লাশগুলো পাহারা দিতে পারব। গত রাতেও আমরা গ্রামবাসী পালাক্রমে লাশগুলো পাহারা দিয়েছি; যাতে সেগুলো চুরি করতে না পারে।

এদিকে সদ্যবিবাহিত আল মামুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ি ঘিরে মানুষের জটলা। একপর্যায়ে মামুন বলেন, এ ঘটনায় আমার পিতাসহ ১৫ জন আত্মীয় মারা গেছেন। বিয়ের আনন্দ এখন আমাদের বাড়িতে নেই। এই কষ্ট আপনাদের বোঝাতে পারব না। মুহুর্তেই এতগুলো মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেল।

প্রসঙ্গত, বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর নারায়ণপুর থেকে পদ্মা নদীর খেয়াঘাটে নামতেই বজ্রপাতের শিকার হয়ে নিহত হন বরযাত্রীদের ১৭ জন। আহত হন অন্তত ২১ জন।