ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলবঃ-হান্নান মাসউদ Logo অবৈধ সম্পদঃ হানিফ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা Logo বিএনপিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের স্থান নেইঃ -রুহুল কবির রিজভী Logo এবছর উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে কেশবপুর উপজেলা Logo ঝালকাঠিতে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণ কার্যক্রমে গতি আনতে জেলা সমন্বয়ক টিম গঠন Logo কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুরে জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল‌ অনুষ্ঠিত Logo লালপুরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়লো খামারির স্বপ্ন Logo কালুখালীতে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত Logo নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষিকার দীর্ঘ অনুপস্থিতিঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে Logo ফরিদপুরে ২৭টি “ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র” উদ্বোধন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

জাল সনদে যুবলীগ নেতার ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা !

আলিফ হোসেনঃ

রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী পবা উপজেলার নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আব্দুর রব নামের এই শিক্ষক ২০১৫ সালে যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে। তিনি ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক। গত ২৪জুন মঙ্গলবার সকালে জাল সনদে চাকরির অভিযোগে তাঁর অপসারণের দাবিতে কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবগণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজশাহী জেলা যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আব্দুর রব প্রভাব খাটিয়ে জাল সনদে চাকরি নেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। তিনি সম্প্রতি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী বরখাস্ত না করে উল্টো তাঁর জামিনে কলেজের অধ্যক্ষ সহায়তা করেছেন বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, প্রভাষক আব্দুর রব ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমএ সনদ দিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন। অথচ দারুল ইহসানের সনদ সরকার অবৈধ ঘোষণা করে রেখেছে। তাঁর দাখিল করা আলিম পাসের সনদেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। ২০০৬ সালে ১.৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও তিনি সনদ টেম্পারিং করে পাসের বছর ২০০৮ এবং জিপিএ ৩.৬৭ দেখান। তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পর্বে সর্বনিম্ন নম্বর পেলেও এলাকার তৎকালীন এমপি আয়েন উদ্দিনের সুপারিশে তাঁকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যে শিক্ষক নিজেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত, তাঁর কাছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষা কীভাবে পাব ? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’ একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই এমন গুরুতর অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। কর্তৃপক্ষ কেন এখনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি, মাদকসহ একাধিক মামলার অভিযোগ, তাঁর কাছে আমাদের সন্তানেরা কী শিখবে ? প্রতিষ্ঠানের প্রধানও যদি তাঁকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমরা কোথায় যাব ?’

সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আব্দুর রব গ্রেপ্তার হন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কোনো কর্মচারী গ্রেপ্তার হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম। কিন্তু নওহাটা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান তা না করে উল্টো রবের জামিনের জন্য কলেজ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতেই রব জামিনে মুক্তি পান।

অধ্যক্ষের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণে কলেজের অন্য শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাবের কারণে অভিযুক্ত রবকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা অধ্যক্ষেরও শাস্তির দাবি করে বলেন, রবের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় আরো পাঁচটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর আগে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি দু’বার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছিলেন। এমন একজন ব্যক্তিকে শিক্ষক করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক আব্দুর রবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এবিষয়ে কলেজে অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান জানান, সনদে জালিয়াতি আছে কি না, তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলবঃ-হান্নান মাসউদ

error: Content is protected !!

জাল সনদে যুবলীগ নেতার ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা !

আপডেট টাইম : ০৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেনঃ

রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী পবা উপজেলার নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আব্দুর রব নামের এই শিক্ষক ২০১৫ সালে যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে। তিনি ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক। গত ২৪জুন মঙ্গলবার সকালে জাল সনদে চাকরির অভিযোগে তাঁর অপসারণের দাবিতে কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবগণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজশাহী জেলা যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আব্দুর রব প্রভাব খাটিয়ে জাল সনদে চাকরি নেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। তিনি সম্প্রতি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী বরখাস্ত না করে উল্টো তাঁর জামিনে কলেজের অধ্যক্ষ সহায়তা করেছেন বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, প্রভাষক আব্দুর রব ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমএ সনদ দিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন। অথচ দারুল ইহসানের সনদ সরকার অবৈধ ঘোষণা করে রেখেছে। তাঁর দাখিল করা আলিম পাসের সনদেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। ২০০৬ সালে ১.৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও তিনি সনদ টেম্পারিং করে পাসের বছর ২০০৮ এবং জিপিএ ৩.৬৭ দেখান। তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পর্বে সর্বনিম্ন নম্বর পেলেও এলাকার তৎকালীন এমপি আয়েন উদ্দিনের সুপারিশে তাঁকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যে শিক্ষক নিজেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত, তাঁর কাছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষা কীভাবে পাব ? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা তাঁর অপসারণ চাই।’ একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই এমন গুরুতর অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। কর্তৃপক্ষ কেন এখনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি, মাদকসহ একাধিক মামলার অভিযোগ, তাঁর কাছে আমাদের সন্তানেরা কী শিখবে ? প্রতিষ্ঠানের প্রধানও যদি তাঁকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমরা কোথায় যাব ?’

সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আব্দুর রব গ্রেপ্তার হন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কোনো কর্মচারী গ্রেপ্তার হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম। কিন্তু নওহাটা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান তা না করে উল্টো রবের জামিনের জন্য কলেজ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতেই রব জামিনে মুক্তি পান।

অধ্যক্ষের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণে কলেজের অন্য শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাবের কারণে অভিযুক্ত রবকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা অধ্যক্ষেরও শাস্তির দাবি করে বলেন, রবের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় আরো পাঁচটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর আগে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি দু’বার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছিলেন। এমন একজন ব্যক্তিকে শিক্ষক করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক আব্দুর রবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এবিষয়ে কলেজে অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান জানান, সনদে জালিয়াতি আছে কি না, তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।


প্রিন্ট