ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার সেলুনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন Logo লালপুরে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকর আগাছা পার্থেনিয়াম, প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ Logo বেনাপোলে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা Logo শেখ হাসিনার বাবুর্চির এত ক্ষমতা ! Logo মধুখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মেটাডোর কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি নিহত Logo যশোরে দ্যোতনা সাহিত্য পরিষদের ঈদ পুনর্মিলনীঃ ‘কবিরা সমাজকে অর্থবহ বার্তা দেন’ Logo নড়াইলে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার মাগুরার কুখ্যাত মনিরুল ও তার সহযোগীরা Logo জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবেঃ -সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম Logo কালাইয়ে লোক সংস্কৃতি পরিষদের উদ্দ্যোগে গুণীজন সন্মাননা প্রদান Logo বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন, মৃত্যু বেড়ে ১৩
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন, মৃত্যু বেড়ে ১৩

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন রোগী। চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। শুধু বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৫ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরগুনা জেলাতেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ১৫০ নার্সের স্থলে আছেন মাত্র ৬৬ জন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন প্রায় ৫০০ জন রোগী। পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও প্রায় ৫০০ জন। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

গুরুতর অবস্থায় অনেক রোগীকে বরিশাল বা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সম্প্রতি কলেজ ব্রাঞ্চ রোড এলাকার পাপড়ি বেগমকে (৬৫) ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এর আগে খামারবাড়ি এলাকার স্কুলছাত্র ওমর আল আরাবি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। একইভাবে আজমেরী মোনালিসা জেরিন নামে এক নারী উদ্যোক্তাও মৃত্যুবরণ করেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু আবদুল্লাহ নামে এক শিশুর মা শিল্পী বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলে দুনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ কিছুই পাইনি, সবকিছু বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে। আমার স্বামী রিকশা চালায়, এত খরচ কিভাবে চালাবো?

অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিজান রানা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ৪দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছি কিন্তু হাসপাতালে একটি নরমাল স্যালাইনও স্টকে নাই। এমনকি বাজারের কোনো ফার্মেসিতেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।

ডেঙ্গু আক্রান্তের তালিকায় এগিয়ে থাকা গৌরিচন্না এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, আমাদের এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতি বেশি। তারপরও ইউনিয়নে কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই।

এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে। আমার পরিবারের আমিসহ ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হই। সবশেষ আমি ঢাকা পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কুরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।

পরিবার রেখে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। এক রোগী দেখে আরেকজনের কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।

সচেতনতার অভাব ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা বলে সচেতন নাগরিক কমিটির বরগুনা শাখার সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পর শহরের অর্ধেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ পানি আর অপরিকল্পিত ড্রেন শহরকে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত করেছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।

হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, হঠাৎ করে কেন বরগুনায় এত ডেঙ্গু আক্রান্ত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।

তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। তারা হয়তো এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারবেন। তবে শহরের পর্যাপ্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকা, রোগীদের অসচেতনতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী না চলার কারণেও অনেকটা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মশারি ব্যবহার করতে বললেও তারা গুরুত্ব দেন না। ফলে একজনের থেকে অন্যজনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বরগুনা ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রচুর ডাবের খোসা যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। যে কারণে বর্ষার মৌসুমে পানি জমে এডিস মশার জন্ম বৃদ্ধি পায়।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছে।

হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার সেলুনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন

error: Content is protected !!

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন, মৃত্যু বেড়ে ১৩

আপডেট টাইম : ২২ ঘন্টা আগে
শাকিল মিয়া, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি :

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন রোগী। চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। শুধু বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৫ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরগুনা জেলাতেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি ৬১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ১৫০ নার্সের স্থলে আছেন মাত্র ৬৬ জন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন প্রায় ৫০০ জন রোগী। পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও প্রায় ৫০০ জন। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

গুরুতর অবস্থায় অনেক রোগীকে বরিশাল বা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সম্প্রতি কলেজ ব্রাঞ্চ রোড এলাকার পাপড়ি বেগমকে (৬৫) ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এর আগে খামারবাড়ি এলাকার স্কুলছাত্র ওমর আল আরাবি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। একইভাবে আজমেরী মোনালিসা জেরিন নামে এক নারী উদ্যোক্তাও মৃত্যুবরণ করেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু আবদুল্লাহ নামে এক শিশুর মা শিল্পী বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলে দুনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ কিছুই পাইনি, সবকিছু বাইর থেকে কিনতে হচ্ছে। আমার স্বামী রিকশা চালায়, এত খরচ কিভাবে চালাবো?

অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিজান রানা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ৪দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছি কিন্তু হাসপাতালে একটি নরমাল স্যালাইনও স্টকে নাই। এমনকি বাজারের কোনো ফার্মেসিতেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও ডাক্তারও ঠিকমতো পাওয়া যায় না।

ডেঙ্গু আক্রান্তের তালিকায় এগিয়ে থাকা গৌরিচন্না এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, আমাদের এলাকাটি বরগুনা পৌরসভার একদম কাছাকাছি হওয়ায় ঘনবসতি বেশি। তারপরও ইউনিয়নে কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই।

এছাড়াও প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এলাকার বিভিন্ন জায়গার ডোবা নালা ও নিচু জমিতে পানি জমে। আমার পরিবারের আমিসহ ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হই। সবশেষ আমি ঢাকা পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কুরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি।

পরিবার রেখে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। এক রোগী দেখে আরেকজনের কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।

সচেতনতার অভাব ও ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা বলে সচেতন নাগরিক কমিটির বরগুনা শাখার সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পর শহরের অর্ধেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ পানি আর অপরিকল্পিত ড্রেন শহরকে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত করেছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তির রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম।

হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, প্রতি ঘরেই ডেঙ্গু রোগী আছে। দিনকে দিন এটি মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। আমরা বর্তমানে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসা সেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ বলেন, হঠাৎ করে কেন বরগুনায় এত ডেঙ্গু আক্রান্ত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।

তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু বা এ ধরনের রোগের গবেষণামূলক কাজ করেন। তারা হয়তো এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারবেন। তবে শহরের পর্যাপ্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকা, রোগীদের অসচেতনতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী না চলার কারণেও অনেকটা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মশারি ব্যবহার করতে বললেও তারা গুরুত্ব দেন না। ফলে একজনের থেকে অন্যজনের রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বরগুনা ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রচুর ডাবের খোসা যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। যে কারণে বর্ষার মৌসুমে পানি জমে এডিস মশার জন্ম বৃদ্ধি পায়।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সভা করেছি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রেখেছে।

হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


প্রিন্ট