ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
মেহেরপুরে প্রায় দেড়শ বছর ধরে সুনাম কুড়িয়ে আসছে সাবিত্রী মিষ্টি। সাবিত্রীর সুনাম দেশ ছাড়িয়ে আন্তজার্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। খাঁটি দুধের নির্ভেজাল মিষ্টি সারাদেশের মানুষের কাছেই প্রিয়। ব্যতিক্রমী এই মিষ্টির ওপর এখনো আস্থাশীল এলাকার মানুষ। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় সাবিত্রী মিষ্টিকে মেহেরপুর জেলার গর্ব বলে মনে করেন স্থানীয়রা। ধরে রেখেছে তার ১৫০ বছরের ঐতিহ্য।
–
সাবিত্রী মেহেরপুর জেলাকে আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছে। তবে এই মিষ্টি পেতে হলে আগেই থেকেই দিকে হবে অর্ডার। তা না হলে মিষ্টি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। দেখতে অনেকটা চমচমের মতো। তবে আকার লম্বা ও চ্যাপটা। খেতে সুস্বাদু। এই মিষ্টির সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও জায়গা করে নিয়েছে। বিয়েবাড়ি কিংবা অতিথি আপ্যায়ন যেন সাবিত্রী ছাড়া বেমানান।
–
জানা যায়, মেহেরপুরে জমিদার আমল থেকেই এই মিষ্টির প্রচলন। শহরের বড়বাজারের বাসুদেব কুমারের সৃষ্টি এই মিষ্টি তখন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বিক্রি শুরু হয়। দ্রুতই জমিদারদের কাছে সুস্বাদু হয়ে ওঠে এই মিষ্টি। পরে ব্রিটিশ আমলে ইংরেজদের কাছে এই মিষ্টি প্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে সাবিত্রীর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বর্তমানে প্রবাসীরাও তাদের সহকর্মীদের উপহার হিসেবে দিচ্ছে মেহেরপুরের সাবিত্রী। প্রতি কেজি সাবিত্রী মিষ্টি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস বিক্রি হয় ২০ টাকায়।
–
দিনে প্রায় ২০ কেজি সাবিত্রী মিষ্টি বিক্রি করেন বাসুদেব গ্রান্ড অ্যান্ড সন্স। রফতানিকারক কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে মেহেরপুরের মিষ্টি বিদেশের মাটিতে আরো সুনাম বয়ে আনবে পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বেশ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিক্রেতারা।
–
কারিগররা জানান, গরুর খাঁটি দুধ জ্বালানোর জন্য কাঠ, পাত্র আর পরিমাণ মতো চিনি হচ্ছে সাবিত্রীর প্রধান উপকরণ।
–
বাসুদেব সাহার নাতি বিকাশ শাহা বলেন, কারিগরের অভাবে চাহিদামেতো মিষ্টি তৈরি ও সরবরাহ করতে পারি না। মিষ্টি তৈরির কারিগর বাসুদেব সাহা ভাবতেন কিভাবে মানুষকে শতভাগ খাঁটি মিষ্টি খাওয়ানো যায়। নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি সাবিত্রী মিষ্টি তৈরি করতে সক্ষম হন। এই যাত্রার প্রতিটি পদে পদে ছিল খাঁটি জিনিসের সমাহার। ফলে তার তৈরি মিষ্টিও খাঁটি হিসেবে মানুষের হৃদয় জয় করে। বাছাইকৃত গরুর দুধ জ্বালানোর জন্য তেঁতুল, নিম, বাবলা ও বেল জাতীয় ভারি কাঠের খড়ি ব্যবহার করা হয়। শুধুমাত্র দুধ আর চিনি দিয়েই তৈরি হয়। সনাতন ধর্মের সাবিত্রী শব্দ থেকেই সাবিত্রীর নামকরণ করা হয়। সাবিত্রী অর্থ হচ্ছে সত্যবান।
–
তিনি আরো জানান, দুধ চিনি আর কাঠের দর বৃদ্ধি অপরদিকে সময় মতো দুধের জোগান না পাওয়া মাঝে মাঝে সংকট তৈরি হয়। অপরদিকে বর্তমান কারিগর তিন ভাইয়ের কোনো ছেলেমেয়ে এই পেশায় আসেনি। তারা সবাই লেখাপাড়া নিয়ে ব্যস্ত। ফলে এই তিন ভাইয়ের মৃত্যুর পর সুস্বাদের সাবিত্রী আর রসকদম্ব আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বাপ-দাদার হাতের মিষ্টি তৈরির স্বত্ব তারা অন্য কাউকে দিতেও চান না।
–
মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম বলেন, মেহেরপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে গেলে সাবিত্রী মিষ্টির নাম চলে আসে। আমরা ছোট থেকেই এই মিষ্টির সঙ্গে পরিচিত। হাত বদল হলেও জৌলুস আর সুনাম এখনো ধরে রেখেছেন কারিগররা।
প্রিন্ট