আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার ঘনশ্যামপুরে খাল সংস্কারের কাজ চলছে। আর এই কাজে ঠিকাদারকে খুশি রাখতে ফের তুঘলকি কান্ড ঘটিয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ)প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাজিরুল ইসলাম। নওগাঁয় দেওয়া খাল সংস্কারের কাজ করা যায়নি বলে পিডি ওই ঠিকাদারকে দিয়ে রাজশাহীতে একই কাজ করাচ্ছেন। বিএমডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, নওগাঁয় কাজ করা সম্ভব না হলে সেই কার্যাদেশ স্থগিত বা বাতিল করতে হতো। তারপর রাজশাহীর কাজের দরপত্র আহ্বান করে কাজ দেওয়া উচিত ছিল। তা না করা অনিয়ম করা হয়েছে।
–
এদিকে একের পর এক অনিয়ম করেও পিডি নাজিরুল ইসলাম বহাল তবিওতে। তার বিরুদ্ধে কখানোই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।সংশ্লিষ্টরা নাজিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগের তদন্ত ও অস্থাবর-স্থাবর সম্পদের অনুসন্ধান দাবি করেছেন।স্থানীয়রা বলছে,ছোটখাটো চুরি হলে তাকে বলে চুরি, তার থেকে বড় হলে সিঁধেল চুরি, তার বড় হলে পুকুর চুরি, তার বড় হলে নদী চুরি ও তার বড় হলে সাগর চুরি।কিন্ত্ত যে চুরির কোনো সীমা পরিসীমা নাই তাকে কি বলা হবে ? দুঃখজনক হলেও সত্যি বিএমডিএ-এর বিভিন্ন প্রকল্পে একের পর এক এমন চুরির ঘটনা ঘটে আসছে।কিন্ত্ত কাউকে কখানো কোনো দৃশ্যমান শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি।
–
স্থানীয় সুত্র বলছে, ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি রহুল আমিন পেয়েছিলেন নওগাঁয় খাল পুনঃ খননের কাজ,তবে সেই কাজ শেষ হয়নি। কিন্ত্ত বিএনপি নেতাকে খুশি রাখতে কার্যাদেশ ছাড়াই নীতিমালা লঙ্ঘন ও অনিয়ম করে একই কাজ রাজশাহীতে দেয়া হয়েছে।
–
জানা গেছে, এমন অনিয়ম করেছেন ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প-২য় পর্যায়’-এর পিডি নাজিরুল ইসলাম। প্রায় ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় খাল খননের এই কাজ করছে আর আর এন্টারপ্রাইজ নামের ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সহসভাপতি।
–
এই ঠিকাদারি কাজের নথি থেকে জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি নওগাঁর মহাদেবপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় খাল সংস্কার এবং পাইপলাইন স্থাপনের কিছু কাজের দরপত্র আহ্বান করেন পিডি নাজিরুল ইসলাম। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মহাদেবপুর উপজেলার বুজরুককান্তিপুর খাড়ি সংস্কারের কাজ দেওয়া হয় আর আর এন্টারপ্রাইজকে। তবে এই প্রতিষ্ঠান কিছুদিন আগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঘনশ্যামপুর থেকে হঠাৎপাড়া পর্যন্ত একটি খাল সংস্কারের কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে প্রায় ৬০০ মিটার খাল খননের কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি ঘনশ্যামপুর ব্রিজের কাছে দুটি এক্সকাভেটরের মাধ্যমে মাটি খননের কাজ করতে দেখা যায়। সেখানে এক্সকাভেটরের দুই চালক ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
–
বিএমডিএ সূত্র জানায়, মহাদেবপুরে মাত্র ৭০০ মিটার খাল সংস্কারের কাজটি দেওয়া হয়েছিল ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়। সামান্য কাজটির জন্য অতিরিক্ত টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হলেও খালে পানি চলে আসায় কাজটি শেষ পর্যন্ত করা যায়নি। তাই একই ঠিকাদারকে নতুন দরপত্র আহ্বান ছাড়াই রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কাজ দেওয়া হয়েছে। গোদাগাড়ীর খালটি সংস্কার হবে ১ হাজার ৬০০ মিটার।
বিএমডিএর ওই সূত্র বলছে, ৭০০ মিটারের জন্যই ২২ লাখ টাকার কার্যাদেশ হলে এক হাজার ৬০০ মিটারের জন্য আরও বেশি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু ওই একই টাকায় এক হাজার ৬০০ মিটার খাল সংস্কারের কাজ দেওয়া হয়েছে। সূত্র বলছে, মহাদেবপুরের কাজের জন্য অতিরিক্ত টাকা ধরা হয়েছিল, সেটা বিবেচনায় নিয়ে রাজশাহীর এই কাজ নিয়মবহির্ভূতভাবে দেয়া হয়েছে।
–
এবিষয়ে জানতে চাইলে পিডি নাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘মহাদেবপুরের কাজের কার্যাদেশ দেওয়ার পর কাজ শুরুর আগেই খাঁড়িতে পানি চলে আসে। তাই সেখানে কাজ করা যায়নি। তাই ওই ঠিকাদারকে গোদাগাড়ীতে একটি কাজ দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো অনিয়ম নয়।’তবে বিএমডিএর অন্য একজন পিডি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘কার্যাদেশ দেওয়ার পরও কোনো কাজ করা সম্ভব না হলে সেটি বাতিল বা স্থগিত করতে হয়। কিন্তু ওই কাজের ঠিকাদারকে ‘সন্তুষ্ট রাখতে’ অন্য কোনো কাজ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি অবশ্যই অনিয়ম। কারণ, দুটি কাজের পরিমাপসহ অন্যান্য প্রাক্কলন কখনো এক হয় না।’
–
এমন অনিয়ম করে কীভাবে কাজ পেলেন জানতে চাইলে আর আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সহসভাপতি রুহুল আমিন গত রোববার দুপুরে বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারব না। এটা বিএমডিএকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়। আমাকে কাজ দিয়েছে, আমি করছি। কাজও শেষের দিকে। আর এক কিলোমিটারের মতো কাজ বাকি আছে।’এই অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, ‘বিষয়টা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ হলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে।
প্রিন্ট