বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের পদ্মা বেষ্টিত চরাঞ্চলে যাতায়াতে সরকার নির্ধারিত নৌকার ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে অভিযোগ। এক বছর মেয়াদী ১৪৩২ বাংলা সনের ইজারা শর্ত উপেক্ষা করেই ইঞ্জিন চালিত নৌঘাট গুলোতে চরবাসীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে চলেছে। নদী পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে আসা-যাওয়ার জন্য দুর্গম চরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
.
জেলার সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল, ডিক্রীরচর, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বহু জায়গা জুরে চর জেগে উঠেছে। পদ্মার বুকে জেগে উঠা চরে সেখানে এখন লাখো মানুষের বসবাস। এক সময়ের নদী গর্ভে বিলিন হওয়া স্থানে চর জেগে উঠায় সেই অঞ্চল গুলোতে আবার মানুষের বসবাস শুরু হয়েছে। অনেকটা সুবিধাবঞ্চিত জনপদে কৃষি কাজই তাদের প্রধান অবলম্বন। এছাড়াও নানা শ্রেনী পেশার মানুষ চরে বসবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছে। পাশাপাশি চরগুলোতে স্কুল, মাদ্রসা, হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে ওই জনপদে। কিন্তু শহরের সাথে তাদের যোগাযোগের জন্য পাড়ি দিতে হয় পদ্মা নদীর বেশ কিছু শাখা দিয়ে নৌকা বা ট্রলারে করে চলাচল করতে হয় তাদের।
.
এবছরও সদর উপজেলার তত্বাবধানে ধলার মোড়, টেপুরাকান্দি ও ভাজনডাঙ্গা এই তিনটি খেয়াঘাট বা ইঞ্জিন চালিত নৌঘাট গুলো সর্র্বচ্চ দরদাতাদের মাঝে ইজারা দেয়া হয়।
.
টেপাখোলা ধলার মোড় নতুন বেড়ীবাঁধ ইঞ্জিন চালিত নৌঘাট থেকে পালডাঙ্গী, বেপারী ডাঙ্গী, গেন্দুমোল্যার হাট হয়ে মুনছুরাবাদ ও নর্থচ্যানেল-২ আদর্শ গ্রাম পর্যন্ত এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে। পাশাপাশি একই এলাকার সিএন্ডবি নৌবন্দর সংলগ্ন টেপুরাকান্দি ঘাট থেকে কবিরপুর চর পর্র্যন্ত ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বা ট্রলারে করে ডিক্রীরচর ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের মানুষ নদী পথে যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া ভাজনডাঙ্গা ভুইয়াবাড়ী ঘাট দিয়ে গদাধর ডাঙ্গী সাইনবোর্র্ড সহ আশে পাশের চরে নদী পারি দিয়ে যাতায়াত করে। এই নদী পথে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও বিভিন্ন পন্যসামগ্রীসহ গবাদীপশু পারাপার হয়। কিন্তু সরকারি নির্ধারিত ইজারা টোল চার্টের বাইরে ইচ্ছে মত ভাড়া আদায় করছে ট্রলার মালিক ও মাঝিমাল্লারা।
.
কবিরপুর চরের বাসিন্দা পলাশ খানসহ একাধিক যাত্রীদের অভিযোগ ধলার মোড় ও টেপুরাকান্দি ঘাট থেকে সরকার নির্ধারিত নদী পথে যাতায়াতের জন্য জন প্রতি(প্রাপ্ত বয়স্ক) ৩০ টাকা, গরু ৫০ টাকা, ছাগল ১০ টাকা, অন্যান্য মালামাল মত প্রতি ২ টাকা ধার্য থাকলেও মানুষ ভেদে ৪০-৫০ টাকা, গরু ২০০-৪০০ টাকা, ছাগল ৫০-১০০ টাকা ও মালামালের জন্য ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এমন নানা অভিযোগ জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় দিলেও ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে না বলেও জানান এই পথের যাত্রীরা।
টেপুরাকান্দি ঘাটের সরদার ও মাঝি আব্দুস সামাদ মোল্যা জানান, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্র্যন্ত ১০টি ট্রলার চলাচল করে। দিনে একটি ট্রলার শুধু একবার আসা-যাওয়া করে। তিনি আরো বলেন,টেপুরাকান্দি ঘাট বাবদ ৫৫ লাখ টাকা দিছি, তেল খরচ, মাঝির বেতন দিয়ে ৩০ টাকা করে নিলে আমাগো কিছুই থাকবে না। আর ঘাট যদি কম টাকায় পাইতাম তাহলে আমরাও কম নিতাম, চরের মানুষের কাছ থেকেও কম নিতে পারতাম। কিন্তু তাতো আর সম্ভব না, তাইলে তো আমরা বাচুম না।
.
এছাড়া ধলার মোড় ঘাট থেকে ২২টি ট্রলার দুই ধাপে ভাগ হয়ে একদিন পর পর ট্রলারের টিপ পাই বলে জানান ট্রলার মালিক জাবলু পাটনীদার। ঘাট নিতে তাদের ৩২ লাখ টাকার বেশি পড়ে গেছে। সব ট্রলার মালিকরা এই টাকা ভাগ করে এককালিন দিয়ে দিছি। জনপ্রতি ৪০ টাকা করে নেয়, গরু ৩-৪শ টাকা, মোটরসাইকেল পারাপার ১শ টাকা, আর বাচ্চাদের ও ছাত্র, শিক্ষকদের ভাড়া নেয় না। নদী পাড়ি দিয়ে চরে পৌছাতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। কিন্তু সরকারি যে ভাড়ার রেট তাতে তো পোশাবে না।
.
এদিকে ঘাট ইজারা পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ৮ বাই ৬ ফিট টিনের বোর্ডে সরকার অনুমোদিত ভাড়ার চার্ট টাঙানোর শর্ত থাকলেও একমাসে কোন ঘাটে সেগুলোর দেখা মেলেনি। এছাড়াও ঘাটে কোন প্রকার যাত্রী ছাউনি, পয়নিস্কাশনের ব্যবস্থা, সুপেয় পানি না থাকায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধরা পরে চরম ভোগান্তিতে। অসুস্থ রোগীসহ অনেকেই বাধ্য হয়ে দুর্ভোগ নিয়ে চর থেকে শহরে যাতায়াত করে থাকে। নদী পথে পারাপারে যাত্রী সেবা বৃদ্ধির দাবী তাদের।
.
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মো: হায়দার খান জানান, চর গুলোতে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। চরাঞ্চলে পন্যপরিবহণসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র উপায় ট্রলার। পাল্লা দিয়ে বেশি টাকায় খেয়াঘাটের ডাক নেওয়ায় নৌকার মালিক ও মাঝিরা বিপাকে পরে যায়। তবে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পদক্ষেপ থাকলেও খুব একটা কাজে না আসার অভিযোগ স্থানীয়দের।
.
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, চরে যাতায়াতের জন্য খেয়াঘাট ইজারায় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টোল বা ভাড়ার চার্ট টাঙানো, যাত্রী সেবা বৃদ্ধিসহ ঘাটের অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। চরের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। নদী পারাপারে যারাই ইজারা শর্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট