অসহায় ও হতদরিদ্র কাকলি ও কোহিলিকে জন্মদিয়ে মা-বাবা দুইজনই বাড়ি ছাড়া। আজ ও অবদী তারা ফিরে আসেনি। দাদা-মসিদুল হক ও দাদী মর্জিনা বেগমের আদর ভালোবাসায় তিন নাতনিকে বড় করে তোলেন মর্জিনা। দেখতে সুন্দরী বড় নাতনি কাজলীর আগেই বিয়ে হয়ে যায়।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চরবাড়াদি, চাঁদগ্রামে কোন রকম একটি ঝুঁপটি ঘরে দুই নাতনী কাকলি ও কোহিলীকে নিয়ে দাদী বসবাস করে আসছিলেন। সকাল হলেই দাদা-দাদী জীবন-জীবিকার যুদ্ধে নানা জায়গায় ছুটে চলেন। কাকলি ও কুহিলি এখন বড় হয়েছে। তাদের কথা ভাবতে ভাবতে গরীব অসহায় দাদা-দাদীর নানান চিন্তায় রাতে তাদের চোখে ঘুম আসে না। এলাকার ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের কোন রকম সাহয্য সহোযোগিতা তেমন পায়না। অবহেলিত ভাবে চলতে থাকে তাদের দুঃখের সংসার ।
এমন কষ্টদায়ক জীবন-যাপনের কথা জানতে পারেন ভেড়ামারার উপজেলার একটি সেবামুলক সংগঠন ”আমরাও পারি” সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, সমাজসেবক ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান লন্ডু মাষ্টার। পরে তিনি সভাপতি ফয়জুল হাসান রবি, অর্থ সম্পাদক রুহুল আমীন মিঠু ও সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম শিপন মিস্ত্রী সহ উক্ত গ্রামে গিয়ে নতুন করে নানা খোঁজখবর নেয় এবং তারা সিদ্ধান্ত নেন তাদের পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার। এমন মহতি কাজ দ্রুত গতিতে চলতে থাকে। মাস দুইকের মধ্যেই নির্মান করা হয় উপহার দেওয়া বাড়ি।
স্বল্প সময়ের মধ্যে দায়বদ্ধতা ”আমরাও পারি” সেবামুলক এই সংগঠনটি প্রায় সোয়া দুই লাখ টাকা ব্যয় করে দুইরুম বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর, বাথরুম, টিউবয়েল ও একটি রান্নাঘর সহ নানা আসবার পত্র নির্মান করে দেন ঐ পরিবারদ্বয়কে।
শনিবার ৩০জুলাই সকালে ঘরের চাবি আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করেন। ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠান সভায় সভাপতিত্ব করেন ”আমরাও পারি” সংগঠনের সভাপতি ফয়জুল হাসান রবি। ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহি অফিসার দীনেশ সরকার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা দৌলতপুর সার্কেল) ইয়াছির আরাফাত, চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন, সহ সাংবাদিক ”আমরাও পারি” সংগঠনের সদস্য ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন,”আমরাও পারি” সংগঠনের সাধারন সম্পাদক খালেকুজ্জামান লন্ড মাষ্টার। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ১২ আগস্ট ২০১৯ সালে উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের জগশ্বর গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় মোছাঃ জহুরা খাতুন ও ২০ জুন ২০২০ ধরমপুর ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া গ্রামের হতদরিদ্র অসহায় মোছাঃ রশিদা খাতুনের পাশে দাড়িয়ে তাদেরকে ঘর উপহার দেন মহতি সেবামুলক এই সংগঠন ”আমরাও পারি” ।
এবারও এই মহতি সংগঠনটি (আমরাও পারি) কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চরবাড়াদি গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র দুই বোন কাকলি ও কোহিলী্র পাশে দাড়িয়েছেন সহযোগীতার ঝুড়ি নিয়ে। এবার কাকলি ও কোহিলীকে তাদেরকে ঘর উপহার দেয় হয়েছে বলে জানান সভাপতি ফয়জুল হাসান রবি, অর্থ সম্পাদক রুহুল আমীন মিঠু ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম শিপন মিস্ত্রী বলেন, আমাদের এই সংগঠনের নিয়ম অনুষায়ি প্রতি বছর আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে উপজেলার ইউনিয়নগুলিতে একটি করে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করে গরীবদের ঘর উপহার দিয়ে থাকি। ”আমরাও পারি” এই সংগঠনের কার্যক্রম আব্যহত থাকবে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহি অফিসার দীনেশ সরকার বলেন ”আমরাও পারি” সংগঠন একটি সামাজিক ও সেবামুলক প্রতিষ্ঠান। এরা সব সময়ের জন্য গরীব দুঃখীর পাশে দাঁড়ায়। নিজেরাই নগদ অর্থ দিয়ে ঘর নির্মান করে দেন। এমন ভালো কাজ কয়জন করেন! এই সংগঠন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিঃসন্দেহে ভালো কাজ; আগামীতে আমি ও সহযোগিতার হাত বাড়াবো।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন বলেন,”আমরাও পারি” সংগঠনের কাজকর্ম দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমার ইউনিয়নে তারা একটি অসহায় মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়ে এইটি মহতী কাজ করেছেন তারা। আগামীতে আমি আপনাদের সঙ্গে থেকে একটা বাড়ি আমি আমার নিজ খরচে তৈরি করে দেব।
সুবিধাভোগী কাকলি ও কোহিলি খাতুন উপহার ঘর পেয়ে আনান্দে কেঁদে ফেললেন। কাকলি খাতুন হাস্যোজ্জ্বল মুখে নোনা পানি চোখে বলেন, আমরা দুই বোন দুটি ঘর উপহার পেয়ে মস্তবড় খুশি হয়েছি। কারণ আমাদের কোন নিজস্ব ঘর ছিল না। আমরা দাদীর কাছে কষ্ট করে থাকতাম। আজ সেই কষ্টদুর হলো তাই আমি আনান্দে কান্দছি। আজ থেকে আমার ঘর হলো, নিজ স্বাধীনতা ফিরে পেলাম। ”আমরা ও পারি” সংগঠন অসহায় ও হতদরিদ্রর জন্য ঘর নির্মান করে দেয় এই জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সকলের প্রতি দোয়া এবং সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
প্রিন্ট