ভেড়ামারা পদ্মা নদীতে প্রতিদিন হুহু করে বাড়ছে পানি। আজ ৩০ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৫টায় পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার। গত ২৯জুলাই পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। গত ২৮জুলাই পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার। ২৪ঘন্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার করে। বর্তমান পদ্মা নদীর বিপৎসীমার ২শ’৪ সেন্টিমিটার নিচদিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পদ্মাপানির তীরঘেষে জমির নানা মৌসুমী ফসল দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে।
ভেড়ামারা উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বীজতলা, সবজিবাগান, পাট,বাদাম,আখ ও তিলক্ষেত এবং কলার বাগান,আখক্ষেত।
পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উত্তরাঞ্চল পানি পরিমাপক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, ৩০জুলাই বিকেল ৫টার সময় মোবাইল ফোনে জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার। গত ২৯জুলাই পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। গত ২৮জুলাই পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার। ২৪ঘন্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ৪/৫ সেন্টিমিটার করে।
তিনি আরো জানান,২৬জুলাই সোমবার বিকেল ৫টায় পাকশীর পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পরিমাপ করে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৮ লাখ ২শ’৯৯ কিউসেক। পানির এই বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বলে জানান তিনি। গত বছর ৫ জুলাই/২০ পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার। পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ঐ সময় ৫ লাখ ৬১ হাজার ৭শ’ কিউসেক। গত বারের তুলনায় এবার পদ্মায় দ্রুতগতিতে পানি আসছে।যার ফলে পানির ফ্লোমাত্রা অনেক বেশী।
এ বছর এই সময়ে পদ্মার পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে বর্ষার আগেই বিপৎসীমার কাছাকাছি গিয়ে ঠেকতে পাাে বলে ধারোনা করা হচ্ছে। এদিকে পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মার কিনারায় চরএলাকার অসংখ্য কৃষকের আবাদ করা ফসল এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে।
হাইড্রোলজি বিভাগের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, উজানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে এ বছর বর্ষার আগেই পদ্মা নদীতে পানি দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করছে।
তবে পানি বৃদ্ধি পেলেও এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীতে ১৪ দশমিক ২৫ মিটার বিপৎসীমা, বর্তমার ২শ’৮সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এখন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর আগাম পানি বৃদ্ধির ফলে, আগাম বন্যার আশঙ্কা রয়েছে কিচ্ছুটা।
পদ্মা তীরবর্তী গোলাপ নগর এলাকার নৌকার মাঝি হাসমত আলী বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে, নৌকা চালানো অনেক সহজ হয়েছে ।
এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে, নদী ফিরতে শুরু করেছে তার আপন শোভায়, পানি বাড়ার সাথে সাথে ফুটে উঠছে নদীর সৌন্দর্য। নদীর সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই নদী তীরে ঘুরতে আসছেন। প্রতিদিন বিকেলে পদ্মা পাড়ে ভীড় জমাচ্ছে মানুষ।
কৃষক আমিনুর ইসলাম জানান, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিতে এমনিতেই মাঠের শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ওপর পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শত শত কৃষক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ঈশ্বরদীর সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পাট,আখ, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শায়খুল ইসলামের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর নদী দ্রুত পানি আসছে। পদ্মার চরাঞ্চলে বিভিন্ন ফসলের আবাদকৃত প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে। নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে বাহাদুরপুর, আড়কান্দি, ইসলামপুর, গোলাপ নগর, মসলেমপুর ও বার মাইল চরাঞ্চলের বিস্তৃীর্ণ এলাকার আবাদি ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
চর গোলাপ নগর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, চরে আমার ৩ বিঘা জমির ফসল পুরোটাই এখন পানিতে থৈথৈ করছে।
কৃষক হেলাল উদ্দীন জানান, এ বছর তেমন বন্যা না হওয়ায় চরের ৫ বিঘা জমিতে আগাম মাষকলাই চাষ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু পদ্মার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ফসল তলিয়ে গেছে।
প্রিন্ট