মোঃ আরিফুল মিয়াঃ
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের হয়রানি ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য রোধে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও মধুখালী থানা পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু চক্র এই সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রোগীদের ঠকিয়ে আসছিল, যা থেকে মুক্তি দিতে প্রশাসনের এই উদ্যোগ।
.
সোমবার (১২ মে) সকাল ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মামুন হাসান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কবির সরদার এবং মধুখালী থানার পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে হাসপাতাল চত্বর, বহির্বিভাগ ও আশপাশের এলাকাগুলোতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে কিছু ব্যক্তিকে সর্তক করা হয়।
.
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মামুন হাসান জানান, “দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালের বাইরে ও ভেতরে কিছু দালাল চক্র রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে বেসরকারি ক্লিনিক বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে আসছিল। এর ফলে রোগীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন, তেমনি সরকারি সেবা থেকেও বঞ্চিত হতেন। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতেই আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।”
.
তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু রাসেল দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং মধুখালী থানা পুলিশকে নিয়মিত অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন। এরপর থেকেই সপ্তাহে একাধিকবার পুলিশ সদস্যরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত থাকেন এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন।
.
মধুখালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “আমরা প্রতিদিনই চেষ্টা করি হাসপাতালে কোনো প্রকার দালাল বা প্রতারক যেন রোগীদের হয়রানি করতে না পারে। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানে সবারই সমানভাবে সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে, যাতে করে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে এবং নিশ্চিতভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন।”
.
এদিকে স্থানীয়রা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করেন, এ ধরনের দালালবিরোধী অভিযান একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে, অন্যদিকে সাধারণ রোগীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
মধুখালী উপজেলার বাসিন্দা হাসান মোল্যা নামের এক রোগী বলেন, “আগে হাসপাতালে এলেই কেউ না কেউ টেনে নিয়ে যেত বাইরের ক্লিনিকে। এখন সেটা অনেক কমে গেছে। পুলিশ থাকায় কেউ সাহস পাচ্ছে না।”
.
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও দালালমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
.
উল্লেখ্য, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ফরিদপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এখানে শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। দালালদের দৌরাত্ম্যে এদের অনেকেই অতীতে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে পুলিশের নিয়মিত অভিযান ও প্রশাসনের তৎপরতায় বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে।
প্রিন্ট