আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম কার্যালয়ের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেপথ্যে মদদে (সেচ কমিটির অনুমোদন ব্যতিত) আবাসিক সংযোগ থেকে অবৈধ মটরে চলছে জম্পেশ সেচ বাণিজ্যে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে এসব মটরে নির্বিচারে পানি উত্তোলন করায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ও একই সঙ্গে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প হুমকির মূখে পড়েছে। সেচ নীতিমালা অনুযায়ী বিএমডিএর গভীর নলকুপ ও অনুমোদিত সেচ মটর ব্যতিত আবাসিক বা শিল্প সংযোগ থেকে সেচ দেয়ার কোনো সুযোগ নাই।
.
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) কামারগাঁ বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আজাহার আলী। তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন করে তার বাড়ির আবাসিক সংযোগ থেকে, প্রায় আধা কিলোমিটার দুরের মাঠে অবৈধ মটরে সংযোগ দিয়ে সেচ বানিজ্যে করছেন। সেচ নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেচ বাণিজ্যের অপরাধে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার কথা। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ অজ্ঞাত কারণে তার সংযোগ তো বিচ্ছিন্ন করেনি, উল্টো অর্থের বিনিময়ে সংযোগের লোড বৃদ্ধি করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।যে কারণে পল্লী বিদ্যুৎ বিষয়টি দেখেও না দেখার অভিনয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে।কৃষকদের অভিযোগ, আজাহারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা না হলেও তারাও মটর বসাবে ও সেচ বাণিজ্যে করবে।এমনটা হলে সেচ বানিজ্যে নিয়ে যেকোনো সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, একটি গভীর নলকুপ ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করে তার প্রায় ৮০ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার ও ২০ ভাগ অপচয় হয়। অথচ একটি মটরে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন হয় তার মাত্র ৪০ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার ও প্রায় ৬০ ভাগ অপচয় হয়। ফলে অবৈধ মটরে উত্তোলন করা পানির বিপুল পরিমাণ অপচয় হওয়ায় গভীর নলকুপগুলো ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ফেল করছে। প্রচন্ড খরাপ্রবণ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে ভূ-গর্ভের পানির স্তর তলানিতে ঠেকেছে। এসব এলাকার হাজারও হস্তচালিত নলকূপ এক দশক আগেই অচল হয়েছে। অব্যাহত পানি সংকট মোকাবিলা ও ভূ-গর্ভের পানির স্তর রক্ষায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।
.
এদিকে ভু-গর্ভের পানির স্তর ধরে রাখতে, সেচ নির্ভর বোরো চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত ও কম সেচ লাগে এমন ফসলের চাষাবাদ করাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ তানোরে পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে আবাসিক, মৎস্য ও শিল্প অবৈধ মটরের নামে সংযোগ নিয়ে নির্বিচারে সেচ বাণিজ্যে করে ভু-গর্ভ স্তরের পানি অপচয় করা হচ্ছে।
.
বিএমডিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, তানোরে অবৈধ মটর দিয়ে যেভাবে নির্বিচারে ভূ-গর্ভস্থ স্তরের পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে এটা বন্ধ করা না গেলে,আগামি দেড়-দুশক পর এলাকার মানুষ খাবার পানির ভয়াবহ সংকটে পড়বে। একই সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়, জীববৈচিত্র এবং প্রাণীকুল হুমকির মুখে পড়বে।
.
এবিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ তানোর জোনের ডিজিএম রেজাউল করিম খাঁন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এলাকায় মাইকিং ও বিলের উপর সিল মেরে দিচ্ছেন সেচ না দেয়ার জন্য। কিন্ত্ত তারা চুরিচামারি করে সেচ দিচ্ছেন। এবিষয়ে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের কারনেই অবৈধ মটর স্থাপন বন্ধ করা যাচ্ছে না।
প্রিন্ট