আনসার আহমেদ উল্লাহঃ
যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার বেদীতে ফুলের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ মাধ্যমে আলতাব আলী দিবস পালিত হয়েছে । গত রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাঙালি যুবক আলতাব আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানটি হয়।
.
শহীদ মিনারে পাশে এডলার স্টিটে ১৯৭৮ সালে বর্ণবাদী হামলায় নিহত বাঙালি যুবক আলতাব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেবিনেট মেম্বার আব্দুল ওয়াহিদ, কেবিনেট মেম্বার কামরুল হোসেন, কেবিনেট মেম্বার সাবেক স্পিকার শাফি আহমেদ ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে প্রেস মিনিস্ট্রার আকবর হুসেন। অন্যান্যের মধ্যে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন আলতাব আলী মেমরিয়াল ট্রাস্ট ও আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
.
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আলতাব আলীর স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত স্বরণসভা পরিচালনা করেন কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না।
.
এতে আলতাব আলী স্বরণে বক্তব্য রাখেন কেবিনেট মেম্বার আব্দুল ওয়াহিদ, কেবিনেট মেম্বার শাফি আহমেদ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি প্রেস মিনিস্ট্রার আকবর হুসেন, আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের আশরাফ মাহমুদ নেসওয়ার, আলতাব আলী মেমরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষে হামিদা ইদ্রীস, জুয়িশ সোসালিষ্ট গ্রুপের ডেভিড রোসেনবার্গ ও স্ট্যান্ড উপ টু রেসিজম এর শিলা ম্যাকগ্রেগর সহ আরো অনেকে।
.
পরে সন্ধ্যায়, স্থানীয় ব্রাডি সেন্টারে ‘নিজোর মানুষ’ কর্তৃক পরিচালিত “প্রোটেস্ট অ্যাক্রস দ্য জেনারেশনস” শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সালওয়া রহমানের উপস্থাপনা এবং ড. ফাতেমা রোজিনার সঞ্চালনায়, আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লাহ; বাংলাদেশী-ব্রিটিশ শিল্পী তাসনিম আমিন সিদ্দিকা এবং বাংলাদেশ ইয়ুথ মোভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা রাজন উদ্দিন জালালের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় ব্রিটিশ বাঙালি এবং বৃহত্তর বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে প্রতিবাদের বিবর্তন, ঐতিহাসিক মাইলফলক এবং বর্তমান সময়ের প্রতিবাদের কার্যকারিতা অন্বেষণ করেন।
.
উল্লেখ্য আলতাব আলী, পেশায় তিনি একজন বস্ত্র শ্রমিক, ১৯৭৮ সালের ৪ঠা মে বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা অণুমানিক ৭.৩০ মিনিট কাজ শেষে হানবারি স্টিট থেকে ওয়াপিং বাসস্থানে ফেরার পথে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে বর্ণবাদীদের হাতে খুন হন। তার মৃত্যুর পর লন্ডনের বাঙালি সম্প্রদায় বর্ণবাদবিরোধী প্রতিবাদে নামেন। প্রশাসনের তরফে আলতাব আলীর তিন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারের পরে আদালত ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে এদের একজনকে ছুরিকাঘাতের জন্যে সাত বছরের জেল এবং বাকি দুইজনকে সাহায্য করার জন্যে তিন বছর করে জেল দেয়।
.
এরপর থেকে ১৯৯৮ সালে আলতাব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পূর্বলন্ডনের এডলার স্টিটের পাশে সেন্টমেরী পার্ক যেখানে আলতাব আলীকে খুন করা হয়েছিল, সেই পার্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে আলতাব আলী পার্ক হিসেবে নামান্তর করা হয়। আলতাব আলীর বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগন্জ জেলার ছাতক উপজেলায়।
প্রিন্ট